২০২০ থেকে জুলাই ২০২৫ পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৭ হাজারের বেশি নিহত

২০২০ থেকে জুলাই ২০২৫ পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৭ হাজারের বেশি নিহত

২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের জুলাই পর্যন্ত সারাদেশে ৩৪ হাজার ৮৯৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় মোট ৩৭ হাজার ৩৮২ জন নিহত এবং ৫৯ হাজার ৫৯৭ জন আহত হয়েছেন।

২০২০ থেকে জুলাই ২০২৫ পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৭ হাজারের বেশি নিহত২০২০ থেকে জুলাই ২০২৫ পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৭ হাজারের বেশি নিহত

রবিবার (১০ আগস্ট) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘সড়ক পরিবহন ব্যবস্থাপনা সংস্কারে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের রূপরেখা: সরকারের কাছে প্রত্যাশা’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়। এসব তথ্য তুলে ধরেন সংগঠনের ভাইস চেয়ারম্যান ও গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ সৈয়দ মো. জাহাঙ্গীর।

দেশের সড়ক পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি রূপরেখার আওতায় ১৮টি প্রস্তাব দিয়েছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন।

সংস্থাটি বলছে, এসব সংস্কার প্রস্তাব ২০২৫ থেকে ২০৩১ সাল পর্যন্ত তিন মেয়াদে বাস্তবায়নের রূপরেখা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সড়ক ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক সংস্কার ছাড়া প্রাণহানি ও বিশৃঙ্খলা কমানো সম্ভব নয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দ মো. জাহাঙ্গীর সড়ক ব্যবস্থাপনা সংস্কারে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তিন ধাপের রূপরেখা তুলে ধরে বলেন, আমরা সড়ক ব্যবস্থাপনা সংস্কারের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা তৈরি করেছি। এতে স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদি তিন ধাপে করণীয় নির্ধারণ করা হয়েছে।

স্বল্পমেয়াদি প্রস্তাবে (২০২৫-২০২৭) রয়েছে, জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিল পুনর্গঠন, বিআরটিএ-বিআরটিসি-ডিটিসিএ শীর্ষপদে টেকনিক্যাল বিশেষজ্ঞ নিয়োগ, প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার, ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষায় সড়ক সম্পর্কিত প্রশ্ন ও রোড টেস্ট, যানবাহনের আয়ুষ্কাল ও ডাম্পিং নীতিমালা, সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন, ট্রাফিক ও পার্কিং ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন, শিক্ষা সচেতনতা কার্যক্রমে বাজেট বরাদ্দ, দুর্ঘটনা ক্ষতিগ্রস্তদের ট্রাস্ট ফান্ডে ৭০০ কোটি টাকা বরাদ্দ এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ।

মধ্যমেয়াদি প্রস্তাবে (২০২৫-২০২৯) রয়েছে, আধুনিক নিরাপত্তা প্রযুক্তি (আইটিএস, জিপিএস, ক্যামেরা) বাধ্যতামূলক, মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহন দ্রুত প্রত্যাহার, রুট রেশনালাইজেশন ও কোম্পানিভিত্তিক বাস সার্ভিস, স্কুল-কলেজে নিজস্ব বাস সার্ভিস বাধ্যতামূলক এবং মোটরসাইকেলের গতি ও নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ।

দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তাবে (২০২৫-২০৩১) রয়েছে, রাজধানীতে বহুতল হাইড্রলিক পার্কিং স্টেশন, ছোট যানবাহনের নিরাপত্তা উন্নয়ন ও নিবন্ধন এবং সড়ক-রেল-নৌপথ একত্রিত করে অভিন্ন যোগাযোগ মন্ত্রণালয় গঠন করতে হবে।

এ সময় সৈয়দ মো. জাহাঙ্গীর বলেন, বাংলাদেশের সড়ক ব্যবস্থা বহুস্তরে নৈরাজ্যের মধ্যে রয়েছে। জনসংখ্যার ঘনত্ব, অপরিকল্পিত নগরায়ন, দুর্বল অবকাঠামো, সংস্থাগুলোর সমন্বয়ের অভাব এবং জবাবদিহির অভাবের কারণে দুর্ঘটনার ঝুঁকি সবসময়ই বেশি থাকে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে চালকদের অবহেলা ও অদক্ষতা, দীর্ঘ সময় গাড়ি চালানোর চাপ, সড়কে গতিরোধকহীন দীর্ঘ অংশ, যান্ত্রিক ত্রুটি, পথচারীদের অসচেতনতা এবং আইন অমান্য করার প্রবণতা। এসব মিলিয়ে প্রতিদিনই মানুষ সড়কে প্রাণ হারাচ্ছেন কিংবা চিরতরে পঙ্গু হয়ে যাচ্ছেন।

তিনি বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা রোধ ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার জন্য সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা জরুরি। অন্তর্বর্তী সরকার চাইলে এখনই একটি সড়ক ব্যবস্থাপনা সংস্কার কমিশন গঠন করে প্রস্তাবিত রূপরেখার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ বাস্তবায়ন করতে পারে। পরবর্তী নির্বাচিত সরকার সেই উদ্যোগকে এগিয়ে নিতে পারবে। রাষ্ট্রের অবহেলা এবং দীর্ঘদিনের অযত্নের কারণে সড়ক খাত আজ ভয়াবহ অবস্থায় পৌঁছেছে, আর এর মাশুল দিচ্ছে সাধারণ মানুষ।

৮ দফা দাবিতে ঘোষিত ৭২ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহার

তিনি আরও বলেন, নিরাপদ সড়ক কেবল অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে সম্ভব নয়; বরং মানুষের আচরণে পরিবর্তন, কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ, আধুনিক প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার এবং প্রশাসনিক সমন্বয়ের মাধ্যমে একটি টেকসই সমাধান পাওয়া যেতে পারে। এ জন্য সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, এনজিও, সিভিল সোসাইটি ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন অংশীদারদের যৌথভাবে কাজ করতে হবে।

ছবি ও সূত্র: আরটিভি

আপডেট থাকুন – আমাদের অনুসরণ করুন

Scroll to Top