বাংলাদেশজুড়ে বিভিন্ন জমিদারবাড়ির তথ্যগুলো পাওয়া ভীষণ মুশকিল। পরিত্যক্ত হলে আরও মুশকিল। তবে এই বাড়ির অবস্থা অল্প কিছুদিন পর কী রকম হবে, সেটি নির্ণয় করা দুষ্কর নয়। সাহেববাড়িই লোকমুখে হয়ে গেছে সাববাড়ি। বেশি দূরে নয়। ঢাকার অদূরে নবাবগঞ্জের বক্তারনগরে। বিরান এই জমিদারবাড়ি চুপি চুপি জানিয়ে যায় ইতিহাস। সাক্ষী হয়ে থাকে অতীতদিনের। সেটাও কম করে হলেও ১৫০ বছরের।
বক্তারনগর গ্রামের এই জমিদারবাড়ির প্রতিষ্ঠাকাল, প্রতিষ্ঠাতার নাম কিছুই সঠিকভাবে জানা গেলো না। তবে বাড়ির নির্মানশৈলী দেখে এটিকে উনিশ ও বিশ শতকের বাড়ি বলেই অনুমেয়। রাস্তার অপর পাশের মসজিদটিরও সঠিক নির্মাণকাল জানা যায় না।
নিজের আগ্রহ থেকে কিছু তথ্য–উপাত্ত সংগ্রহ করার তাগিদ অনুভব করি। অল্প যা কিছু পাওয়া গেল, তা হলো, এই জমিদারবাড়ি সম্পর্কে মোহাম্মদ মাহমুদ আলি তাঁর ‘পূর্ববঙ্গের জমিদারবাড়ি’ বইতে লিখেছেন, আনুমানিক ১৭৫০ সালের দিকে শাহবুদ্দিন শাহ এই জমিদারির গোড়াপত্তন করেন। জমিদারবাড়ির আয়তন উল্লেখ করা রয়েছে পাঁচ বিঘা। সুলতান শাহবুদ্দিন শাহের মৃত্যুর পর জমিদারি পরিচালনা করেন তাঁর ছেলে। তবে বইতে তাঁর ছেলের নাম উল্লেখ নেই।
গালিব রহমান খান, পেশায় ব্যাংকার হলেও ইতিহাসের প্রতি তাঁর অনুরাগ আছে। তিনি নবাবগঞ্জের ইতিহাস নিয়ে কাজও করেছেন। গালিব রহমানের অনুসন্ধান থেকে যেটুকু জেনেছি, তা হলো, ফয়জুন্নেসা নামক এক নারী এই জমিদারির প্রতিষ্ঠাতা। পরে তাঁর পালিত ছেলে আলী জান মিয়া জমিদারি পান। তাঁর ছেলে সৈয়দ উবায়দুল্লা শিকারীপাড়া ইউনিয়নের প্রথম চেয়ারম্যান ছিলেন। উবায়দুল্লা সাহেবের ছেলে শাহাবুদ্দিন (খোকা মিয়া) সাহেব এই সম্পত্তির বর্তমান মালিক। অর্থাৎ এই এস্টেট এখনো মূল মালিকদের কাছে রয়েছে। তারপরও এটি কেন পরিত্যক্ত ও জীর্ণ, জানি না।
মসজিদের মূল দুয়ারে আমি একটি শিলালিপি দেখেছি। মসজিদের শিলালিপির ছবির পাঠোদ্ধার করেছেন তাহমিদাল জামি নামের একজন বিশেষজ্ঞ। সে মোতাবেক এই মসজিদের নির্মাতা ফয়জুন্নেসা নামক এক মহিলা। অর্থাৎ তথ্য–উপাত্তে মিল আছে। তবে শিলালিপির পাঠ অনুযায়ী ফয়জুন্নেসা তাঁর খালা জনাব হাসিনার কাছ থেকে জমিদারি লাভ করেন। শিলালিপির তথ্যমতে মসজিদের নির্মাণকাল ১৮৭০ সাল। তাহলে ধরে নিতে পারি, এই জমিদারবাড়ির নির্মাণ হয়তো সমসাময়িক কালের।
ঐতিহ্য ভ্রমণে একটু ইতিহাসে প্রবেশ করতেই হয়। ঢাকার অদূরে এই জমিদারবাড়ি দেখতে হলে কী করে যাবেন! ঢাকা থেকে নবাবগঞ্জে আসার অনেক পথ আছে। আমি কীভাবে এসেছি, সেটি বলছি। আমার বাসা যেহেতু মোহাম্মদপুরে, তাই মোহাম্মদপুর থেকে রিকশাযোগে বসিলায় গেছি।
সেখান থেকে সিএনজিতে চেপে বান্দুরা। তারপর বান্দুরা থেকে অটোরিকশায় বক্তারনগর গ্রামে পৌঁছেছি। পর্যটনস্থান হিসেবে বক্তারনগর গ্রাম খুব জনপ্রিয় কিংবা পরিচিত নয়। তাই অটোরিকশার চালককে কিছুটা বুঝিয়ে বলতে হয়, বক্তারনগর গ্রামের পুরোনো বাড়ি, ভাঙা বাড়ি, জমিদারবাড়ি দেখতে যাব। এ ছাড়া ঢাকার গুলিস্তান থেকে বাসে বান্দুরা অবধি আসা যায়।