যুক্তরাষ্ট্র ও চীন তাদের চলমান বাণিজ্য যুদ্ধবিরতির সময় আরও ৯০ দিনের জন্য বাড়িয়ে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত কার্যকর রাখার ঘোষণা দিয়েছে।
সংবাদমাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।
সোমবার (১১ আগস্ট) স্থানীয় সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক নির্বাহী আদেশে এই সিদ্ধান্তে স্বাক্ষর করেন যা নতুন শুল্ক কার্যকর হওয়ার কিছু সময় আগে ঘোষণা হয়েছে।
যৌথ বিবৃতিতে দুই দেশ জানিয়েছে, চলতি বছরের শুরুর দিকে ঘোষিত একে অপরের পণ্যের ওপর তিন অঙ্কের শুল্ক কার্যকরের সিদ্ধান্ত স্থগিত থাকবে। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের চীনা পণ্যের ওপর ১৪৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ এবং চীনের আমেরিকান পণ্যের ওপর ১২৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকরের পদক্ষেপ আপাতত বন্ধ থাকবে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র চীনা আমদানিতে ৩০ শতাংশ এবং চীন মার্কিন পণ্যে ১০ শতাংশ শুল্ক ধরে রাখবে।
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, শুল্ক যুদ্ধবিরতি বাড়ানোর ফলে বাণিজ্য ঘাটতি নিরসন ও অন্যায্য বাণিজ্য চর্চা মোকাবিলা নিয়ে আলোচনার জন্য আরও সময় পাওয়া যাবে। যুক্তরাষ্ট্রের হিসাবে ২০২৪ সালে চীনের সঙ্গে তাদের বাণিজ্য ঘাটতি ছিল প্রায় ৩০০ বিলিয়ন ডলার যা যেকোনো বাণিজ্য অংশীদারের মধ্যে সর্বোচ্চ।
চীনের ওয়াশিংটন দূতাবাসের এক মুখপাত্র বলেছেন, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উভয়পক্ষের জন্য কল্যাণকর সহযোগিতাই সঠিক পথ; দমন-পীড়ন ও নিয়ন্ত্রণের পথে কোনো সাফল্য আসবে না।
বিবৃতিতে চীন যুক্তরাষ্ট্রকে অযৌক্তিক বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে এবং উভয় দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বার্থে কাজ করার পাশাপাশি বৈশ্বিক সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদনের স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে।
গত এপ্রিল থেকে যুক্তরাষ্ট্র-চীনের বাণিজ্য সম্পর্ক উত্তপ্ত হয়ে ওঠে, যখন ট্রাম্প বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর নতুন শুল্ক ঘোষণা করেন যার মধ্যে চীন ছিল সর্বোচ্চ শুল্কের তালিকায়। পাল্টা জবাবে চীনও নিজস্ব শুল্ক আরোপ করে, যা দুই দেশের মধ্যে পণ্য বাণিজ্য প্রায় অচল করে তোলে।
মে মাসে উভয়পক্ষ কিছু শুল্ক প্রত্যাহারে সম্মত হলেও এখনও আলোচনা চলছে বিরল খনিজের প্রবেশাধিকার, চীনের রাশিয়ান তেল কেনা, এবং যুক্তরাষ্ট্রের উন্নত প্রযুক্তি বিশেষ করে চিপ বিক্রির ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা নিয়ে।
যুক্তরাষ্ট্র এখনো টিকটকের চীনা মালিক প্রতিষ্ঠান বাইটড্যান্স থেকে আলাদা করার জন্য চাপ দিচ্ছে, যা বেইজিং দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করছে।
বাণিজ্য যুদ্ধবিরতির মধ্যেও এ বছর দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য প্রবাহ কমেছে। মার্কিন সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জুনে চীনা পণ্য আমদানি আগের বছরের একই মাসের তুলনায় প্রায় অর্ধেক হয়েছে। বছরের প্রথম ছয় মাসে যুক্তরাষ্ট্র চীন থেকে ১৬৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ১৫ শতাংশ কম; একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের চীনে রপ্তানি কমেছে প্রায় ২০ শতাংশ।