‘সেপ্টেম্বরে রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হতে পারে’

‘সেপ্টেম্বরে রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হতে পারে’

রূপপুর (পাবনা) পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে: আমরা বলতে পারি রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাংলাদেশের চিত্র বদলে দেবে। বাংলাদেশ যে পারে সেটি আবারও প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। এটি জিডিপিতে ২ শতাংশ অবদান রাখবে বলে মন্তব্য করেছেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান।

বুধবার (৪ অক্টোবর) প্রকল্প এলাকা প্রকল্প পরিদর্শনকালে তিনি সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন ৷ ৫ অক্টোবর রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জ্বালানি ইউরেনিয়াম হস্তান্তর করা হবে। এতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ভার্চুয়ালি যুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে। সেই আয়োজনের প্রস্তুতি দেখতে রূপপুর পরিদর্শন করেন মন্ত্রী।

এর মধ্য দিয়ে নিউক্লিয়ার ক্লাবের ৩৩ সদস্য গর্বিত সদস্য হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। পাবনার রূপপুরে চলছে সাজসাজ রব। ইতোমধ্যেই রূপপুরে পৌঁছে গেছে আংশিক ইউরেনিয়াম রড।

মন্ত্রী বলেন, আসলে ৭ টা বছর নিরলসভাবে কাজ করা হয়েছে। রাশান বন্ধুরা বলেছে সারা পৃথিবীর মধ্যে বেস্ট হবে। আমরা তার নজির দেখতে পাচ্ছি। করোনার সময়েও কাজ ব্যহত হয়নি। সাংবাদিক বন্ধুসহ সারাদেশের মানুষ সহায়তা করেছে। আমাদের প্রকৌশলীরা এবং মালামাল রাশানদের কাছে পরীক্ষা দিয়ে এ গ্রেড পেয়েছে।

তিনি বলেন, স্বাধীনতার পরপরই বঙ্গবন্ধু কাজ শুরু করতে চেয়েছিলেন। ফরাসি ও রাশানদের সঙ্গে কথা শুরু করেছিলেন। তার কন্যার হাত ধরে সফল হলো বাংলাদেশ। আমরা এখন নিউক্লিয়ার ক্লাবের গর্বিত সদস্য। আমরা সাড়ে ৬ বছরে এর চুড়ান্ত ধাপে পৌঁছে গেছি। বিশ্বে আর কোথাও সাত -আট বছরে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের রেকর্ড নেই। কোথাও কোথাও পনের বছর সময় লেগেছে। সত্যিকার অর্থে প্রধানমন্ত্রীর নজর থাকায় কাজটি শেষ করতে পেরেছি।

‘সেপ্টেম্বরে রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হতে পারে’

বাণিজ্যিক উৎপাদন প্রসঙ্গে মন্ত্রী কিছুটা রহস্য করে উত্তর দেন। আমরা মাত্র সাড়ে ৬ বছরে কাজ শেষ করেছি, এখন তাড়াহুড়ো করার কিছু নেই। আমরা প্রস্তুত হলেই চলবে না, ট্রান্সমিশন লাইন লাগবে। দেড়বছর সময় লাগতে পারে, ২০২৫ সালের প্রথম দিকে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন পিছিয়ে থাকা উত্তরবঙ্গের মানুষের সুবিধা যেনো নিশ্চিত হয়। আমরা সেদিকে নজর রাখছি।

বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পেমেন্ট নিয়ে কোন জটিলতা আছে কিনা। এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, সারাবিশ্বেই এখন নানা রকম সংকট চলছে। আমরাও কিছু মোকাবিলা করছি। এটি নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই।

পরমাণু বিজ্ঞানী ও প্রকল্প পরিচালক ড. মো. শৌকত আকবর বলেন, বাণিজ্যিক উৎপাদনের জন্য বিদ্যুৎ বিভাগের বড় একটি ভূমিকা রয়েছে। আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছি, বিদ্যুৎ ভবনে যৌথসভা করেছি, আগামী সেপ্টেম্বরে লাইনে যুক্ত হবো।

প্রথম ইউনিট ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। দ্বিতীয় ইউনিটের অগ্রগতি হয়েছে ৭০ শতাংশ । দাপ্তরিক ভাষায় প্রথম ইউনিট থেকে দ্বিতীয় ইউনিট ১ বছর পিছিয়ে থাকলেও আমরা ৬ মাসের ব্যবধানে রয়েছি। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু হবে। প্রথম ধাপে ২০ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। প্রথমধাপের সফলতার পর ধাপে ধাপে ৫০ ও ৭০ শতাংশ এবং শেষ ধাপে পুরোপুরি উৎপাদনে যাবে। এই ধাপগুলো পার হতে সাধারণত ১০ মাস সময় লাগে। তবে প্রথম দিন থেকেই বিদ্যুতের সুবিধা পাবে জনগণ। সে কারণে সেপ্টেম্বরে চালু হচ্ছে এ কথা বলা যায়।

তিনি বলেন, বিভিন্ন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণের ধাপে ধাপে অনুমোদন নিতে হয়েছে। মোট ৮ টি স্তর ছিল, প্রত্যেকটি স্তর থেকে পরবর্তী স্তরে যেতে আইএইএ অনুমোদন নিতে হয়েছে। অর্থাৎ পরীক্ষায় পাস করে পরবর্তী ধাপে প্রবেশ করতে হয়েছে। আন্তর্জাতিক অনেকগুলো অর্থরিটি নিবিড় পর্যবেক্ষণ করেছে। এখানে ঘাটতির সুযোগ নেই।


তিনি বলেন, রেডিয়েশন নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কোন কারণ নেই। রেড়িয়েশনের মাত্রা মানুষের সহন ক্ষমতার মধ্যে থাকবে। আমরা ২৩টি রেডিয়েশন স্টেশন চালু করবো, সেখানে রেডিয়েশনের মাত্রা প্রদর্শিত হবে। যে কেউ দেখতে পারবেন। এসব স্টেশন ১৮ কিমি দূরে পর্যন্ত থাকবে। আমরা দেখেছি ১২.৫ কিলোমিটার দুরে মনিটরিংয়ের প্রয়োজন নেই। যেভাবে বসবাস করছে সেইভাবে করতে পারবে।

জনবল প্রসঙ্গে শৌকত আকবর বলেন, প্রশিক্ষিত জনবল প্রস্তুত হয়েছে এবং সুরক্ষা দেওয়ার সক্ষমতা অর্জণ করেছে বলে

ইউরেনিয়াম আমদানি অনুমোদন দিয়েছে। ৫ অক্টোবর থেকে আন্তর্জাতিক নিউক্লিয়ার ক্লাবের সদস্য হবো। কমিশনিংয়ের প্রথম দিন থেকে আমাদের প্রশিক্ষিত জনবল যুক্ত থাকবে। তারপর আমরা ভেবে দেখবো নিজেরা চালাতে পারবো কিনা।

ঋণ পরিশোধ সম্পর্কে পিডি বলেন, দ্বিতীয় ইউনিটের বাণিজ্যিক উৎপাদনের দুই বছর পর কিস্তি পরিশোধ শুরু হবে বলে জানান তিনি।

গত ২৯ সেপ্টেম্বর কঠোর নিরাপত্তার মধ্যদিয়ে রূপপুরে নেওয়া হয় বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির জ্বালানি ইউরেনিয়াম রড। এর আগে রাশিয়ার একটি কারখানা থেকে একটি বিশেষ বিমানে করে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পারমাণবিক জ্বালানির এই চালান আনা হয়। রাশিয়ার নভোসিবিরস্ক কেমিক্যাল কনসেনট্রেটস প্ল্যান্টে (এনসিসিপি) এই জ্বালানি উৎপাদিত হয়। রূপপুরের জ্বালানি সরবরাহ এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার চুক্তিবদ্ধ রয়েছে রোসাটম।

Scroll to Top