হটাৎ গলায় লিচুর বীজ আটকে গেলে করণীয়

হটাৎ গলায় লিচুর বীজ আটকে গেলে করণীয়

ষড়ঋতুর বাংলাদেশে একেক মৌসুমে দেখা মেলে বিভিন্ন রকমের ফলের সমারোহ। এখনকার এই সময়ে সহজেই মিলছে আম, লিচু, কাঁঠাল, জাম, জামরুল, গাব, লটকন, পেয়ারা, আতা, আনারস আরো নানারকম ফলের সমারোহ। ফলের দোকানগুলোও নানান ধরণের দেশি ফলে পরিপূর্ণ।

মা-বাবারা মৌসুমি এসব ফল সবার আগে আদরের সন্তানের মুখে তুলে দেন। তবে শিশুকে এসব ফল খেতে দেওয়ার আগে অভিভাবকদের সতর্ক হওয়া উচিত। বিশেষ করে লিচু ও জাম খাওয়ানোর আগে, কারণ এগুলোর বীজ শিশুর গলায় আটকে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এমন হলে শিশুর মৃত্যুও হতে পারে। আমাদের দেশে এই একটি কারণে মে-জুন মাসে পত্রিকা খুললেই দেখা মেলে লিচুর বীজ গলায় আটকে শিশুর করুন মৃত্যুর সংবাদ।

সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে লিচুর বিচি গলায় আটকে তিন বছর বয়সী শিশুর মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। জানা যায়, আবু বক্কর নাম নিহত শিশুটি নানার বাড়ি বেড়াতে যাওয়ায়, তার নানা বাজার থেকে লিচু নিয়ে আসেন। খেলাধুলার ফাঁকে ফাঁকে সেই লিচু খাওয়ার সময় সাবধানতাবশত একটি লিচুর বিচি তার গলায় আটকে গেলে শ্বাস নিতে না পেরে অজ্ঞান হয়ে পড়ে শিশুটি।

হটাৎ গলায় লিচুর বীজ আটকে গেলে করণীয়

তাৎক্ষণিক পরিবারের সদস্যরা শিশুটিকে প্রথমে স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। পরে অবস্থার অবনতি হলে শিশুটিকে দ্রুত ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এর আগে, দিনাজপুরের বিরামপুরে খোসাসহ লিচু খাওয়ার সময় গলায় বীজ আটকে সালমান রনি (৫) নামের এক শিশু মারা যাওয়ার সংবাদ এসেছে গণমাধ্যমে। এমন মৃত্যুর খবর আসতে থাকে পুরো দেশ থেকেই। তাই শিশুকে লিচুর স্বাদ নেয়ার সময় বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত।

যেসব বিষয় খেয়াল রাখতে হবে সেগুলো হলো

প্রথমে জানতে হবে, গলায় কিছু আটকেছে কিনা? যেসব শিশুর এখনো কথা বলার বয়স হয়নি অথবা বাকপ্রতিবন্ধী, তাদের মনের ভাব বোঝা কঠিন। এজন্য প্রথমে খেয়াল করতে হবে, খাবার হোক বা অন্য কিছুশ্বাসনালিতে আটকে গেলে প্রথমেই শ্বাসপ্রশ্বাসে কষ্ট হবে। কাশি হবে, বুকের মধ্যে হাওয়ার মতো শব্দ, বমি বমি ভাব, কথা বলতে বা আওয়াজ করতে না পারা, ঠোঁট নীল হওয়া বা জ্ঞান হারানোর মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে।

তাৎক্ষণিক করণীয়

হঠাৎ এ রকম পরিস্থিতিতে কাউকে পড়তে দেখলে প্রথমে তাকে পেছন থেকে জড়িয়ে দুহাত দিয়ে পেটের ওপরের দিকে জোরে জোরে চাপ দিলে আটকে যাওয়া বস্তুটি দ্রুত বের হয়ে যাবে। খুব ছোট শিশুকে কোলে নিয়ে হাতের ওপর উপুড় করে পিঠে চাপড় দিতে হবে। দেরি না করে কাছের হাসপাতালে নিতে হবে। বস্তুটি বের না হওয়া বা হাসপাতালে চিকিৎসা শুরু না হওয়া পর্যন্ত পদ্ধতিটি চালিয়ে যেতে হবে।

পুরোটা সময় সতর্কভাবে খেয়াল রাখতে হবে, রোগীর ‘জ্ঞানের মাত্রা’ কমে যাচ্ছে কি না, রোগীর হার্ট বন্ধ বা কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়ে যাচ্ছে কি না। তাহলে দ্রুত বুকে চাপ তথা সিপিআর শুরু করতে হবে।

সতর্ক থাকতে যেসব ব্যবস্থা নিতে হবে

লিচু, জাম বা এ জাতীয় ফল কম বয়সী শিশুদের বিচি ছাড়িয়ে খাওয়াতে হবে। বড়দের তত্ত্বাবধান ছাড়া তাদের এগুলো দেওয়া বা খেতে দেওয়া ঠিক নয়। খাওয়ার পর ফলের বিচিগুলো সংগ্রহ করে শিশুর নাগালের বাইরে রাখতে হবে। পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের শক্ত দানার কোনো খাবার, এমনকি লজেন্স দেওয়াও ঠিক নয়। এগুলো গলায় আটকে সংকটের সৃষ্টি করতে পারে।

কখন ডাক্তারের কাছে নেবেন

গলার ব্যথা বা অস্বস্তি যখন দীর্ঘস্থায়ী হবে সেসময়। কিছুক্ষণ পরেও বীজ বের না হয় বা গিলতে সমস্যা হলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নেবেন।

যা করা উচিত নয়: আঙুল ঢুকিয়ে গলা খোঁচাবেন না, এতে বীজ আরও নিচে চলে যেতে পারে। শক্ত কিছু গিলে ফেলবেন না, সমস্যা আরও বাড়তে পারে।

চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের মতে, বয়স্ক ও ছোট শিশুদের গলার গ্যাগ রিফ্লেক্স কম থাকে। এ কারণে গলায় খাবার আটকে যেতে পারে। শ্বাসনালির মুখে খাবার আটকে গেলে ফুসফুসে অক্সিজেন সরবরাহ বিঘ্নিত হয়। শরীরে অক্সিজেন চলাচল কমে যায়। এমনকি পুরোপুরি বন্ধও হয়ে যেতে পারে।

শ্বাসনালি একেবারে বন্ধ হয়ে গেলে অক্সিজেনের অভাবে হৃদ্‌যন্ত্র ও মস্তিষ্ক কাজ করতে পারে না। অবস্থা সংকটাপন্ন হয়ে ওঠে। এমতাবস্থায় আটকে যাওয়া বস্তুটি দ্রুত বের না করতে পারলে রোগীকে বাঁচানো যায় না।

চিকিৎসকরা বলছেন, এমন পরিস্থিতিতে ৭ থেকে ১২ মিনিটের মধ্যে চিকিৎসা শুরু না করলে রোগীকে বাঁচানো কঠিন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এ রকম পরিস্থিতিতে অভিভাবকরা ঘাবড়ে গিয়ে নানা ধরনের ভুল করে বিপদের মাত্রা বাড়িয়ে দেন।

তাই শিশুর গলায় লিচুর বীজ আটকে আছে এমন মনে হলে রোগীকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা শুরু করতে হবে।

লেখক: স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, সারাবাংলা ডটনেট

Scroll to Top