পদ্মা পারে ইউকে বিচ: মুখরিত দর্শনার্থীর পদচারণায়

পদ্মা পারে ইউকে বিচ: মুখরিত দর্শনার্থীর পদচারণায়

যতদূর দৃষ্টি যায় শুধু চোখ পরে মন জুড়ানো বিশাল জলরাশিতে। উপরে উন্মুক্ত খোলা নীল আকাশ, ভিন্ন ভিন্ন দৃশ্যপটে পদ্মা নদীর বুকে রঙ বদলায়। আর গোধূলী সন্ধ্যার অস্তমিত লাল সূর্যের আলোকছটার মোহনীয় মুহূর্ত নদীর কূলে ভ্রমণপ্রেমীদের মোহিত করে। এ যেন এক অনিন্দ্যসুন্দর চিত্র।

প্রতি বছর অবৈধ বালু উত্তোলনের কারণে যখন ভাঙতে থাকে পদ্মার পার, ঠিক এবার তার উল্টো। চলতি বছরের এখনো পদ্মার ভাঙন না হওয়ায় রাজবাড়ীর সদর উপজেলার উড়াকান্দা ও গোদারবাজার নামক এলাকায় পদ্মার ঢেউয়ের আমেজ দেখতে প্রতিদিন সমবেত হয় কয়েক হাজার দর্শনার্থী।

লোকমুখে স্থান দুইটি পরিচিত ‘গোদার বাজার’ এবং ‘ইউকে বিচ’ নামে। দিনভর নদীর বুক চিরে আসা ঢেউ আছড়ে পড়ে তীরে। সেই জলে পা ভিজিয়ে হাঁটেন ভ্রমণপিপাসুরা। অনেকে নৌকায় চড়ে ঢেউয়ের তালে তালে মেতে উঠেন ভ্রমণের আনন্দে।

স্বাধীনতার পর থেকে এসব অঞ্চল ছিল পদ্মার ভয়াবহ ভাঙন। উড়াকান্দা-বরাট-গোদার বাজার এলাকার ভাঙন দেখতে প্রতিদিন ভিড় করতো হাজার হাজার মানুষ।

 

পদ্মা পারে ইউকে বিচ: মুখরিত দর্শনার্থীর পদচারণায়

সেই ভাঙন কবলিত এলাকা এখন সুরক্ষিত। পদ্মা পারের বেড়িবাঁধ প্রসস্থ হয়েছে। সদর উপজেলার চরসেলিমপুর থেকে উড়াকান্দা কাঠুরিয়া স্কুল পর্যন্ত সিসি ব্লক দিয়ে নদীর তীররক্ষা করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ২০১৭ সালে ৩৬৭ কোটি টাকা ব্যয়ে এই কাজ শেষ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। সেই ভাঙন কবলিত এলাকা এখন সুরক্ষিত। ভাঙন কবলিত সেই এসব এলাকায় এখন উৎসবের আমেজ।

সরেজমিনে দেখা যায়, ভাঙন কবলিত এলাকায় উৎসবের আমেজ। কয়েক হাজার দর্শনার্থী নদী পারে বিনোদনের জন্য ভিড় করছেন। নদীর তীর মুখরিত হয়ে উঠেছে নানা বয়সী মানুষের পদচারণায়। নানার রঙের পুতুল, বেলুন, কাঠ-বাঁশ বেতের তৈরি আসবাবপত্র, মাছ ধরার সরঞ্জাম, মাটির হাঁড়িসহ বাহারী উপকরণ রয়েছে নদী পারে। এছাড়াও নাগরদোলাসহ রয়েছে নানা খেলার সরঞ্জাম।

কথা হয় নদী তীরে আসা দর্শনার্থী অনিক মাহমুদের সাথে। তিনি বলেন, ইউকে বিচ নামে নদী তীরে একটি বিনোদন কেন্দ্র গড়ে উঠেছে এটা অনেক আগে শুনেছি। ঈদের সময়ই আসার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু সম্ভব হয়নি। এখানে এসে সত্যি ভালো লাগছে। এক সময় কত ভাঙন ছিল এই এলাকায়। এখন কত সুরক্ষিত। নদী পাড়ের বিনোদন সত্যি ভালো লাগে। স্প্রিডবোটে চড়লাম, সূর্যস্ত দেখলাম। সত্যি অসাধারণ।


উড়াকান্দা এলাকা ষাটোর্ধ্ব মো. আফসার মোল্লা (৮৪) বলেন, নদী এক সময় অনেক দূর ছিল। ভাঙতে ভাঙনে খুব কাছে চলে আসে। কত বাড়ী ঘর যে নদীতে ভেঙে গিয়েছে তার হিসাব নেই। আওয়ামী লীগ সরকার বেঁড়িবাধ প্রশস্ত করে দিয়েছে। নদীর পার পাথর দিয়ে বেঁধে দিয়েছে। কয়েক বছর হল আমাদের এলাকার নদী আর ভাঙে না। অনেক মানুষ এখানে বেড়াতে আসেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল আমিন বলেন, আমরা গুণগত মান ঠিক রেখেরাজবাড়ী শহরকে রক্ষা করার জন্য কাজ করেছি। তবে সিসি ব্লক দিয়ে নদী তীর সংরক্ষণ কাজ মাঝে মাঝে মেরামত করা প্রয়োজন।

পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামিম বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ছিল রাজবাড়ী শহরকে রক্ষা করা। আমরা মন্ত্রণালয় সেই নির্দেশনা মেনে কাজ করেছি। ভাঙন কবলিত সেই এলাকায় এখন উৎসবের সুর সত্যি ভালো লাগছে জেনে। নদী ভাঙন রক্ষার আরও কাজ করতে হবে। আমরা চেষ্টা করছি গুণগত মান ঠিক রেখে কাজ করতে। নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধের ব্যাপারে প্রশাসনকে কঠোর হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছি।

Scroll to Top