ওয়াশিংটন, ১০ মার্চ – যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী মাহমুদ খালিলকে গ্রেপ্তার করেছে মার্কিন অভিবাসন এজেন্টরা। শনিবার (৮ মার্চ) সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক ভবন থেকে তাকে করে মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের এজেন্টরা গ্রেপ্তার। এক বিবৃতিতে স্টুডেন্ট ওয়ার্কার্স অব কলাম্বিয়া ইউনিয়ন এ তথ্য জানিয়েছে। এই শিক্ষার্থী গত বছর বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
বিবৃতিতে ইউনিয়ন বলেছে, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড পাবলিক অ্যাফেয়ার্সের শিক্ষার্থী। তিনি ফিলিস্তিনপন্থি আন্দোলনের একজন প্রধান কর্মী ছিলেন।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, খালিলের স্ত্রী একজন মার্কিন নাগরিক এবং আট মাসের গর্ভবতী।
লেবার ইউনিয়নের মতে, খালিল যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী বাসিন্দা (গ্রিন কার্ডধারী)। তার গ্রেপ্তারকে নাগরিক অধিকার সংস্থাগুলো রাজনৈতিক মত প্রকাশের ওপর হামলা হিসেবে নিন্দা জানিয়েছে।
শনিবার গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে খালিল বলেন, ট্রাম্পের শিক্ষার্থী বিক্ষোভকারীদের সমালোচনার পর তিনি আশঙ্কা করেছিলেন যে সরকার তাকে লক্ষ্যবস্তু করতে পারে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও রবিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খালিলের গ্রেপ্তারের খবর শেয়ার করে মন্তব্য করেন, ‘আমরা হামাস সমর্থকদের ভিসা ও গ্রিন কার্ড বাতিল করব, যাতে তাদের দেশ থেকে বহিষ্কার করা যায়।’ তবে তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি।
মার্কিন আইন অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত গোষ্ঠীগুলোর জন্য ‘উপকরণগত সহায়তা বা সম্পদ’ প্রদান নিষিদ্ধ, যার মধ্যে হামাসও অন্তর্ভুক্ত। তবে এই আইনে ‘সম্পৃক্ত কার্যক্রম পরিচালনা’ করার কোনও নির্দিষ্ট সংজ্ঞা নেই।
সরকারের কোনও সংস্থা এখনও বলেনি যে খালিল হামাসকে উপকরণগত সহায়তা দিয়েছেন বা কোনও অপরাধে জড়িত।
মাহমুদ খলিলের গ্রেপ্তারের বিষয়টি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি প্রতিশ্রুতি পূরণের প্রথম প্রচেষ্টার একটা বলে মনে হচ্ছে। ট্রাম্প অঙ্গীকার করেছিলেন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে ফিলিস্তিনিপন্থি প্রতিবাদী আন্দোলনে জড়িত কিছু বিদেশি শিক্ষার্থীকে তিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেবেন। এই আন্দোলনকে তিনি ‘ইহুদিবিদ্বেষী’ বলে অভিহিত করেন।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় ফিলিস্তিনের গাজাভিত্তিক সংগঠন হামাস। জবাবে গাজায় নির্বিচার হামলা শুরু করে ইসরায়েল। গাজায় ইসরায়েলি হামলায় সমর্থন দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এর জেরে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ফিলিস্তিনিপন্থি ও ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে। কয়েকমাস ধরে এই বিক্ষোভ চলে।
মাহমুদ খলিল তার আন্দোলনকে যুদ্ধবিরোধী আন্দোলন বলে অভিহিত করছেন। এই আন্দোলনে ইহুদি ছাত্র ও গোষ্ঠীগুলোও অন্তর্ভুক্ত। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনায় ফিলিস্তিনিপন্থি শিক্ষার্থী বিক্ষোভকারীদের পক্ষের প্রধান আলোচকদের একজন ছিলেন মাহমুদ খলিল।
নিউইয়র্ক সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন বলেছে, খালিলের গ্রেপ্তার অবৈধ, প্রতিশোধমূলক এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতার ওপর হামলা।
অনলাইনে পাওয়া জীবনবৃত্তান্ত থেকে জানা যায়, খালিল সিরিয়ার একটি ফিলিস্তিনি শরণার্থী শিবিরে বড় হয়েছেন। বৈরুতে ব্রিটিশ দূতাবাসেও কাজ করেছেন তিনি।
কলাম্বিয়ার এক মুখপাত্র বলেছেন, আইন অনুযায়ী তারা কোনও শিক্ষার্থীর তথ্য প্রকাশ করতে পারে না, তবে তারা শিক্ষার্থীদের আইনগত অধিকার নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন
আইএ/ ১০ মার্চ ২০২৫