নাকানি-চুবানি খাচ্ছেন যে সব হেভিওয়েট প্রার্থীরা | চ্যানেল আই অনলাইন

বায়েজিদ আহমেদ: ৭ জানুয়ারি যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই বাড়ছে উদ্বেগ আর উৎকন্ঠা। হ্যাঁ, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কথাই বলছি। দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি, জামায়াতসহ বিশদলীয় জোট নির্বাচন বর্জন করায় ভোটের মাঠে উত্তাপ অনেক কম। তারপরও গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় ক্ষমতায় যাওয়ার একমাত্র বৈধ সিঁড়ি হলো ‘ভোট’। তাই জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের এই পদ্ধতিকে কেন্দ্র করে হামলা-মামলা, উৎকন্ঠা, উৎসাহ-উদ্দীপনা, প্রচার-প্রচারণা এবং সংশয় দিনকে দিন বেড়েই চলেছে।

আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা সংসদীয় আসনগুলোতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নেওয়ায় ভোট একতরফা, বিনা ভোট কিংবা প্রতিদ্বন্দ্বীতাহীন হচ্ছে না। বরং অনেক আসনে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পাটি, জাসদ, ওয়ার্কার্স পাটি ও জেপি’র প্রার্থীদের চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। বলা যায় দলীয় প্রাথীদের আরামের ঘুম হারাম করে দিয়েছেন এসব প্রার্থী। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ২৬৫টি আসনে নৌকা প্রতীকে প্রার্থী দিয়েছে আওয়ামী লীগ। আর দলটির সাথে সমঝোতা করে ভোটে অংশ নেওয়া জাতীয় পার্টিকে ২৬টি আসন এবং ১৪ দলের শরিকদের ৬টি আসন ছেড়ে দিয়েছে শাসক দল আওয়ামী লীগ।

Bkash

নির্বাচনে মোট প্রার্থী ১ হাজার ৯৭০ জন। এর মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী ৪৩৬ জন। এবার ভোটে লড়ছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি ও উপদেষ্টা পরিষদের ৪১ জন প্রার্থী। এর মধ্যে কমপক্ষে ১৪-১৫ জন প্রার্থী হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের মুখে পড়েছেন। এ ছাড়া, অনেক হেভিওয়েট প্রার্থীর অবস্থা নাজুক হয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে। এসব প্রার্থীর ভরসা প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। কারণ তিনি নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন ও দলীয় প্রার্থীদের কড়া নির্দেশ দিয়েছেন ভোটে যেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের কোন রকম ‘ডিস্টার্ব’ করা না হয়।

৩০০ সংসদীয় আসনের মধ্যে কমপক্ষে ৩০ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ এবং ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থীকে নাকানি-চুবানি খাওয়াচ্ছেন। দলীয় হেভিওয়েট প্রার্থীরা যে সব জনপ্রিয় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন তাদের মধ্যে অন্যতমরা হলেন, হবিগঞ্জ-৪ আসনে (চুনারুঘাট-মাধবপুর) বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলীকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। এলাকায় প্রচুর রাস্তা-ঘাটের উন্নয়ন, কালভার্ট, ব্রিজ, সাঁকো নির্মাণ করে সাধারণ মানুষের মন জয় করেছেন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব থাকায় দেশে-বিদেশে আলোচনার জন্ম দিয়েছেন। এ ছাড়া ব্যারিস্টার সুমন ফুটবল একাডেমি তৈরি করে দেশব্যাপী ফ্রেন্ডশিপ ফুটবল খেলার মাধ্যমে জনপ্রিয়তা অর্জন করা ব্যারিস্টার সুমন ভোটের খেলায় প্রতিপক্ষকে কাটিয়ে দ্রত সামনে উঠে আসছেন। ভোট যুদ্ধে তিনি বিমান প্রতিমন্ত্রীর ঘুম হারাম করে দিয়েছেন।

Reneta June

তিনবারের এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী এবারও রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ি) আসনে আওয়ামী লীগের আলটিমেট চয়েস। এখানে বৈধ প্রার্থী ১১ জন। এর মধ্যে তাকে কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থীকে মোকাবিলা করতে হচ্ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনা ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহিকে (শারমিন আক্তার নিপা) নিয়ে। আরেক শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম রাব্বানি। কাঁচি প্রতীকের এই প্রার্থীকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আখতারুজ্জামান (ঈগল প্রতীক)। গোলাম রাব্বানি তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও মুন্ডুমালার পৌর মেয়র ছিলেন।

অন্যদিকে, আখতারুজ্জামান জেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও দেওপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের তিনবারের চেয়ারম্যান। রাজশাহী-১ আসন বিএনপি-জামায়াতের শক্ত ভোট ব্যাংক। তাদের বুঝিয়ে-সুঝিয়ে ভোট কেন্দ্রে যিনি নিয়ে আসতে পারবেন, তিনিই হাসবেন বিজয়ীর হাসি!

 

সম্প্রতি ইসলাম ধর্ম নিয়ে করা একটি অশোভন মন্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এরপর থেকেই ব্যাপক সমালোচনার মুখে মুন্সীগঞ্জ-৩ (সদর ও গজারিয়া) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী (নৌকা) ও দলের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মৃনাল কান্তি দাস। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এই আসনে তার শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার সদ্য পদত্যাগী মেয়র মোহাম্মদ ফয়সাল বিপ্লব। তিনি মুন্সীগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মহিউদ্দিনের বড় ছেলে। বিপ্লব লড়ছেন কাঁচি প্রতীকে। এখানে এই দুই প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছেন। এর মধ্যে সংঘাতে একজন কর্মী মারাও গেছেন। তাই এই আসনে মৃনাল ও বিপ্লবের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।

এক সময় জামায়াতের ভোট ব্যাংকখ্যাত পিরোজপুর-১ (নাজিরপুর, পিরোজপুর সদর ও ইন্দুরকানি) আসন এবার ব্যাপক আলোচনায়। এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম। তবে দলীয় মনোনয়ন লাভে ব্যর্থ হয়ে দলের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম এ আউয়াল ওরফে সাইদুর রহমান। পিরোজপুর আওয়ামী লীগ মূলত দুই ভাগে বিভক্ত। একটি অংশের নেতৃত্বে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজা এবং আরেক অংশের সাবেক এমপি আউয়াল। অভিযোগ আছে আউয়ালের বিশাল ক্যাডার বাহিনী আছে। তারাই আওয়ামী লীগের প্রার্থী শ ম রেজার বিরুদ্ধে কাজ করছেন।

কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ অনেক চেষ্টা করেও আউয়ালকে ভোট করা থেকে বিরত রাখতে পারেনি। এটি মুলত যুদ্ধাপরাধী ও জামায়াত নেতা মরহুম দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর নির্বাচনী এলাকা। তিনি এখান থেকে ২ বার ভোটে জিতেছেন (১৯৯৬ ও ২০০১ সালে)। এখানে তার অনুসারী এবং জামায়াতের ব্যাপক জনসমর্থন আছে। সুতরাং এই আসনে জামায়াত-বিএনপির ভোট বিরাট ফ্যাক্টর হিসেবে হবে। এদিকে, গত ২৭ ডিসেম্বর নাজিরপুরে এমএল স্কুল মাঠে নির্বাচনী সভায় আউয়ালের একটি বক্তব্য ভাইরাল হয়েছে। তিনি বলেছেন, ‘‘ভগবানও খেলেন, আর আমার নেত্রীও খেলেন। নেত্রী সারাদেশে যাদের জনপ্রিয় মনে করেছেন তাদের নৌকা প্রতীক দিয়েছেন। কিন্তু তার সব সিদ্ধান্ত সঠিক না।’’ বিদ্রোহী প্রার্থী এ কে এম এ আউয়ালের এই বক্তব্যের পর সারাদেশে নিন্দার ঝড় বইছে।

দোহার ও নবাবগঞ্জ নিয়ে গঠিত ঢাকা-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা এবং বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান ফজলুর রহমান। নৌকা প্রতীকের আলোচিত এই ব্যবসায়ীর প্রতিপক্ষ জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি সালমা ইসলাম। তিনি যুগান্তরের প্রকাশক, যমুনা টেলিভিশন এবং যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান। ভোটে লাঙ্গলের সাথে নৌকার লড়াইয়ের সম্ভাবনা আছে। তবে এলাকাটি বরাবরই বিএনপির দুর্গ। এখানে মরহুম ব্যারিস্টার নাজমূল হুদার পরিবারের জনসমর্থন আছে। সব মিলিয়ে জাতীয়তাবাদি ভোট এই আসনের ফলাফল নির্ধারণে ভূমিকা রাখতে পারে।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং সাবেক মন্ত্রী কামরুল ইসলাম প্রার্থী হয়েছেন ঢাকা-২ (কেরাণীগঞ্জ মডেল থানা, কামরাঙ্গীচর ও সাভারের একাংশ) আসনে। এখানে তার শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ডা. হাবিবুর রহমান। হাবিবের পক্ষে কাজ করছেন কামরুল ইসলামের দীর্ঘদিনের প্রতিদ্বন্দ্বী উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ। তাই কামরুলের জয়ী সহজ হবে বলে মনে হচ্ছেনা। এই আসনে অসংখ্য কওমি মাদ্রাসা রয়েছে। এসব মাদ্রাসার ভোট এবার গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হয়ে উঠতে পারে।

ঢাকা-৪ (শ্যামপুর ও কদমতলী) আসনে লড়ছেন তিন হেভিওয়েট প্রার্থী। এখানে বর্তমান এমপি জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা। জোটের স্বার্থে আওয়ামী লীগ গত দুটি নির্বাচনে তাকে ছাড় দেয়। এবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য সানজিদা খানম। তবে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র হিসেবে ভোটে আছেন প্রধানমন্ত্রীর সাবেক সহকারী একান্ত সচিব ড. আওলাদ হোসেন। তার প্রতীক ট্রাক। আওয়ামী লীগের ভোট সানজিদা ও আওলাদের মধ্যে ভাগ হলে, লাভ জাতীয় পার্টির প্রার্থী বাবলার। এই আসনে ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা। তবে চারবারের এমপি হওয়ায় লাঙ্গলের প্রার্থীর রয়েছে শক্ত ভিত। এদিকে, শ্যামপুর-কমদতলী এলাকায় প্রচুর কওমি মাদ্রাসা আছে। ধর্মীয় ভোট এই আসনের ফলাফলে নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

বর্তমান এবং সাবেক ৩ এমপির ত্রিমুখী লড়াইয়ে জমে উঠেছে নেত্রকোনা-৩ (কেন্দুয়া ও আটপাড়া) আসনের ভোটের মাঠ। এখানে নৌকার মাঝি হয়েছেন বর্তমান এমপি এবং আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল। তাকে বেকায়দায় ফেলতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটে দাঁড়িয়েছেন সাবেক দুই এমপি মঞ্জুর কাদের কোরাইশি (ঈগল) এবং ইফতিখার উদ্দিন তালুকদার পিন্টু (ট্রাক)। দীর্ঘদিন ধরে তারা সবাই কম-বেশি এলাকায় উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। তাই এবার হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সম্ভাবনা আছে।

মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া) আসনে নৌকার মাঝি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল। এই এলাকা মূলত বিএনপি-জামায়াতের ঘাটি। নাদেলের সাথে ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বীতা হবে তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী সাবেক এমপি এম এম শাহীন (সোনালী আঁশ) এবং কুলাউড়া উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান এবং আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যক্ষ এ কে এম সফি আহমদ সলমানের (ট্রাক প্রতীক) সাথে।

চাঁদপুর-৩ (চাঁদপুর সদর ও হাইমচর) কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ডা. দীপুমনি। তার মূল প্রতিদ্বন্দ্বী ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ড. মো. শামছুল হক ভূঁইয়া। চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ড. ভূঁইয়া এই আসনের সাবেক এমপি। এখানে অনেক বছর ধরে মনোনয়ন চেয়েও পাননি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী। সাবেক এই ছাত্রনেতার রয়েছে বিশাল জনসমর্থন। তার সমর্থকদের ভোট ফলাফল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

ফরিদপুর-১ (মধুখালী, বোয়ালমারী ও আলফাডাঙ্গা) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমানকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম)-এর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শাহ মো. আবু জাফর। দলীয় পরিচয়ের বাইওে মুক্তিযোদ্ধা এবং শ্রমিক নেতা হিসেবে শাহ জাফরের ভোট ব্যাংক আছে। ভোটের আগে বিএনপি ছেড়ে বিএনএম-তে (কিংস পার্টিখ্যাত) যোগ দিয়ে নোঙর প্রতীকে নির্বাচন করছেন। এ ছাড়া, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে (ঈগল প্রতীকে) আলোচনায় আছেন সাংবাদিক আরিফুর রহমান দোলন।

বিএনপির দুর্গ ফরিদপুর-৩ (সদর) আসন। এখানে দীর্ঘদিন এমপি ছিলেন বিএনপি নেতা চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ। এবারের নির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শামীম হক এই আসনে নৌকার প্রার্থী। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটে আছেন দৈনিক সমকাল ও চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের মালিক এবং এফবিসিসিআই-এর সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ। শামীম হকের বিদেশি নাগরিকত্ব রয়েছে দাবি করে তার বিরুদ্ধে আইনী চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছিলেন এ কে আজাদ। বিষয়টি নিয়ে জল কম ঘোলা হয়নি। দুই পক্ষের সমর্থকরা সংঘাতে লিপ্ত হয়ে সংবাদের শিরোনাম পর্যন্ত হয়েছেন। সবশেষ উচ্চ আদালতের নির্দেশনা পেয়ে ভোটের মাঠে টিকে আছেন শামীম হক। তবে সব কিছু ছাপিয়ে এই আসনে সংখ্যালঘু ভোট, চর এলাকায় কামাল ইউসুফের পরিবারের একচেটিয়া ভোট, সাবেক মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ ও তার সমর্থকদের ভোট এবং জামায়াতের ভোট ফ্যাক্টর হবে।

ফরিদপুর-৪ (ভাঙ্গা, চরভদ্রাসন ও সদরপুর উপজেলা) আসনে দুই হেভিওয়েট প্রার্থীর ঝগড়া বেশ পুরনো। এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী (নৌকা) দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ। তার বিরুদ্ধে ঈগল প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মজিবর রহমান ওরফে নিক্সন চৌধুরী। তিনি এলাকায় সব বয়সী মানুষরে কাছে ভীষণ জনপ্রিয়। এর আগে দুইবার ভোটের লড়াইয়ে জাফর উল্লাহকে কুপোকাত করেছেন মাদারীপুর থেকে ভাঙায় এসে নির্বাচন করা প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয় এই যুব নেতা। যদিও কাজী জাফর উল্লাহ এবং তার স্ত্রী নিলুফার জাফর এই আসনের সাবেক এমপি তারপরও ভোটের হিসাবে নিক্সন এগিয়ে।

নির্বাচনী সংঘাতে আলোচনায় মাদারীপুর-৩ আসন (কালকিনি, ডাসার ও সদরের একাংশ)। এখানে নৌকার প্রার্থী আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ। অন্যদিকে, ঈগল প্রতীক নিয়ে গোলাপকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি এবং কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি তাহমিনা বেগম। এই আসনের বেশিরভাগ আওয়ামী লীগের উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ঈগলের পক্ষে কাজ করছেন। তাহমিনা বেগমের পূঁজি তৃণমূলের জনসমর্থন আর তার সততা। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রে বেশ কয়েকটি বাড়ি কেনায় এবং দুদক তার সম্পত্তির খোঁজে নামার খবর গণমাধ্যমে প্রচার হ্ওয়ায় আলোচনার জন্ম দিয়েছিলেন ড. গোলাপ।

বিপদে আছেন জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু। নির্বাচনী সাঁকো পার হতে কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভেড়ামারা) আসনে নৌকার মাঝি হয়েছেন। তবে, ট্রাক প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ইনুকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক কামারুল আরেফিন। জেলা, থানা এবং পৌর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা এবার কামরুলকে সমর্থন দেওয়ায় বিপাকে পড়েছেন সাবেক তথ্যমন্ত্রী!

এদিকে, কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনে আওয়ামী লীগের আরেক হেভিওয়েট প্রার্থী এবং দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফের নৌকা প্রতীক চ্যালেঞ্জের মুখে। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কুষ্টিয়া পৌরসভার পাঁচবারের মেয়র আনোয়ার আলীর ছেলে তরুণ ক্রীড়া সংগঠক পারভেজ আনোয়ার তনু। তনুর প্রতীক ঈগল। এক সময়ে সর্বহারাদের ঘাটি হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি পাওয়া এই আসনে হানিফ এবং তনুর মধ্যে জোর লড়াইয়ের সম্ভাবনা আছে।

রাজশাহী-২ (সদর) আসনে লড়ছেন আলোচিত দুই প্রার্থী দুই ‘বাদশা’। ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশার দুর্গে হানা দিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি শফিকুর রহমান বাদশা। তিনি লড়ছেন কাঁচি প্রতীকে আর ফজলে হোসেন বাদশা নৌকা প্রতীকে। আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয়ভাবে জোটের প্রার্থী ফজলে হোসেনকে সমর্থন দিলেও স্থানীয় নেতা-কর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। তাদের অধিকাংশই শফিকুর রহমানের পক্ষে নামায় নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ হবে বলে ধারণা।

রংপুর-৩ (সদর) আসনে আওয়ামী লীগের সাথে সমঝোতা হওয়ায় এখানে লাঙলের প্রার্থী সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদের ছোট ভাই জি এম কাদের। তার সাথে প্রতিদ্বন্দ্বীতা হবে ঈগল প্রতীকের আনোয়ারুল ইসলাম রানীর। এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন তুষার কান্তি মন্ডল। পরে জাতীয় পার্টির সাথে সমঝোতা হওয়ায় আসনটি ছেড়ে দিতে হয়। তবে এখানে সংখ্যালঘু ভোট তুষারের পক্ষে। তাছাড়া, বর্তমান এমপি এরশাদের বড় ছেলে রাহগির আল মাহি ওরফে সাদ এরশাদ। তাকে মনোনয়ন না দিয়ে আসনটি নিজের কাছে রেখেছেন চাচা জি এম কাদের। ফলে, মন খারাপ সাদ এবং তার মা রওশন এরশাদের। তারা দু’জনই নির্বাচনে অংশ নেয়া থেকে বিরত আছেন। সাদের অনুসারি জাতীয় পার্টির কর্মীরা এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা

তৃতীয় লিঙ্গের রানীকে সমর্থন দেওয়ায় রংপুর-৩ আসনের ভোটের হিসাব পাল্টে যেতে পারে। পোস্টারে ‘আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী’ লিখে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছেন কিশোরগঞ্জ-৩ (করিমগঞ্জ-তাড়াইল) আসনে জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী মুজিবুল হক চুন্নু। দলের মহাসচিব এবং সাবেক মন্ত্রী চুন্নুকে মোকাবিলা করতে হচ্ছে চারজন আওয়ামী স্বতন্ত্র প্রার্থীকে। এরা হলেন নিউইয়র্ক আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহফুজুল হক (ঈগল), মেজর (অব.) নাসিমুল হক (কাঁচি), স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ব্যারিস্টার গোলাম কবির ভূঁইয়া (কেটলি), রুবেল মিয়া (ট্রাক)। এই আসনটি জোটের কারণে কেন্দ্রীয়ভাবে জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিলেও স্থানীয় আ্ওয়ামী লীগের একটি বড় অংশ চুন্নুর বিপক্ষে মাঠে আছেন।

এদিকে, ভয়ে আছেন বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে নৌকা প্রতীকে জাসদের প্রার্থী এ কে এম রেজাউল করিম তানসেন। এই আসনে আলোচিত ইউটিউবার এবং বাংলাদেশ কংগ্রেসের প্রার্থী আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলম লড়ছেন ডাব প্রতীকে। জোটের কারণে আসনটিতে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ জাসদের প্রার্থীকে সমর্থন দিলেও স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিভক্তি আছে। আ্ওয়ামী লীগের একটি গ্রুপ এবং সাধারণ মানুষ হিরো আলমের পক্ষে, আরেকটি গ্রুপ স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং বিএনপির চারবারের এমপি জিয়াউল হক মোল্লার ঈগল প্রতীকের পক্ষে। এখানে ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা। উল্লেখ্য, সংসদের উপ-নির্বাচনে হিরো আলম মাত্র ৮৩৪ ভোটের ব্যবধানে তানসেনের কাছে পরাজিত হন। তাই সবাই তাকিয়ে হিরো আলম, তানসেন এবং জিয়ার মধ্যে ভোটযুদ্ধ দেখতে।

বিপদে আছেন পিরোজপুর-২ (কাউখালী, ভান্ডারিয়া ও নেছারাবাদ) আসনে জাতীয় পার্টি-জেপি’র চেয়ারম্যান এবং সাবেক মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। তিনি নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করছেন। এই আসনে ঈগল প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটের মাঠে শক্ত অবস্থানে আছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন মহারাজ।

সুনামগঞ্জ-২ (দিরাই ও শাল্লা) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীকে লড়ছেন আবদুল্লাহ আল মাহমুদ ওরফে আল আমীন চৌধুরী। তিনি শাল্লা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান। তবে সব পরিচয় ছাপিয়ে আলোচনায় এসেছে তিনি পুলিশের আইজি আবদুল্লাহ আল মামুনের ভাই। মাহমুদের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে কাঁচি প্রতীকে লড়ছেন সাবেক রেলমন্ত্রী এবং ছয়বারের এমপি সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্ত্রী ড. জয়া সেনগুপ্ত। জয়া এই আসনে দুইবারের এমপি। এটি মূলত সেনবাবুর দুর্গ হিসেবে পরিচিত। এই আসনে নৌকা প্রতীকের বিজয়ী হওয়া কষ্টসাধ্য ব্যাপার। আর সংখ্যালঘু ভোটার বেশি থাকায় কাঁচি প্রতীকের পাল্লা ভারি বলে মনে হচ্ছে।

সুনামগঞ্জ-৪ আসনে নৌকার মাঝি হয়েছেন নির্বাচন কমিশনের সাবেক সচিব এবং পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান কবি ড. মোহাম্মদ সাদিক। ভোটের মাঠে তাকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন এই আসনের দুইবারের জাতীয় পার্টির এমপি পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ।

সিলেট-৬ (বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ। তাকে লড়তে হচ্ছে তৃণমূল বিএনপি’র চেয়ারম্যান শমসের মুবিন চৌধুরী এবং কানাডা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সারওয়ার হোসেনের সাথে। সোনালী আঁশ প্রতীকে নির্বাচন করা এই শমসের মুবিনের পক্ষে কাজ করছেন জেলা, উপজেলা এবং থানা আওয়ামী লীগের বড় একটি অংশ। আর স্থানীয় আওয়ামী লীগের আরেকটি অংশ কাজ করছে সাওয়ার হোসেনের ঈগল প্রতীকের পক্ষে। মূলত নাহিদ বাম রাজনীতি করে আওয়ামী লীগের পতাকাতলে আসা নেতা। তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের সাথে তার যোগাযোগ কম। তাই তার পক্ষে এবার ভোটে জেতা ভীষণ কঠিন।

এদিকে, দুই আসন থেকে মনোনয়ন কিনলেও জোটের সমীকরণে বরিশাল-২ (উজিরপুর ও বানারীপাড়া) আসন ভাগ্যে জুটেছে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের। এই আসনে মেননের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী তিনজন। এরা হলেন: সাবেক এমপি মনিরুল ইসলাম মনি (ঢেঁকি), শের-ই-বাংলা এ কে ফজলুল হকের নাতি এ কে ফাইয়াজুল হক (ঈগল) এবং কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী নকুল কুমার  (গামছা)। সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন সবশেষ ৩ বার জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন ঢাকা-৮ আসন থেকে। তার ঐ আসনে এবার নির্বাচন করছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দীন নাসিম। তাই ওয়ার্কার্স পার্টির প্রতীক হাতুড়ি থাকলেও ভোটে পার পেতে নৌকার মাঝি হয়েছেন বাম নেতা মেনন।

চট্টগ্রাম-১ (মীরসরাই) আসনে ভোটের হিসাব নিকাশ পাল্টে দিতে পারেন ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং মিরসরাই উপজেলার সাবেক জনপ্রিয় চেয়ারম্যান মো. গিয়াস উদ্দীন। এই আসনে নৌকা প্রতীক পেয়েছেন সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের ছেলে মাহবুব উর রহমান রুহেল। মোশাররফ হোসেনের পরিবারের দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় দাপট এবং মারমুখী আচরণে মানুষ অতিষ্ট। তাই সাধারণ ভোটাররা পরিবর্তন চান। চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ নেতা গিয়াস উদ্দীনের অভিযোগ তার সমর্থকদের ওপর হামলা, মামলা এবং হুমকি দিয়ে আসছেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর ক্যাডাররা। সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে গিয়াস এই আসনে ভোটের ফলাফল পাল্টে দিতে পারেন।

অন্যদিকে, গোপালগঞ্জ-১ (মুকসুদপুর ও কাশিয়ানী একাংশ) আসনে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং সাবেক মন্ত্রী ফারুক খান। প্রত্যেক নির্বাচনে অনায়াসে নির্বাচনী বৈতরণী পার হলেও এবার তাকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন মুকসুদপুর উপজেলার সদ্যপদত্যাগী চেয়ারম্যান কাবির মিয়া। নৌকার প্রার্থী ফারুক খান নি:সন্দেহে হেভিওয়েট। কিন্তু তিনি এলাকায় কম যান এবং জনবিচ্ছিন্ন। প্রতিবার বাধাহীনভাবে বিজয়ী হন বলে ভোটারদের কাছে তার জবাবদিহি করতে হয়না। এবার সেই ধারা ভাঙতে ঈগল প্রতীকে প্রার্থী হয়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা কাবির মিয়া।

নির্বাচন বিশেষজ্ঞ এবং ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের মুখ্য পরিচালক ড. আবদুল আলীমের মতে, এবার ৩০০ আসনের মধ্যে অন্তত ৩০ জন শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে হেভিওয়েট প্রার্থীকে টেক্কা দিচ্ছেন এবং সহিংসতায় জড়াচ্ছেন। এর অর্থ হলো অনেক আসনে সত্যিকার অর্থে প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছে। এই ধারাবাহিকতা ভোটের দিনও চলতে পারে বলে তার ধারণা। ফলে ভোট কিছুটা উৎসব মুখর হলেও হতে পারে। অন্যদিকে, বিএনপি ও সমমনা দল নির্বাচন বর্জন করায় ভোটারদের অনেকেই ভোট দিতে আসতে নাও পারেন। তবে, ড. আলীমের আশঙ্কা শক্তিশালী প্রার্থীরা ভোটের দিন সহিংসতা করলে সুষ্ঠু পরিবেশ ক্ষুণ্ণ হবে। এজন্য নির্বাচন কমিশন এবং প্রশাসনকে কঠোর হস্তক্ষেপ করতে হবে।

রাজনীতির জটিল সমীকরণে শেষ মূহুর্তে প্রার্থীরা দলীয়, নিরপেক্ষ এবং ফ্লোটিং ভোট কতটা টানতে পারছেন সেটি বিবেচ্য বিষয়। ভোটাররা দলীয় পরিচয়ের বাইরে গিয়ে সৎ ও যোগ্য প্রার্থীকে কীভাবে ভোট দেবেন সেটি বিবেচ্য বিষয়। সুতরাং যেসব প্রার্থী ভোটারদের বুঝিয়ে-সুজিয়ে শেষ মূহুর্তে নিজের পক্ষে কেন্দ্রে সুষ্ঠুভাবে ভোট দিতে আনতে পারবেন, তার মুখেই দেখা যাবে চওড়া হাসি!

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)

Scroll to Top