গত বছর জয়া আহসান ভারতের অন্যতম সম্মানজনক পুরস্কার ফিল্মফেয়ারের মঞ্চে যখন বাংলার ঐতিহ্য জামদানিকে ফিউশন আঙ্গিকে পরেছিলেন, তখন নেটিজেনরা দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে গিয়েছিলেন। কেউ দিয়েছেন বাহবা, তবে কটাক্ষের মাত্রা ছিলো বেশি।
তখন জয়া আহসান বলেছিলেন, ‘আমরা আমাদের ঐতিহ্যবাহী খাবার যদি ফিউশন করে খেতে পারি, যেমন পিঠা বা মাছ তো আমরা ফিউশন করে খাই। তাহলে আমাদের দেশের কস্টিউম কেন ফিউশন করে পরতে পারব না? কেউ তো দাসখত দেয়নি যে, জামদানি এভাবে পরা যাবে না, ওভাবে পরা যাবে না। জামদানি যদি স্কার্ট হয়, জ্যাকেট হয় তাহলে এভাবে পরলে সমস্যা কোথায়। আমরা যত ফিউশন করবো তত বাইরের দেশের কাছে উপস্থাপন করতে পারব। এটার চাহিদা অনেক বেড়ে যাবে। এসব ভেবেই আমি জামদানির এই ফিউশন করেছি। দেখুন, কয়েক বছর আগেও জামদানির এতটা চাহিদা ছিল না। কিন্তু এখন জামদানির এত চাহিদা যে, মনে হয় এটা শুধু একটি শাড়ি নয়, এটা অলংকারের মতো। একটা মেয়ে চায়, তার ঘরে একটা সুন্দর দামি জামদানি থাকুক।’
সে সময় জয়া আরও বলেছিলেন, তিনি সুযোগ পেলে আবারও জামদানিকে এমন ফিউশন আঙ্গিকে পরবেন। নিজের সেই কথা যে তিনি বেশ আমলে নিয়েছেন তা বোঝা যায় এই অভিনেত্রীর ফেসবুক পেজ ঘাটলেই। সম্প্রতি কলকাতার একটি অনুষ্ঠানেও তাকে নীল জামদানি পরতে দেখা গেছে। তবে ব্লাউজ ছিলো একেবারেই আলাদা ধরনের।
আর এবার তো বিশ্ববিখ্যাত চলচ্চিত্র উৎসবেই জামদানির ফিউশন নিয়ে হাজির জয়া আহসান। নেদারল্যান্ডের রটরড্যাম শহরে অনুষ্ঠিত ‘রটরড্যাম ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’কে চলচ্চিত্র বোদ্ধারা দারুণ সমাদর করেন। কারণ এই উৎসব মানের দিক থেকে দারুণ সচেতন।
গত ৩০ জানুয়ারি থেকে শুরু হবে রটরড্যাম চলচ্চিত্র উৎসব। এতে বিগ স্ক্রিন প্রতিযোগিতা বিভাগে লড়ছে জয়া আহসান অভিনীত কলকাতার সিনেমা ‘পুতুল নাচের ইতিকথা’। প্রখ্যাত সাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পুতুল নাচের ইতিকথা’ উপন্যাস অবলম্বনে সিনেমাটি বানিয়েছেন সুমন মুখোপাধ্যায়। রটরড্যাম উৎসবে সুযোগ পাওয়ার বিষয়ে সুমন বলেন, ‘রটরড্যাম উৎসবের মূল প্রতিযোগিতা বিভাগে জায়গা পাওয়াটা সত্যিই গর্বের। সারা বিশ্বের অন্যতম সেরা সিনেমাগুলো এখানে জায়গা করে নেয়।’
এই উৎসবে অংশ নিতেই জয়া আহসান পৌঁছে গেছেন নেদারল্যান্ডে। সেখান থেকেই একটি ছবি পোস্ট করেছেন এই অভিনেত্রী। তাতে দেখা যাচ্ছে একটি গাঢ় পেয়াজ রঙের জামদানির সঙ্গে একটি ভিন্নধর্মী ফ্লোরাল কাজ করা লং ব্লাউজ পরেছেন অভিনেত্রী। ফিল্মফেয়াওে জয়ার সাজ মিশ্র প্রতিক্রিয়া এনে দিলেও এবার কিন্তু তিনি সবার দারুণ প্রশংসা পাচ্ছেন। শুভাকাঙ্খিরা অভিনেত্রীকে ও তার সিনেমার জন্য শুভকামনা জানিয়েছেন।
গত শতকের ত্রিশের দশকের শেষের দিক থেকে চল্লিশের দশকের শুরু পর্যন্ত সময়টা উঠে আসবে পুতুল নাচের ইতিকথা সিনেমায়। মূল উপন্যাসে সময়টা আরও পেছনে ছিল। দর্শকের সামনে গল্পটা সহজবোধ্য করার জন্য খানিকটা এগিয়ে এনেছেন পরিচালক সুমন। এতে জয়া অভিনয় করেছেন কুসুম চরিত্রে। শশী চরিত্রে আবীর চট্টোপাধ্যায়। বিশেষ চরিত্রে দেখা যাবে পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় ও অনন্যা চট্টোপাধ্যায়কে।
জয়া আহসান বলেন, ‘আন্তর্জাতিক স্তরে এই ছবির যাত্রা যে এইভাবে শুরু হবে এটা কল্পনাতীত ছিল। আমার এত বছরের চলচ্চিত্রজীবনে এ এক বিশিষ্ট প্রাপ্তি। আর অবশ্যই এই ছবির সঙ্গে যুক্ত সমস্ত অভিনেত্রী-অভিনেতা, কলাকুশলীরা তাদের সবটা উজাড় করে দিয়েছেন এই ছবির নির্মাণে। তাদের জানাই আমার কুর্নিশ।’
২০২২ সালে শুরু হয়েছিল পুতুল নাচের ইতিকথা সিনেমার শুটিং। এ বছরের মে মাসে মানিক বন্দোপাধ্যায়ের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সিনেমাটি পশ্চিমবঙ্গে মুক্তি পাবে বলে জানিয়েছেন নির্মাতা।