ভাসমান খাঁচায় কোরাল চাষে সফলতা

ভাসমান খাঁচায় কোরাল চাষে সফলতা

গবেষক জানান, ‘রাক্ষুসী’ প্রকৃতির এই মাছকে শুরুতে খাওয়ানো হয়েছে কুচি করা তেলাপিয়া মাছ। ধীরে ধীরে খাদ্যব্যবস্থায় যুক্ত করা হয়েছে বাণিজ্যিক কৃত্রিম খাবার (৪৫ শতাংশ আমিষ)। আর শেষে ব্যবহৃত হয়েছে গবেষণাগারে প্রস্তুত ৩৭ শতাংশ আমিষযুক্ত সম্পূরক খাদ্য। কৃত্রিম খাদ্য ব্যবহারের পরও মাছের যথেষ্ট বৃদ্ধি হয়েছে। মাছের পুষ্টিগুণেও কোনো নেতিবাচক পরিবর্তন দেখা যায়নি। গবেষকেরা মাছের পাকস্থলী পরীক্ষা করে মাছের খাদ্য গ্রহণ ও রূপান্তরের কার্যকারিতা বিশ্লেষণ করেন। এতে নিশ্চিত হওয়া গেছে, খাঁচায় চাষের ফলে পুষ্টিমানে কোনো ঘাটতি হয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, প্রতিটি খাঁচায় ৮০০ থেকে ৮৫০ কেজি মাছ উৎপাদিত হয়েছে। প্রতি ঘনমিটারে (খাঁচার গভীরতা দেড় মিটার ধরে) উৎপাদন হয়েছে ১৩ থেকে ১৭ কেজি, যা প্রতি হেক্টরে হিসাব করলে ২০ হাজার কেজি থেকেও বেশি হয়। অন্যদিকে পুকুর বা ঘেরে প্রচলিত পদ্ধতিতে গড়ে প্রতি হেক্টরে উৎপাদিত হয় ৬০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ কেজি। খাঁচায় চাষ করা মাছে প্রতি ১০০ গ্রামে গড় আমিষের পরিমাণ ১৯ গ্রাম, যেখানে প্রচলিত কোরালে এই পরিমাণ ১৭ গ্রাম।

গবেষকদের হিসাব অনুযায়ী, প্রতি ১ টাকা বিনিয়োগে গড়ে ১ টাকা ৭০ পয়সা পর্যন্ত আয় সম্ভব। প্রতিটি খাঁচা নির্মাণে খরচ হয়েছে ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা, যেটি প্রায় ১০ বছর পর্যন্ত ব্যবহারযোগ্য। একেক খাঁচায় একবারে ১ হাজার কেজি পর্যন্ত মাছ চাষ সম্ভব। বর্তমানে প্লাস্টিক দিয়ে খাঁচা তৈরি করা হলেও প্রান্তিক মৎস্যচাষিরা চাইলে বাঁশ বা সাধারণ জাল দিয়েও এটি তৈরি করতে পারবেন। এতে করে খরচ আরও কমানো সম্ভব।

অধ্যাপক মো. শাহজাহান বলেন, ‘এই চাষপদ্ধতিতে রোগবালাইয়ের ঝুঁকি কম, প্রাকৃতিক দুর্যোগেও কম ক্ষতি হয় এবং মাছ একে অপরকে খেয়ে ফেলার আশঙ্কাও থাকে না। প্রতি লিটার পানিতে ৩৫ মিলিগ্রাম লবণাক্ততা পর্যন্ত এই মাছ সহজে বেঁচে থাকতে পারে। তাই বাংলাদেশের উপকূলীয় নদী ও মোহনায় এই মাছ চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি নদীতে খাঁচা করা যাবে, যে কারণে জায়গার জন্য আলাদা টাকা খরচ করতে হবে না মাছচাষিকে।’ ‘এটি শুধু প্রযুক্তিগত অগ্রগতি নয় বরং উপকূলীয় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য নতুন জীবিকার পথ’—বললেন এই গবেষক।

Scroll to Top