দেশের অন্যান্য জেলায় তুলনায় সিলেটের আবহাওয়ার বৈশিষ্ঠ্য আলাদা। সিলেটে কখন আকাশ মেঘে ঢেকে যায়, আবার সেই মেঘ ফেটে কখন বৃষ্টি নামে কেউ বলতে পারবে না। আর সেটা বছর জুড়েই হয়, বৃষ্টি মৌসুম হলে তো আর কোনো কথাই নেই। এই মেঘ, এই বৃষ্টি খেলাই দিন কেটে যায়। আর সেই মেঘ-বৃষ্টির খেলাই এবার বেশ ভুগিয়েছে বাংলাদেশ ‘এ’ দল ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ ‘এ’ দলকে। বৃষ্টিই যেন দুই দলের অঘোষিত প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। প্রায় প্রতিদিনই দুই দল পড়েছে বৃষ্টি বাধায়।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সিরিজের প্রথম চারদিনের ম্যাচে বল মাঠে গড়িয়েছে মাত্র ২৪৫.২ ওভার। যেখানে চারদিনে খেলা হওয়ার কথা ছিল ৩৬০ ওভার। ম্যাচের অবশিষ্ট ১১৫ ওভার গেছে বৃষ্টির পেটে।
চারদিনে যতটুকু খেলা হয়েছে, তাতে স্বাগতিকদের চেয়ে ব্যাটে বলে এগিয়ে ছিল সফরকারী ক্যারিবীয় ‘এ’ দল। যেখানে বাংলাদেশের দুই ইনিংসে ফিফটি মাত্র ৩টি, সেখানে উইন্ডিজের এক ইনিংসেই ফিফটি করেছেন ৫ ব্যাটার। বোলিংয়েও দাপুটে বল করেছেন ক্যারিবীয় বোলাররা, বিশেষ করে জাইর ম্যাকেলিস্টার একাই ভুগিয়েছেন স্বাগতিক ব্যাটারদের। যেখানে বাংলাদেশের কোনো বোলারই ইনিংসে চার উইকেটেও পাননি সেখানে ম্যাকেলিস্টার পাঁচ উইকেট শিকার করে ফলোঅনে ফেলেছেন স্বাগতিকদের।
বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে ধারাবাহিক বলতে ছিলেন একমাত্র জাকের আলি অনিক। প্রথম ইনিংসে ৬৪ রানে অপরাজিত থাকা এই উইকেটরক্ষক ব্যাটার দ্বিতীয় ইনিংসেও ছিলেন ৩৬ রানে অপরাজিত।
ওপেনিংয়ে প্রথম ইনিংসে সুবিধা করতে পারেননি সাদমান ইসলাম, তবে দ্বিতীয় ইনিংসে সেটা পুষিয়ে নিয়েছেন ৬৪ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলে। আরেক ওপেনার জাকির হাসান প্রথম ইনিংসে ৩০ রান করলেও দ্বিতীয় ইনিংসে ফিরেছেন ডাক মেরে।
তিনে নামা সাইফ হাসান প্রথম ইনিংসে ৫ রানের জন্য মিস করেছিলেন সেঞ্চুরি, দ্বিতীয় ইনিংসে সেই সাইফ করেছেন ৬ রান। চারে নামা মাহমুদুল হাসান জয় দ্বিতীয় ইনিংসে কিছুটা উন্নতি করলেও ফিরেন মাত্র ২০ রানে। অধিনায়ক আফিফ হোসেনও ব্যর্থ হয়েছেন ইনিংস বড় করতে। গুদাকেশ মতির বলে ফিরেছেন মাত্র ৯ রান করে।
ফলোঅনে পড়া বাংলাদেশ ইনিংস হারের শঙ্কায় পড়ে, ১৩২ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে। ক্যারিবীয় বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে দলীয় সংগ্রহ একশো হতেই নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে স্বাগতিকরা।
দলের এমন বিপর্যয়ে প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসেও হাল ধরেন জাকের আলি অনিক। ঘরের মাঠে অষ্টম উইকেটে রিশাদ হোসেনকে নিয়ে ৫৫ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে ইনিংস হার থেকে দলকে জাকের। বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে তুলে ৭ উইকেটে ১৮৭ রান। দিন শেষে ৬৭ বলে ৩৬ রানে অপরাজিত থেকে ম্যাচ ড্র করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করেন জাকের। তাকে সঙ্গ দেওয়া রিশাদ করেন অপরাজিত ২০ রান।
উইন্ডিজের হয়ে ২টি করে উইকেট শিকার করেন গুদাকেশ মতি ও জাইর ম্যাকেলিস্টার। এছাড়া ১টি করে উইকেট নেন আকিম কেলভিন জর্ডান, রেইমন রেইফার ও কেভিন সিনক্লেইর।
এর আগে কির্ক ম্যাকেঞ্জি (৮৬), ত্যাগনারায়ণ চন্দরপল (৮৩), আলিক স্টিভেন আথানাজ (৮৫), জশুয়া ডি সিলভা (৭৭) এবং কেভিন ওয়াসল্ডের (৫৩*) পাঁচ ফিফটিতে ৭ উইকেটে ৪২৭ রানের ইনিংস ঘোষণা করে উইন্ডিজ ‘এ’ দল। বাংলাদেশের হয়ে ৩ উইকেট শিকার করেন মো. মুশফিক হাসান। নাইম হাসানের শিকার ২ আর ১টি করে উইকেট নেন সাইফ হাসান ও রিপন মন্ডল।
জবাবে বাংলাদেশ ‘এ’ দল সাইফ হাসান (৯৫) ও জাকের আলি অনিকের (৬৪*) জোড়া ফিফটিতে ২৬৪ রানের বেশি সংগ্রহ করতে পারেনি। ফলে ফলোঅনে পড়ে স্বাগতিকরা। ক্যারিবীয়দের হয়ে ৬০ রানে ৫ উইকেট শিকার করেন জাইর ম্যাকেলিস্টার। এছাড়া ২টি করে উইকেট শিকার করেন কেলভিন জর্ডান ও রেইমন রেইফার। একটি উইকেট পান ইয়ানিক কেপনার।
ফলাফল: ড্র
ম্যাচ সেরাঃ জাইর ম্যাকেলিস্টার (৫/৬০ ও ২/৪৮)।