বাণিজ্য ঘাটতি কাটিয়ে উঠতে সরকার পূর্ণ সক্ষমতা কাজে লাগাচ্ছে: বাণিজ্য উপদেষ্টা | চ্যানেল আই অনলাইন

বাণিজ্য ঘাটতি কাটিয়ে উঠতে সরকার পূর্ণ সক্ষমতা কাজে লাগাচ্ছে: বাণিজ্য উপদেষ্টা | চ্যানেল আই অনলাইন

এই খবরটি পডকাস্টে শুনুনঃ

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের এলডিসি উত্তরণের ক্ষেত্রে বাণিজ্য উদ্যোগে যাতে ঘাটতি দেখা না দেয় সেজন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি পূর্ণ সক্ষমতা কাজে লাগাচ্ছে উল্লেখ করে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন বলেছেন, আমি বলতে পারি আমাদের পূর্ণ সক্ষমতা কাজে লাগিয়ে আমরা প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিচ্ছি, যাতে আমাদের মসৃন উত্তরণ কৌশল (এসটিএস) বাণিজ্য উদ্যোগ ও সক্ষমতায় ঘাটতি না হয়।

শনিবার (১৫ মার্চ) সংবাদ সংস্থা বাসস এ প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৬ সালে বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণের মাঝে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি (ইপিএ), মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) এবং অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) স্বাক্ষরের লক্ষ্যে বাংলাদেশের অগ্রগতির সার্বিক দিক নিয়ে এক সাক্ষাৎকারে বাণিজ্য উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।

বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, সার্বিকভাবে সংশ্লিষ্ট সব দিক সামনে রেখে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

তিনি বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এফটিএ উইং, ডব্লিউটিও উইং এবং রফতানি উইং সমন্বিতভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এসব বিষয় বোঝার জন্য আমি সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডার, অর্থনীতিবিদ ও থিঙ্ক ট্যাঙ্কের সঙ্গে আলোচনা, কোরিয়া ও জাপান সফর এবং তাদের বাণিজ্য উপদেষ্টাদের সঙ্গেও বৈঠক করেছি।

তিনি বলেন, এফটিএ এবং পিটিএর মতো চুক্তির বিষয়ে আলোচনা খুব সহজ নয়, কারণ এগুলোর সাথে দ্বিপক্ষীয় স্বার্থ জড়িত।

শেখ বশিরউদ্দিন অবশ্য বলেন, গত পাঁচ বছরে যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেয়ার কথা ছিল, তা তারা করছেন। কিন্তু সেই সময় একেবারেই নষ্ট হয়েছে এবং অর্থনীতি সংকটে পড়তে বাধ্য হয়েছে।

বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বৈঠকের মাধ্যমে এ লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা যদি বাণিজ্য উদারীকরণ করি, তাহলে আমাদের সংবেদনশীলভাবে স্থানীয় বিনিয়োগের বিষয়টি বিবেচনা করার পাশাপাশি পরিণতির কথা বিবেচনা না করে কিছু না করার বিষয়টিও বিবেচনা করতে হবে।

বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ২০২৬ সালের নভেম্বরে দেশের এলডিসি উত্তরণের পর বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধা হারাবে। আগে আমরা পাঁচ বছর সময় পেয়েছিলাম, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা সেই সময়টা নষ্ট করেছি।

২০২০ সালের ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে স্বাক্ষরিত অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) যা ১ জুলাই ২০২২ তারিখে কার্যকর হয় তার কথা উল্লেখ করে বশির বলেন, বাংলাদেশ কেবল কাগজে-কলমে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। আমি যদি বলি এটা একেবারেই ভুয়া ছিল, তাহলে ভুল হবে না। কারণ, এরপর ভুটানের সঙ্গে বাণিজ্যের পরিমাণ কমে গিয়েছিল এবং পিটিএ শিরোনাম ছাড়া তাতে নতুন কিছু ছিল না।

তিনি বলেন, এটি একই শুল্ক কাঠামোতে একটি পিটিএ শিরোনাম দিয়ে করা হয়েছিল। পরে তারা যখন সরকারের দায়িত্ব নেয়, তখন পিটিএ এবং এফটিএ মোকাবেলা করা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তিনি বলেন, বাজার মূল্যের ওপর নির্ভর করে ৭০ থেকে ৯০ বিলিয়ন ডলার আমদানির বিপরীতে দেশের রফতানি সাধারণত বছরে ৫০ বিলিয়ন ডলারের বেশি হয়। আমরা উদার বাণিজ্যের দিকে যেতে চাই কারণ, আমরা কেবল রফতানিকে সমর্থন করতে চাই না, আমরা প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে আমদানি করতে চাই। কারণ, আমাদের আমদানি একটি বাস্তবতা।

বশির বলেন, দেশে ১৫০ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্যের পরিমাণ এত বেশি যে সরকার কীভাবে এটি অব্যাহত রাখবে তা নিয়ে প্রশ্নদেখা দিয়েছে।

এ জন্য আমাদের শুল্ক কাঠামো, কাস্টমস ডিউটি ঢেলে সাজাতে হবে এবং বিনিয়োগ সহজতর করতে হবে। কারণ, অর্থনীতিতে কর্মসংস্থানের অফুরন্ত সুযোগ সৃষ্টির একমাত্র উপায় হচ্ছে স্থানীয় বিনিয়োগ ও এফডিআই।

তিনি আরো বলেন, এফটিএ, পিটিএ, ইপিএ এবং সিইপিএ-তে সমস্ত সমস্যা মোকাবেলা করার সময় আমরা কীভাবে দেশে বিনিয়োগ-বান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে পারি তা নিয়ে কাজ করছি।

এই বিষয়গুলোকে তাত্ত্বিকভাবে উপলব্ধি করে এবং অর্থনৈতিক বৈশিষ্ট্যগুলোকে পূর্ণ মাত্রায় উপলব্ধি করে এবং একই সাথে বিশ্ব বাণিজ্যের পথ ও প্রবণতার পরিবর্তনকে উপলব্ধি করে বশির বলেন, সরকার পুঙ্খানুপুঙ্খ জ্ঞান নিয়ে এগিয়ে যেতে চায়।

কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে গত কয়েক বছরে কোনো চিন্তাভাবনা ও পরিকল্পনা ছিল না। এমনকি ন্যূনতম দায়িত্বের কোনো জায়গাও ছিল না। কিন্তু এখন যখন আমরা ২০২৬ সালে উদার অর্থনীতির জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি, তখন স্থানীয় বিনিয়োগ মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়তে পারে।

কর্মকর্তা, অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী নেতাদের মতে, গত বছরের ৫ আগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এক ডজন দেশের সঙ্গে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনায় এখনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখা যায়নি, যা ২০২৬ সালে এলডিসি ক্লাব থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের চ্যালেঞ্জ আরো বাড়িয়ে তুলতে পারে।

গত বছরের আগস্টে দায়িত্ব গ্রহণের পর অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে কর্তৃপক্ষ জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে ইপিএ আলোচনায় কেবল অগ্রগতি অর্জন করেছে। তবে ভারত, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, চীন এবং তুরস্কের মতো অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের আলোচনা এখনো গতি পায়নি।

আগামী বছরের নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় এলডিসি মর্যাদা থেকে উত্তরণের পর বাংলাদেশি রফতানি আর অনেক অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা পাবে না। তবে, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তিগুলো উত্তরণ হওয়ার পরেও এই সুবিধাগুলো ধরে রাখতে সহায়তা করতে পারে।

উত্তরণের জন্য প্রস্তুতি এবং একটি মসৃণ উত্তরণ কৌশল নিশ্চিত করার জন্য, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এফটিএ, পিটিএ, ইপিএ এবং বেশ কয়েকটি দেশ এবং ব্লকের সঙ্গে বিস্তৃত অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তিসহ (সিইপিএ) দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনার চেষ্টা করছে।

বর্তমানে, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশীয় মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল (সাফটা) এবং এশিয়া-প্যাসিফিক বাণিজ্য চুক্তি (এপিটিএ) থেকেও বাণিজ্য সুবিধা ভোগ করছে।

Scroll to Top