বিজয় সরণিতে জুলাই শহীদের স্মরণে ‘গণমিনার’ | চ্যানেল আই অনলাইন

বিজয় সরণিতে জুলাই শহীদের স্মরণে ‘গণমিনার’ | চ্যানেল আই অনলাইন

রাজধানীর বিজয় সরণীতে জুলাই শহীদ স্মরণে ‘গণমিনার’ তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে আগের ম্যুরালের অবশিষ্ট অংশ উপড়ে ফেলা হয়েছে।

জানা যায়, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন শুক্রবার দিবাগত রাত দুইটা থেকে আগের ম্যুরালের অবশিষ্ট অংশ ভাঙ্গা শুরু করে। শুক্রবার বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আগের ম্যুরাল চত্বরে কাজের সুবিধার্থে কাপড় দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। সেখানকার বিভিন্ন খননজনিত কাজের জন্য একটি একটি এক্সক্যাভেটর (খননযন্ত্র) রাখা হয়েছে। নিমার্ণ শ্রমিকরা সেখানকার টাইলস উত্তোলনসহ অন্যান্য কাজ করছেন। এছাড়াও চত্বরে বেশকিছু রড উপড়ে পাশে স্তুপ করে রাখা হয়েছে।

নিমার্ণ এক শ্রমিক চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘রাত দুইটার থেকে কাজ শুরু করা হয়েছে, আমরা দুপুরের পরের থেকে কাজ শুরু করেছি।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের এক কর্মকর্তা চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘শুক্রবার দিবাগত রাত থেকে এই কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছে। করপোরেশনের একটি বোর্ড মিটিং আলোচনা হয়েছিল যে, এইখানে নতুন করে জুলাই অভ্যুত্থান কেন্দ্রিক একটি গণমিনার তৈরি করা হবে।’

গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মধুর ক্যান্টিনে এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মোহাম্মদ আজম বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে সংঘটিত গণপ্রতিরোধ ও আত্মত্যাগের স্মৃতিকে অম্লান রাখতে রাজধানীতে নির্মিত হচ্ছে ‘গণমিনার’। বীরউত্তম মেজর জেনারেল আজিজুর রহমান ও বিজয় সরণির মধ্যবর্তী সবুজ চত্বরে এই মিনার নির্মাণ করা হবে। এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে গণমানুষের সম্পৃক্ততার লক্ষ্যে গণচাঁদা সংগ্রহেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘৫ আগস্টের জয়ের মধ্য দিয়ে এ দেশের মানুষ মুক্তির আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করেছে। এই অভ্যুত্থানে শহীদ হয়েছেন ১ হাজার ৪০০ জন, আহত হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। তাদের স্মরণেই নির্মাণ করা হবে এই গণমিনার। এটি নির্মাণে গণমানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে গণচাঁদা সংগ্রহের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর ও অন্যান্য বিস্তারিত তথ্য শিগগিরই প্রকাশ করা হবে।’

মিনার নির্মাণের প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে জানিয়ে মোহাম্মদ আজম বলেন, আমরা ৫ আগস্টের মধ্যে এর একটি দৃশ্যমান রূপ দিতে চাই। তবে পূর্ণাঙ্গ নির্মাণকাজ চলতে থাকবে।

নির্মাতা ও স্থপতি কামার আহমাদ সাইমন বলেন, ‘লাখো মানুষের অংশগ্রহণে এবং হাজার হাজার শহীদের আত্মত্যাগে সংঘটিত এই অভ্যুত্থানকে আমরা স্মরণে রাখতে চাই মিনার নির্মাণের মাধ্যমে। মিনার একটি পাবলিক প্লেস, যেখানে সম্মান প্রদর্শন করা যায়; এটি জাদুঘরের মতো বদ্ধ নয়। প্রস্তাবিত মিনারটি মূলত দুটি উপাদানে গঠিত হবে– একটি দেয়াল এবং একটি এপিটাফ। এপিটাফে জাতিসংঘ স্বীকৃত ১ হাজার ৪০০ শহীদের নাম, জন্ম-মৃত্যুর সময়, পেশা এবং শহীদ হওয়ার স্থানের তথ্য খোদাই করে সংরক্ষণ করা হবে।’

জানা গেছে, গণমিনার বাস্তবায়ন কমিটি সর্বসম্মতিক্রমে বেশ কিছু কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে– ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে জমি বরাদ্দ ও প্রকৌশল সহায়তার আশ্বাস, জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদদের পরিচিতি সংরক্ষণ এবং গত ২৫০ বছরের গণপ্রতিরোধ ও লড়াইয়ের ইতিহাস চিত্র ও খোদাইয়ের মাধ্যমে এই স্মারকে তুলে ধরা। কমিটি জানিয়েছে, এই গণমিনার হবে একটি সর্বজনীন স্মরণস্থল, যা রাজনৈতিক বিভাজন অতিক্রম করে সব মত ও পথের মানুষের সম্মিলিত উদ্যোগে নির্মিত হবে।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর শেখ হাসিনার পতনের পর ‘মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব’ ম্যুরালটি বিক্ষোভকারীরা ভেঙে ফেলে এবং পরে এটি উপড়ে ফেলা হয়।

২০২৩ সালের ১০ নভেম্বর ঢাকার বিজয় সরণিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ঘিরে তৈরি ‘মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব’ প্রাঙ্গণ উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

Scroll to Top