শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৪ বছর | চ্যানেল আই অনলাইন

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৪ বছর | চ্যানেল আই অনলাইন
Fresh Add Mobile

পহেলা ফাল্গুন সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) দিবস। ১৯৯১ সালের বসন্তের এই দিনে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে দেশের প্রথম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। গৌরব ও সাফল্যের ৩৩টি ফাল্গুন পেরিয়ে ৩৪ তম জন্মদিনে পা রাখলো বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি গবেষণায় সেরা এই বিশ্ববিদ্যালয়টি। প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে এখন পর্যন্ত দেশসেরা গ্রাজুয়েট তৈরিতে দেশসেবায় নিজেকে নিয়োজিত রেখে গবেষণা, উদ্ভাবন ও প্রযুক্তির উৎকর্ষের মাধ্যমে দেশের প্রযুক্তির ক্ষেত্রে তৈরি করেছে অনন্য অবস্থান।

বিশ্ববিদ্যালয়টির ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল তথা সিলেটবাসীদের দীর্ঘ ৭০ বছরের আন্দোলন-সংগ্রাম শেষে ও সিলেটের কৃতি সন্তান হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর অনবদ্য অবদানে ১৯৮৫ সালে সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণার পর ১৯৮৬ সালের ২৫ আগস্ট সিলেট শহরের প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে কুমারগাঁওয়ে ৩২০ একর জমির ওপর শাবিপ্রবির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়। বর্তমানে এটি সিলেট সিটি কর্পোরেশনের অভ্যন্তরে অবস্থিত। এর পর ১৯৯১ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি ৩টি বিভাগ, ১৩ জন শিক্ষক ও ২০৫ জন শিক্ষার্থী নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে গুটি গুটি পায়ে দীর্ঘ ৩৩ বসন্ত পেরিয়ে ৩৪-এ পদার্পন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। বর্তমানে সাতটি অনুষদের অধীনে ২৮টি বিভাগে প্রায় ৫শ এর অধিক শিক্ষক এবং প্রায় ১০ হাজারের অধিক শিক্ষার্থী ও অধিভুক্ত মেডিকেল কলেজ এবং নার্সিং কলেজের শিক্ষার্থীরা অধ্যয়ন করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়টিরে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে উপাচার্যের দায়িত্ব পেয়ে সুদক্ষ প্রশাসনিক ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। এছাড়া দীর্ঘ দু’দশক পর উপ-উপাচার্যের দায়িত্ব পেয়েছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠালগ্নের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মো. কবির হোসেন।

Bkash

দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে এটিই প্রথম বাংলা সার্চ ইঞ্জিন ‘পিপীলিকা’র উদ্ভাবন, যানবাহন ট্র্যাকিং ডিভাইস উদ্ভাবন, চালকবিহীন বিমান (ড্রোন) উদ্ভাবন, বাংলায় কথা বলা সামাজিক রোবট ‘রিবো’ তৈরি, হাঁটতে-চলতে সক্ষম রোবট ‘লি’ তৈরি, অনলাইনে ট্রান্সক্রিপ্ট উত্তোলনের সুবিধা চালু, কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার কিবোর্ড তৈরি, তাৎক্ষণিক সার্টিফিকেট যাচাইয়ের জন্য ‘ব্লক চেইন’ পদ্ধতি, গবেষণায় নকল যাচাই করার জন্য ‘টার্ন-ইট-ইন’ পদ্ধতি চালু, পরীক্ষার মাধ্যমে ক্যানসার নির্ণয়ের পদ্ধতি উদ্ভাবন ও সর্বশেষ তারবিহীন বৈদ্যুতিক গাড়ী উদ্ভাবনসহ অসংখ্য উদ্ভাবন রয়েছে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের।

২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় মহাকাশ সংস্থা নাসা আয়োজিত স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জে প্রথমবারের মতো অংশ নিয়ে ৭৯টি দেশের বাছাইকৃত দুই হাজার ৭২৯টি দলের সঙ্গে লড়াই করে শীর্ষ চারে জায়গা করে নেয় শাবিপ্রবির দল ‘টিম অলিক’। সর্বশেষ দেশের প্রযুক্তি খাতে অবদানের জন্য ‘দেশসেরা ডিজিটাল ক্যাম্পাস অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছে এ বিশ্ববিদ্যালয়।

Reneta June

দেশের অন্যসব বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর মধ্যে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যেও শাবিপ্রবি ক্যাম্পাস অনন্য। সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়কের পাশে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে প্রধান ফটক দিয়ে ভেতরে ঢুকতেই চারদিকের মনোমুগ্ধকর পরিবেশ সকলের দৃষ্টি কাড়ে। প্রবেশের পরই দীর্ঘ এক কিলোমিটার রাস্তার দু’পাশ জুড়ে চোখে পড়ে নয়নাভিরাম বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। এই কিলোরোডের মাঝে রয়েছে কৃষ্ণচূরা, রাঁধাচূড়াসহ সিলেটের ইতিহাস ঐতিহ্যের ধারাবাহক চা গাছ। কিলোরোডের পাশে রয়েছে সিলেটের দীর্ঘতম কৃত্তিম স্বচ্ছ পানির লেক। এতে রয়েছে নানান প্রজাতির মাছ ও বিস্তৃত পদ্ম আর শাপলার ফুল।

অবকাঠামগত দিক থেকে বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে দুটি প্রশাসনিক ভবন, ছয়টি অ্যাকাডেমিক ভবন, তিনটি ছাত্র হল, তিনটি ছাত্রী হল, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার, ৩ টি ওয়ার্কশপ, মেডিকেল সেন্টার, শারীরিক শিক্ষা ভবন, জিমনেশিয়াম, কেন্দ্রীয় মিলনায়তন ও ইউনিভার্সিটি সেন্টারসহ অসংখ্য ভবন।

শাবিপ্রবির উদ্ভাবিত অনেক প্রযুক্তি দেশে প্রথম ও অনন্য স্থান দখল করে রেখেছে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে প্রথম সেমিস্টার পদ্ধতি চালু, মোবাইল ফোনে ভর্তি কার্যক্রম শুরু, পুরো ক্যাম্পাস ওয়াইফাই সেবার আওতায় নিয়ে আসা, ক্যাম্পাসের প্রতিটি জায়গায় সিসিটিভি ক্যামেরার ব্যবহার, নিজস্ব ডোমেইনে ইমেইল চালু করে শাবিপ্রবি।

এছাড়া প্রথম বাংলা সার্চ ইঞ্জিন ‘পিপীলিকা’র উদ্ভাবন, যানবাহন ট্র্যাকিং ডিভাইস উদ্ভাবন, চালকবিহীন বিমান (ড্রোন) উদ্ভাবন, বাংলায় কথা বলা সামাজিক রোবট ‘রিবো’ তৈরি, হাঁটতে-চলতে সক্ষম রোবট ‘লি’ তৈরি, অনলাইনে ট্রান্সক্রিপ্ট উত্তোলনের সুবিধা চালু, কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার কিবোর্ড তৈরি, তাৎক্ষণিক সার্টিফিকেট যাচাইয়ের জন্য ‘ব্লক চেইন’ পদ্ধতি, গবেষণায় নকল যাচাই করার জন্য ‘টার্ন-ইট-ইন’ পদ্ধতি চালু, পরীক্ষার মাধ্যমে ক্যানসার নির্ণয়ের পদ্ধতি উদ্ভাবনসহ অসংখ্য উদ্ভাবন রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের। শুধু শিক্ষা ও গবেষণায় নয়, দেশের দুর্দিনে দেশের মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে মানবিকতায়ও অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে শাবিপ্রবি। অতিমারী করোনাকালে নিজস্ব অর্থায়নে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধীনে করোনা শনাক্তরণ ল্যাব তৈরি করেছে। এতে করে এই অঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ কমিয়েছে।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যেও শাবিপ্রবি ক্যাম্পাস অনন্য। প্রধান ফটক দিয়ে ভেতরে ঢুকতেই চারদিকের মনোমুগ্ধকর পরিবেশ সকলের দৃষ্টি কাড়ে। প্রবেশের পরই দীর্ঘ এক কিলোমিটার রাস্তার দুপাশ জুড়ে চোখে পড়ে নয়নাভিরাম বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। কিলোরোডের দুদিকে রয়েছে স্বচ্ছ পানির লেক। এক রাস্তা ধরে ক্যাম্পাসে ঢুকলেই সামনে আসে গোল চত্বর। গোল চত্বরের স্থাপনায় রয়েছে ফুলের বাগান ও মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্যের গায়ে ইংরেজিতে ‘শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়’ লেখা। এটিকে ঘিরে ধরে তার সৌন্দর্য্যকে বাড়িয়ে দিয়েছে সবুজ ঘাস ও লতাপাতা।

ক্যাম্পাসের একটু ভেতরে গেলেই দেখা মিলে দৃষ্টিনন্দন শহীদ মিনারের। টিলার ওপরে নির্মিত দেশের অন্যতম সৌন্দর্য্যমণ্ডিত এ শহীদ মিনারে উঠতে প্রায় ১০১ সিঁড়ি অতিক্রম করতে হয়। এছাড়া প্রায় সবকটি অবাসিক হলের পাশে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন উঁচু-নিচু টিলা ও পাহাড়ের সমাগম। এ যেন পার্বত্য চট্টগ্রামের সেই গ্রাম ছাড়া ঐ রাঙ্গামাটির পথের মত! যেখানে ছবি অনেক কথা বলে।এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বত্র ছড়িয়ে আছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার চিহ্ন। স্বাধীনতার গৌরবের মতোই মাথা উঁচু করে দাড়িয়ে আছে স্বাধীনতার মহান নায়ক বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল।

ক্যাম্পাসের প্রায় মাঝামাঝি স্থানে দাঁড়িয়ে আছে একমাত্র ভাস্কর্য চেতনা ৭১। ভাস্কর্যটিতে একটি ছেলে এক হাত উঁচু করে বাংলাদেশের পতাকা ধরে আছে। পাশে সহাবস্থানে একটি মেয়ের হাতে একটি বই, যা নির্দেশ করে বাংলাদেশের সংবিধান।

উপউপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ কবির হোসেন বলেন, এখন সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে শাবিপ্রবি অন্যতম মডেল। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আলো ছড়িয়ে পড়ছে দেশ ও দেশের বাইরে। আমরা দক্ষ গ্রেজ্যুয়েট তৈরি করছি। যারা দেশ ও দেশের বাহিরে সুনাম অর্জন করে চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বিভাগকে ল্যাবসম্পন্ন করেছি যেন ভাল গবেষক তৈরি হতে পারে।

প্রতিষ্ঠার ৩৪ বছর পূর্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই শিক্ষা ও গবেষণায় অনন্য অবদান রেখে চলছে এ বিশ্ববিদ্যালয়। নানা বাধা-বিপত্তি ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে আমরা প্রতিনিয়ত এগিয়ে যাচ্ছি। বর্তমানে সুশাসন, অবকাঠামো উন্নয়ন, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, মানবিকতার ক্ষেত্রে দৃশ্যমান উন্নতি সাধন করছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। আমরা ক্যাম্পাসকে সুরক্ষিত করার জন্য দীর্ঘ ছয় কিলোমিটার বেষ্টিত সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করেছি। ক্যাম্পাসে অবকাঠামোগত উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখেছি যেন একশো বছরে আর ভবন নির্মাণের প্রয়োজন না পড়ে। বিশ্ববিদ্যালয়টিকে এগিয়ে নিতে আগামী দিনেও সকলের সহযোগিতায় আমাদের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে বলে আশা করছি।

Scroll to Top