রঞ্জু খন্দকার, ঢাকা : আইজুল ইসলাম (৩৫) ঢাকায় করোনার পর ২০২১ সাল থেকে প্যাডেলচালিত রিকশা চালান। তখন থেকে দিনে তাঁর আয় ছিল দুই হাজার টাকার মতো। এখন ঢাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল শুরুর পর রোজগার নেমেছে অর্ধেকে। কখনো কখনো তারও কম। দিনে তাঁর আয় দাঁড়িয়েছে ৮০০ থেকে হাজার টাকা।
আইজুল বলেন, করোনার সময় এমনও দিন গেছে আড়াই হাজারের বেশি টাকা ইনকাম করেছি। তাও পুরো দিন রিকশা না চালিয়েই। আর এখন আগের চেয়ে বেশি খাটলেও আয় কম। দিনে গড়ে ৭-৮ শ টাকা।
শহরে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল শুরুর কারণেই প্যাডেল রিকশার আয় কমে গেছে বলে মনে করেন আইজুল। তিনি বলেন, এখন যাত্রীরাও দ্রুত যেতে চান। তাই প্যাডেলের বদলে ব্যাটারির রিকশায়ই ওঠেন বেশি।
আইজুলের বাড়ি কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলায়। তাঁর বক্তব্যের সত্যতা পাওয়া যায় যাত্রী মোজাহিদুল ইসলাম ও সিফাত মণ্ডলের কথায়ও। তাঁদের ভাষ্য, এখন সবাই খুব ব্যস্ত। তাই তাড়াতাড়ি যাতায়াতে ব্যাটারিই ভরসা।
তবে ভিন্নচিত্রও আছে। শুধু দ্রুত যাতায়াতকেই গুরুত্ব দিতে নারাজ আরেক যাত্রী সৈয়দ বাকের। তিনি বলেন, ব্যাটারির রিকশা এখনো যথেষ্ট ভয়ের কারণ। এগুলোয় ভারসাম্য রক্ষা কঠিন। ফলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা বেশি।
রাজধানীর রামপুরা, বনশ্রী ও তেঁজগাও এলাকার কয়েকজন রিকশাচালকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঢাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল শুরুর পর থেকে গ্যারেজগুলোতেও এর প্রভাব পড়েছে। মহাজনের কাছ একটা প্যাডেল রিকশা নিলে দিনে জমা দিতে হয় এক শ টাকা, সেখানে ব্যাটারির রিকশার জমা চার শ। ব্যাটারিচালিত রিকশার যাত্রী বেশি, আয়ও বেশি।
শহিদুল ইসলাম নামের ব্যাটারিচালিত রিকশার একজন চালক বলেন, বেশির ভাগ গ্যারেজে প্যাডেলচালিত রিকশা এখন পড়ে থাকে
তবে প্যাডেল ও ব্যাটারির সমাধান হতে পারে বড় চাকার ‘মিশুক’ রিকশা। এগুলো দ্রুতও চলে, দুর্ঘটনার ঝুঁকিও কম।
সাইফুল ইসলাম নামে মিশুক রিকশার একজন চালক বলেন, সরকার যদি প্যাডেল ও ব্যাটারিচালিত রিকশাগুলোকে মিশুক রিকশায় রূপান্তরে সহযোগিতা করে তবে একদিকে তা যেমন সময়সাশ্রয়ী হবে, অন্যদিকে দুর্ঘটনার আশঙ্কাও কমবে।
কয়েকজন চালক ও যাত্রী সতর্ক করে বলেন, সরকার প্যাডেল ও ব্যাটারিচালিত সব রিকশাকে মোটা চাকার অটোরিকশায় পরিণত করতে গিয়ে লাইসেন্স চালু করতে পারে। এতে চালকদের মোটা অংকের টাকা গুণতে হতে পারে। ফলে রিকশাভাড়া বাড়বে। শেষমেষ বাড়তি ভাড়ার এই বোঝা গিয়ে চাপবে যাত্রীর ওপর।
এসব বিষয়ে লেখক মারুফ ইসলাম বলেন, রিকশা বাহনটা ঢাকায় আসে গত শতকের তিরিশের দশকে। কিন্তু ক্রমে তার রূপ পাল্টেছে। যৌলুশ পাল্টেছে। অবয়ব বদলেছে। হাতে টানা রিকশা থেকে পায়ে প্যাডেল চালিত হয়ে এখন সে ব্যাটারি রিকশা।
এই লেখকের ভাষ্য, প্রচণ্ড রোদের নিচে পায়ে প্যাডেল মেরে রিকশা চালাতে চালাতে কপালের ঘাম মুছছে চালক, দরদর করে ঘাম ঝরছে শরীর থেকে—এমন অমানবিক দৃশ্য এখন তিরোহিত। ব্যাটারির গোঁগোঁ শব্দ ঘাম থেকে মুক্তি দিয়েছে চালকদের।
কিন্তু রিকশার রূপান্তরের বাড়তি ভাড়ার চাপ যেন যাত্রীর ওপর না চাপে– এমন প্রত্যাশাই সবার।