বর্তমান সময়ে দেশের অপরাধজগতে ‘শয়তানের নিশ্বাস’ বা ‘ডেভিলস ব্রেথ’ বেশ আলোচিত বিষয়। এটি একধরনের ড্রাগ, যার নাম স্কোপোলামিন। এই ড্রাগের একটি বড় বিশেষত্ব হলো, ড্রাগটি মাদকাসক্তরা নিজের জন্য ব্যবহার করে না, তবে ধর্ষণ, ছিনতাই বা লুটসহ বিভিন্ন অপরাধের জন্য অপব্যবহার করে থাকে।
এই শয়তানের নিশ্বাস দিয়ে মানুষকে হিপনোটাইজ বা বশ করা হয়। আর একবার বশ করতে পারলে অপরাধীরা হাতিয়ে নেয় ব্যক্তির মূল্যবান জিনিসপত্র।
যেমন কেউ একজন আপনার কাছে এসে একটি কাগজ বা মোবাইলের মেসেজ দেখিয়ে বলল, “এই ঠিকানাটা কোথায়?” কিংবা কেউ অসহায়ের মতো বা অসুস্থতার ভান করে একটি প্রেসক্রিপশন দেখিয়ে বলল, “এই প্রেসক্রিপশনের ওষুধের নামটা কী? কোথায় পাওয়া যাবে?” স্বভাবতই আপনি মানবিকতা বোধ থেকে তাকে সাহায্য করতে যাবেন, আর তখনই মনে করবেন আপনি ‘শয়তানের শ্বাস’ নামক ড্রাগের ফাঁদে ফেঁসে গেলেন।

তখন আপনার মাথা ঝিমঝিম লাগবে এবং আপনি বুঝবেন না আপনি কী করছেন। আপনার নিজের প্রতি কোন নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। আপনাকে বলামাত্র আপনি নিজ থেকেই সব করবেন। আপনার কাছে থাকা টাকা-পয়সা, গহনা, মোবাইলসহ প্রয়োজনীয় দামি সবকিছু অনায়াসে দিয়ে দেবেন।
স্কোপোলামিন একধরনের সিনথেটিক ড্রাগ। এর মূল উপাদান আসে ধুতরা ফুল থেকে। ধুতরা ফুলের সঙ্গে আরও কিছু উপাদান যোগ করে তৈরি করা হয় এটি। তরল ও পাউডার দুই রকমেরই হয়।
চিকিৎসাবিজ্ঞানে স্কোপোলামিনের অনেক ব্যবহার আছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এটি ‘ট্রুথ সেরাম’ হিসেবে ব্যবহার করা হতো। ১৯৯০ সালের দিকে মূলত প্রসবকালীন অ্যামনেসিয়ার ব্যথা কমানোর জন্য এই ড্রাগটি ব্যবহার শুরু হয়। তারপর গতিজনিত অসুস্থতা এবং অপারেশন পরবর্তী বমি বমি ভাব এবং বমির চিকিৎসার জন্য ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এটি কখনো কখনো মুখের লালা কমাতে অস্ত্রোপচারের আগে ব্যবহার করা হয়।
তবে স্কোপোলামিনে আক্রান্ত ব্যক্তি এক থেকে তিন ঘণ্টার মধ্যে আবার স্বাভাবিক অবস্থায় চলে আসেন। তবে ওভারডোজ বা অতিরিক্ত মাত্রায় প্রয়োগ করা হলে স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হয়। স্কোপোলামিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে মুখ শুকিয়ে যাওয়া, ঝাপসা দেখা, মাথাব্যথা, অস্থির লাগতে থাকার মতো সমস্যা দেখা দেয়। তবে অতিরিক্ত মাত্রার ফলে হার্টবিট বা হৃৎস্পন্দন বেড়ে যাওয়া, চোখের মণি বড় হয়ে যাওয়া, খিঁচুনি ও অজ্ঞান হওয়ার মতো ঘটনাও ঘটে।