নরসিংদীতে নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা: বাড়ি-ঘর ভাঙচুর-লুটপাট, আহত ৪

নরসিংদীতে নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা: বাড়ি-ঘর ভাঙচুর-লুটপাট, আহত ৪

চট্টগ্রামের পাহাড়তলী কলেজ কেন্দ্রে ভোট গ্রহণকালে প্রকাশ্যে গুলিবর্ষণকারী শামীম আজাদ ওরফে ব্লেড শামীমকে বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্রসহ গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৭। সে স্বতন্ত্র (ফুলকপি) প্রার্থীর ভাড়াটে সন্ত্রাসী ছিল।

মঙ্গলবার (০৯ জানুয়ারি) দুপুর ১২টার দিকে র‌্যাব-৭ এর চান্দগাঁও ক্যাম্পে অনুষ্ঠিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে এসব কথা বলেন র‍্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

শামীম আজাদ ওরফে ব্লেড শামীম চট্টগ্রামের মিরসরাই থানার সায়েরখালী এলাকার আবুল কালাম আজাদের ছেলে। সে এলাকায় মুন্না নামেও।

গুলিবর্ষণের ঘটনায় যে দু’জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন, তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে হত্যা চেষ্টার মামলা দায়ের করা হয়েছে। যেখানে এই ব্লেড শামীমকে প্রধান আসামি করে আরও ছয়জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, প্রকাশ্যে গুলি করা সেই ব্লেড শামীম ছিল স্বতন্ত্র (ফুলকপি) প্রার্থীর ভাড়াটে সন্ত্রাসী। আমরা তদন্ত করে বের করার চেষ্টা করছি, সে কার হয়ে এসব করতো। প্রতিবেদন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

নরসিংদীতে নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা: বাড়ি-ঘর ভাঙচুর-লুটপাট, আহত ৪

তিনি বলেন, ‘গত ০৭ জানুয়ারি আনুমানিক সকাল সাড়ে ১০টার দিকে চট্টগ্রাম-১০ আসনের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম বন্দরনগরীর পাহাড়তলী ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্র এলাকায় কতিপয় দুষ্কৃতকারী সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনী পরিবেশ বিঘ্ন ঘটানোর উদ্দেশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র প্রদর্শন করে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির লক্ষ্যে সহিংসতা ও গুলিবর্ষণ করে। সহিংসতা ও গুলিবর্ষণের ঘটনায় ভোটারসহ শাস্ত বড়ুয়া এবং জামাল নামক দুজন ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হয়। পরবর্তীতে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। উক্ত ঘটনায় চট্টগ্রাম মহানগরীর খুলশী থানায় একটি মামলা দায়ের হয়। ঘটনাটি বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় গুরুত্বের সাথে প্রচারিত হলে দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচিত হয়। ওই ঘটনার সাথে জড়িতদেরকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে র‍্যাব গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।’


’এরই ধারাবাহিকতায় গত রাতে র‍্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-৭ এর যৌথ অভিযানিক দল চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুন্ড থানাধীন কুমিরা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন চলাকালে চট্টগ্রামের খুলশী এলাকায় প্রকাশ্যে বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র হাতে গুলি করে হতাহত করার ঘটনায় গুলি বর্ষণকারী ব্লেড শামীমকে ১টি বিদেশি পিস্তল ও ২ রাউন্ড গুলিসহ গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিকভাবে গ্রেফতারকৃত আসামি উক্ত ঘটনার বিষয়ে তথ্য প্রদান করে।’

খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃত শামীম আজাদ চট্টগ্রামের মিরসরাই এর স্থায়ী বাসিন্দা এবং বর্তমানে চট্টগ্রাম মহানগরীর খুলশী এলাকায় বসবাস করে আসছে। দীর্ঘদিন যাবত খুলশী ও তার পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকায় তার সহযোগীদের নিয়ে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী ও এলাকায় আধিপত্য বিস্তারসহ ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী হিসেবে বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের সাথে জড়িত ছিল।

‘গত ০৭ জানুয়ারি চট্টগ্রাম-১০ আসন, পাহাড়তলী ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্র এলাকায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে জনসাধারণের স্বতঃস্ফূর্ত ভোটাধিকার প্রয়োগ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনী পরিবেশ দেখে গ্রেফতারকৃত শামীম আজাদের নেতৃত্বে কতিপয় দুষ্কৃতকারী দেশী ও বিদেশি অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সহিংসতার ও নাশকতা সৃষ্টির মাধ্যমে নির্বাচনী পরিবেশ বিঘ্ন ঘটানোর উদ্দেশ্যে প্রকাশ্যে গুলিবর্ষণ করে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা করে।’

‘এক পর্যায়ে গ্রেফতারকৃত শামীম আজাদ একটি বিদেশি পিস্তল দিয়ে প্রকাশ্যে এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করে। উক্ত গুলিবর্ষণের ঘটনায় ভোটার শান্ত বড়ুয়া এবং জামাল নামক দুজন ব্যক্তি গুরুতর আহত হয়। গ্রেফতারকৃত শামীম ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী হিসেবে পেশিশক্তি প্রদর্শন ও অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ভোটারদের ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে নিরাপদ ও নির্বিঘ্নে ভোটাধিকারে বাধাদান করতে এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করছিল। পরবর্তীতে ঘটনাস্থলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করলে সে কৌশলে ঘটনাস্থল থেকে পলায়ন করে এবং চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড এলাকায় আত্মগোপন করে পরবর্তীতে র‍্যাব কর্তৃক গ্রেফতার হয়।’

খন্দকার আল মঈন বলেন, ’গ্রেফতারকৃত শামীম আজাদ চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্পন্ন করে। সে চট্টগ্রামের খুলশী ও পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকায় চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, আধিপত্য বিস্তারসহ বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের সাথে জড়িত রয়েছে বলে জানা যায়। তার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের বিভিন্ন থানায় অস্ত্রসহ বিভিন্ন অপরাধ সংক্রান্ত ০৫টির অধিক মামলা রয়েছে এবং এ সকল মামলায় ৩ বার কারাভোগ করেছে বলে জানা যায়। গ্রেফতারকৃত আসামির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।’

Scroll to Top