এই খবরটি পডকাস্টে শুনুনঃ
রমজান মাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হলো সালাতুত তারাবিহ। এটি সুন্নাতে মুআক্কাদাহ, যা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং খোলাফায়ে রাশেদিনসহ সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ি ও সালাফে সালেহীন পালন করেছেন। সালাতুত তারাবিহর ফজিলত সম্পর্কে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- যে ব্যক্তি ঈমান ও সওয়াবের আশায় রমজানের কিয়াম (তারাবিহ) আদায় করবে, তার পূর্বের গুনাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হবে।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩৭)।
তারাবিহ নামাজের রাকাত সংখ্যা সম্পর্কে প্রামাণ্য দলিলসমূহ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুরু করে চার খলিফা ও তাবেয়ীগণ পর্যন্ত ২০ রাকাত তারাবিহ আদায়ের ব্যাপারে ঐকমত্য রয়েছে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আমল:
হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, “হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাদিআল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন—নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজান মাসে জামাত ব্যতীত ২০ রাকাত তারাবিহ ও বিতরের সালাত পড়তেন।” (আস-সুনানুল কুবরা, ২/৪৯৬।
এ থেকে বোঝা যায়, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে ২০ রাকাত তারাবিহ নামাজ আদায় করতেন এবং উম্মতের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল হিসেবে রেখে গেছেন।
খোলাফায়ে রাশেদিন ও সাহাবায়ে কেরামের আমল:
দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর (রাদিআল্লাহু আনহু) মদিনায় সাহাবায়ে কেরামের সম্মতিক্রমে জামাতসহ ২০ রাকাত তারাবিহ চালু করেন। “হযরত ওমর হযরত উবাই ইবনে কা‘ব (রাদিআল্লাহু আনহু)-কে ইমাম বানিয়ে ২০ রাকাত তারাবিহ নামাজ পড়ার জন্য একত্রিত করেন।” (আবু দাউদ, হাদিস: ১৪২৯)।
অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, “হযরত ওমর (রাদিআল্লাহু আনহু)-এর শাসনামলে মুসলিমরা রমজান মাসে ২৩ রাকাত (২০ রাকাত তারাবিহ ও ৩ রাকাত বিতর) নামাজ আদায় করতেন।”(মুয়াত্তা ইমাম মালিক, হাদিস: ২৫০)।
এছাড়াও চতুর্থ খলিফা হযরত আলি(রাদিআল্লাহু আনহু) ও ২০ রাকাত তারাবিহ জামাতের মাধ্যমে আদায়ের ব্যবস্থা করেন। “হযরত আলি (রাদিআল্লাহু আনহু) রমজান মাসে ক্বারিদের একত্রিত করতেন এবং তাদের মধ্য থেকে একজনকে নির্বাচন করতেন, যেন তিনি মুসল্লিদের নিয়ে ২০ রাকাত তারাবিহ পড়ান।” (আস-সুনানুল কুবরা, হাদিস: ৪৭২৫)।
প্রখ্যাত তাবেয়ি হযরত হাসান বসরি (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, “হযরত ওমর (রাদ্বিআল্লাহু আনহু)-এর সময়ে মুসলিমরা সর্বসম্মতিক্রমে ২০ রাকাত তারাবিহ আদায় করতেন।” (আবু দাউদ, হাদিস: ১৪২৯)।
এছাড়াও, চার মাযহাবের ইমামগণ (ইমাম আবু হানিফা, ইমাম মালিক, ইমাম শাফেয়ি ও ইমাম আহমদ বিন হাম্বল) সকলেই ২০ রাকাত তারাবিহের পক্ষে মত দিয়েছেন।
উপরোক্ত হাদিস ও প্রামাণ্য দলিল থেকে স্পষ্ট হয় যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, খোলাফায়ে রাশেদিন ও সালাফে সালেহীনের সর্বসম্মত আমল ছিল ২০ রাকাত তারাবিহ। এটি ইসলামি ইতিহাসের সুপ্রতিষ্ঠিত ইবাদত, যা উম্মতের ঐক্যমতের দ্বারা প্রমাণিত। অতএব, মুসলমানদের উচিত এই সুন্নাত মুআক্কাদাহ আমলকে গুরুত্বসহকারে পালন করা এবং ২০ রাকাত তারাবিহ নামাজ আদায়ের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা।
আল্লাহ আমাদের সকলকে এই গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাহর অনুসরণ করার তাওফিক দান করুন। আমিন!