দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় দলের দরজার বাইরে অলরাউন্ডার নাসির হোসেন। গত বিপিএল আসরে নাসিরকে দলে নিতে আগ্রহ দেখায়নি কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি। এবার নাসিরই হলেন ঢাকার ডমিনেটরসের নৌকার মাঝি। সামর্থ্যের সবটুকু নিংড়ে চেষ্টা করেন, আর তাতেই জয়ে বিপিএল শুরু তার দলের। উচ্ছ্বসিত নাসির বললেন, ম্যাচ জিতিয়ে আসার ব্যাপারে তার আত্মবিশ্বাস ছিল বেশ।
ভাল খেলা, ব্যাট ও বল হাতে জ্বলে ওঠাটা শুধুমাত্র দলের জয়ের জন্যই নয়, নাসিরের নিজের ক্যারিয়ারের জন্যও খুব গুরুত্বপূর্ণ। ভাল খেলতে পারলে যেমন আবার আলোয় ফেরা যাবে, ব্যর্থ হলে ততটাই অন্ধকারে তলিয়ে যেতে হবে। এমন ভাবনা দীর্ঘদিন ধরেই নাসিরের সঙ্গী। তবে এবারের বিপিএল আসর নাসির যেভাবে শুরু করলেন, এতেই বোঝা যায় নাসিরের ফেরার তাড়না কতটুকু।
২০২৩ বিপিএলে নিজেদের প্রথম ম্যাচে অলরাউন্ড পারফর্মেন্স দেখিয়ে ঢাকাকে জেতালেন অধিনায়ক নাসির হোসেন। বল হাতে ২৯ রান খরচায় দুই উইকেট শিকারের পর ব্যাটেও আলো ছড়ান নাসির। হার-না-মানা ৩৬ রানের ইনিংসে দলকে পৌঁছে দেন জয়ের বন্দরে।
দিলশান মুনাবিরার বিদায়ের পর নাসির ব্যাট হাতে উইকেটে আসেন, তখন স্কোরবোর্ডে ঢাকার সংগ্রহ ৮.৫ ওভারে ৫৬/৫। ইনিংসের শুরুটা ধীরগতির হলেও নাসির জুটি গড়ার চেষ্টা করেন। মোহাম্মদ মিঠুনের সঙ্গে ১৫ রানের পার্টনারশিপ, উসমান গনিকে নিয়ে আরও ৩৪ রান। এরপর আরিফুলের হককে নিয়ে তো চলে যান জয়ের তীরে। নাসির ম্যাচ শেষে জানালেন, তার পূর্ণ আত্মবিশ্বাস ছিল ম্যাচ জিতিয়ে আসার ব্যাপারে।
‘অবশ্যই ভালো লাগছে, আমি চেষ্টা করেছি ম্যাচটা শেষ করার জন্য। আমার আত্মবিশ্বাস ছিল যে আমি ম্যাচটা জেতাতে পারব। অবশ্যই, ম্যাচ জিতলে তো ভালো লাগবেই। যেকোন টুর্নামেন্টের শুরুর ১-২ ম্যাচ যেকোন ক্রিকেটারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। পারফর্ম করলে বা ফ্লো পেলে গোটা টুর্নামেন্ট সহজ হয়ে যায়।’
ব্যাটে-বলে পারফর্ম করা ছাড়াও ঢাকা ডমিনেটরসকে নেতৃত্ব দিয়ে ৬ উইকেটের জয় এনে দেন নাসির। দাপট দেখিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করে উচ্ছ্বসিত নাসির হোসেন,
‘প্লেয়ার হিসাবে আমি সবসময় চাই ম্যাচ জেতাতে। অধিনায়ক হিসাবে জিতালে সবচেয়ে বড় কথা জিতলে অনেক ভালো লাগে। মনে হয় আমার নেতৃত্বে ম্যাচ জিতেছে। অবশ্যই আমি চাই সবসময় ম্যাচ জেতানোর জন্য। শুধু বিপিএল বলেই না, আমি যেখানেই খেলি না কেনো চেষ্টা করি ম্যাচ জেতাতে। অবশ্যই ভালো লাগছে (হাসি)।’
টস জিতে তাসকিনের সঙ্গে বোলিং ওপেন করতে আসেন নাসির। নিজের বোলিং নিয়ে নাসিরের বিশ্বাস ছিল যে, তাকে বাঁহাতি ব্যাটাররা মারতে চেষ্টা করবে না। এই মন্ত্রে বেশ সফলও হয়েছেন। ইনিংসের চতুর্থ ওভারে বোল্ড করেন পাক মারকুটে ওপেনার শারজিল খানকে।
খুলনার বিপক্ষে ম্যাচে ওপেনিংয়ে দুই পেসার না এনে ওপেনার বোলার হিসেবে নাসিরের আবির্ভাব। নিজের এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে নাসিরের বক্তব্য,
‘আসলে আমার কাছে মনে হয়েছে উইকেটটা একটু নরম ছিল। আর বল একটু গ্রিপ করছিল তাই আমি আসছি। কারণ আমি জানতাম তামিম ভাই আমাকে ওভাবে চার্জ করবে না, যদি মারে তাহলে হয়তো মুনিম শাহরিয়ার আমাকে মারতে পারে। আমার ভালো করার আত্মবিশ্বাস ছিল, আমার কাছে এটাই সেরা সিদ্ধান্ত মনে হয়েছে যে পেস বোলারের জায়গায় যদি আমি বল করি তাহলে আমি তাদের চেয়ে ভালো করতে পারব। সেকারণেই আমি এসেছি।’
আমেরিকার ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি লিগে খেলে এসে নিজের উন্নতি বুঝতে পারছেন নাসির।
‘অবশ্যই, আমি যখন আমেরিকায় গিয়েছিলাম তখন ভেবেছিলাম এখানকার ক্রিকেটটা ওরকম ডেভেলপড হবে না। তবে যাবার পর আমার মাইন্ডসেট পুরোটাই বদলে গেছে। ওখানে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে প্লেয়ার আসে এবং খুব একটা ভালো টুর্নামেন্ট হয়। আমি ওখানে ১০ টার মত ম্যাচ খেলেছি, এটা অবশ্যই আমাকে বিপিএলের জন্য সাহায্য করেছে।’