পাকিস্তানি অভিনেত্রী ও মডেল হুমাইরা আসগর আলি করাচির ডিফেন্স হাউজিং অথরিটি (ডিএইচএ)-এর নিজ ফ্ল্যাটে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার (৮ জুলাই) পুলিশ তার গলিত মরদেহ উদ্ধার করে, যা দেখে কর্তৃপক্ষ ধারণা করছে তিনি প্রায় দুই সপ্তাহ আগে মারা গেছেন।
কীভাবে উদ্ধার হলো মরদেহ?
পুলিশ জানায়, ২০২৪ সাল থেকে ফ্ল্যাটের ভাড়া না দেওয়ায় মালিক আদালতের শরণাপন্ন হন। আদালতের আদেশে গিজরি থানার পুলিশ মঙ্গলবার বিকেল ৩টা ১৫ মিনিটের দিকে উচ্ছেদে যায়। বারবার কড়া নাড়ার পরও সাড়া না পেয়ে পুলিশ তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। সেখানে ফ্লোরে হুমাইরার মরদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। ফরেনসিক দলকে ডেকে আনা হয় এবং মরদেহ জিন্নাহ পোস্টগ্র্যাজুয়েট মেডিকেল সেন্টারে পাঠানো হয় ময়নাতদন্তের জন্য।
পুলিশ কী বলছে?
দক্ষিণ জোনের এসএসপি মেহজুর আলী জানান, প্রাথমিকভাবে হত্যার কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। অ্যাপার্টমেন্টের লোহার গেট, কাঠের দরজা ও বারান্দা ভেতর থেকে বন্ধ ছিল।
মৃত্যুর কারণ কী?
ময়নাতদন্ত রাতে সম্পন্ন হয়, তবে পুলিশ সার্জন ডা. সুমাইয়া সৈয়দ জানান, মরদেহের অবস্থা ছিল চরম পচনধর্মী। মৃত্যুর চূড়ান্ত কারণ নির্ধারণ তাই এখনই জানা সম্ভব নয়। ফরেনসিক রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না।
প্রতিবেশীরা কী বলেন?
স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন ধরেই বাসায় কোনো আনাগোনা ছিল না, এবং দুর্গন্ধ বের হচ্ছিল। কয়েকজন প্রতিবেশী মঙ্গলবার ভোররাতেই পুলিশকে বিষয়টি জানান, তবে বিকেলে পুলিশ ফ্ল্যাটে প্রবেশ করে।
হুমাইরা আসগর আলি কে ছিলেন?
হুমাইরার জন্ম ১০ অক্টোবর ১৯৯২ সালে, লাহোরে। ন্যাশনাল কলেজ অব আর্টস থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর এবং পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.ফিল সম্পন্ন করেছেন তিনি। থিয়েটার, চিত্রকলা এবং গ্রাফিক ডিজাইন- এই তিনটি ক্ষেত্রেই প্রশিক্ষিত ছিলেন হুমাইরা। তিনি মডেলিং ক্যারিয়ার শুরু করেন ২০১৩ সালে। অংশ নিয়েছেন ব্রাইডাল কউচার উইক ও ফ্যাশন পাকিস্তান উইক-এ। ভিট মিস সুপার মডেল ২০১৪-তে ছিলেন ফাইনালিস্ট।
২০০২ সাল থেকে ১১০টিরও বেশি মঞ্চনাটকে অভিনয় করেছেন (আজোকার থিয়েটার, রফি পিয়ার থিয়েটারসহ) হুমাইরা। টেলিভিশন নাটকের মধ্যে তার অভিনীত জনপ্রিয় নাটকগুলো হলো লাালি, সিরাত-ই-মুস্তাকিম, বেনাম, চল দিল মেরে। কাজ করেছেন সিনেমাতেও। জালাইবি (২০১৫) এবং লাভ ভ্যাকসিন (২০২১)-এ তার উপস্থিতি প্রশংসিত হয়েছে।
হুমাইরা আসগর আলির মৃত্যু পাকিস্তানের বিনোদন জগতে শোকের ছায়া ফেলেছে। দীর্ঘ থিয়েটার, টিভি ও ফ্যাশন ক্যারিয়ারে তিনি ছিলেন একজন সংগ্রামী শিল্পী—যার জীবন, হয়তো নিঃসঙ্গতাতেই নিভে গেল। –ইকোনোমিক টাইমস