প্রয়াত মার্কিন ধনকুবের ও যৌন অপরাধী জেফরি এপস্টেইন সংক্রান্ত একটি মামলার নথি প্রকাশ হয়েছে। নথিতে দেখা গেছে এপস্টেইন সঙ্গে পরিচিত ছিলেন আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট, ব্রিটেনের যুবরাজ থেকে প্রখ্যাত বিজ্ঞানী, গায়ক—এমন বেশ কয়েকজন হাই প্রোফাইল ব্যক্তিত্বের নাম সামনে এসেছে।
তালিকায় বিল ক্লিনটন, ডোনাল্ড ট্রাম্প ও প্রিন্স অ্যান্ড্রু ছাড়াও উল্লেখযোগ্য একজন হলেন পপ তারকা মাইকেল জ্যাকসন। এছাড়া, বিখ্যাত মার্কিন জাদুকর ডেভিড কপারফিল্ড, মার্কিন বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান হাইব্রিজ ক্যাপিটালের সহ-প্রতিষ্ঠাতা গ্লেন ডুবিন, নিউ মেক্সিকো অঙ্গরাজ্যের সাবেক গভর্নর বিল রিচার্ডসন, আইনজীবী অ্যালান ডারশোভিৎজ এবং চেইন হোটেল হায়াতের চেয়ারম্যান ও ধনকুবের থমাস প্রিজকার অন্যতম।
ব্রিটিশ রাজ পরিবার থেকে বিতাড়িত প্রিন্স অ্যান্ড্রুও আছেন এই তালিকায়। মূলত জেফরির সঙ্গে সম্পর্ক রাখার অভিযোগেই তাকে রাজ পরিবার থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল।
বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারি) রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জেফরি এপস্টেইনের যৌন নির্যাতনের শিকার ভার্জিনিয়া জিওফ্রে এবং এপস্টেইনের সহযোগী ঘিসলাইন ম্যাক্সওয়েলের মধ্যে একটি মানহানি ও ক্ষতিপূরণ মামলার সমঝোতার অংশ হিসেবে এই মামলার নথি থেকে এই নামগুলো প্রকাশ করা হচ্ছে।
স্টিফেন হকিং এবং প্রায় ২০ জন প্রখ্যাত বিজ্ঞানীও জেফ্রির দ্বীপে গিয়েছিলেন বলে রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে।
নথিতে বিল ক্লিনটন ও ডোনাল্ড ট্রাম্পেরও ওই দ্বীপে যাওয়ার কথা উল্লেখ থাকলেও সেখানে কোনো ধরনের অপরাধ বা ভুল করেছেন এমন কিছু উল্লেখ করা হয়নি। বিল ক্লিনটনের মুখপাত্র জানিয়েছেন, বিল একবার জেফরির সঙ্গে বিমান ভ্রমণে গেলেও সেখানে অপরাধমূলক কিছু হয়নি।

মাইক্রোসফ্টের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটসও জেফরির দ্বীপে একাধিক বার গিয়েছিলেন বলে রিপোর্টে উঠে এসেছে। মেলিন্ডা গেটসের সঙ্গে দাম্পত্যে তখনও চির ধরেনি, সেই সময় মিলা আন্তোনোভার সঙ্গে নাম জড়ায় গেটসের। জেফরির সঙ্গে বিলের যোগাযোগও বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য দায়ী বলে পরবর্তীকালে মন্তব্য করেন মেলিন্ডা। জনপ্রিয় মডেল নেওমি ক্যাম্পবেলেরও উল্লেখ রয়েছে রিপোর্টে। নেওমির নাম ভাঙিয়ে অল্পবয়সি মেয়েদের জেফরি ফাঁদে ফেলতেন বলে দাবি করা হয়েছে।
ধনকুবের জেফরি এপস্টেইন ব্যক্তিজীবনে ছিলেন চতুর ও কৌশলী বিনিয়োগকারী। তিনি সমাজের উচ্চস্তরের লোকজন বিশেষ করে তারকা, বিজ্ঞানী, রাজনীতিবিদ এবং অন্যান্য ধনকুবেরদের সঙ্গে তার ব্যাপক ওঠাবসা ছিল।
২০০৫ সালে তাকে প্রথমবারের মতো গ্রেফতার করা হয় ১৪ বছর বয়সী এক কিশোরীকে যৌনতার জন্য অর্থ দেওয়ার অভিযোগে। এরপর আরও একাধিক কিশোরী একই অভিযোগ তুললেও জেফরিকে ২০০৮ সালে একটি মাত্র কিশোরীর অভিযোগের বিপরীতে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। কিন্তু হাস্যকর বিষয় হলো তাকে ১৩ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হলেও দণ্ড ভোগকালে জেফরি নিয়মিত অফিস করতেন এবং শুধু রাতের বেলায় কারাগারে গিয়ে ঘুমাতেন।
পরে ২০১৯ সালে ম্যানহাটানের ফেডারেল কৌঁসুলিরা জেফরি এপস্টেইনের বিরুদ্ধে যৌন ব্যবসায় জড়িয়ে ফেলার জন্য নারী পাচারের অভিযোগ আনে। সেই মামলার শুনানির সময় তিনি কারাগারেই আত্মহত্যা করেন।
উল্লেখ্য, এই কুখ্যাত যৌনব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, আমেরিকার প্রভাবশালী রাজনীতিবিদদের হানিট্র্যাপে ফেলে গোপনে ভিডিও করে ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদকে সরবরাহ করত। মোসাদ সেসব ভিডিওকে পুঁজি করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টসহ অসংখ্য রাজনীতিবিদদের ব্ল্যাকমেইল করে নিজেদের ইচ্ছামতো ইসরায়েলের জন্য কাজ করিয়ে নিতো।