শনিবার, (৭ জুন) এয়ার মেইল–এ প্রকাশিত এক বিশদ প্রতিবেদনে অভিনেতা ও সংগীতশিল্পী জ্যারেড লেটোর বিরুদ্ধে নয়জন নারী অশালীন এবং কিছু ক্ষেত্রে যৌন হয়রানির অভিযোগ এনেছেন। অভিযোগগুলোর বেশিরভাগই ২০০০ সালের গোড়ার দিককার সময়ের, এবং কিছু ঘটনায় অভিযোগকারী মেয়েরা সে সময় অপ্রাপ্তবয়স্ক ছিলেন বলেও দাবি করা হয়েছে।
জ্যারেড লেটোর পক্ষ থেকে একজন প্রতিনিধির মাধ্যমে এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত তিনি এ বিষয়ে কোনো ব্যক্তিগত বিবৃতি দেননি।
নারীদের করা অভিযোগে কী রয়েছে? একাধিক নারী জানিয়েছেন, লেটোর আচরণে একটি সুপরিচিত, দীর্ঘদিনের ‘প্যাটার্ন’ ছিল। অনেকে বলেন, যখন তারা প্রথম লেটোর সংস্পর্শে আসেন, তখন তারা কিশোরী ছিলেন।
একজন নারী জানান, তিনি ২০০৮ সালে মাত্র ১৬ বছর বয়সে লস অ্যাঞ্জেলসের উর্থ ক্যাফেতে লেটোর সঙ্গে পরিচিত হন। লেটো তার নম্বর নেন এবং পরে রাতে ফোন করে ‘বিরক্তিকর ও কুৎসিত কণ্ঠে’ কথা বলেন। “আমি বুঝতে পারিনি তিনি মাদকাসক্ত ছিলেন কি না” বলেন তিনি। তিনি আরও বলেন, “ফোনালাপ দ্রুতই যৌন বিষয়ে চলে যায়। তিনি জিজ্ঞেস করতেন, ‘তোমার কখনো প্রেমিক ছিল? তুমি কখনো … ?’” তার মা বলেন, তিনি ফোনালাপের কিছু অংশ শুনেছেন।
আরেকজন নারী বলেন, ২০০০ দশকের শুরুর দিকে তিনি লেটোর বাড়িতে এক পার্টিতে ছিলেন, তখন তার বয়স ১৮। তিনি দাবি করেন, পার্টিতে উপস্থিত আরও কমবয়সী মেয়েরা ছিলেন এবং সেখানে মূল আকর্ষণ ছিল মেয়েদের নগ্ন হয়ে সুইমিং পুলে নামানো। লেটোর টিম অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। নাইটলাইফ প্রোমোটার ব্রেন্ট বোল্টহাউস এয়ার মেইল–কে বলেন, তিনি কখনো সেখানে কাউকে নগ্ন স্নান করতে দেখেননি।
মডেল লরা লা রু বলেন, তিনি ২০০৮ সালে ১৬ বছর বয়সে একটি পশু অধিকার বিষয়ক অনুষ্ঠানে লেটোর সঙ্গে পরিচিত হন। পরে তারা ইমেইলে যোগাযোগ রাখেন এবং ২০০৯ সালে তিনি লেটোর স্টুডিওতে যান। লা রু বলেন, লেটো তাকে ফ্লার্ট করছিলেন ও নানা ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করছিলেন। পরের বছর ১৭ বছর বয়সে আবার দেখা করতে গেলে তিনি দাবি করেন, লেটো সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে তার সামনে এসে দাঁড়ান। তিনি বলেন, “আমি তখন ভাবছিলাম, সম্ভবত এটাই প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের স্বাভাবিক আচরণ।”
লেটোর প্রতিনিধি দাবি করেন, তাদের যোগাযোগ কখনোই যৌন ছিল না এবং বলেন, লা রু লেটোর ব্যক্তিগত সহকারী হওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন। তবে লা রু এই দাবি অস্বীকার করেন।
মিউজিক প্রডিউসার অ্যালি টেইলজ সম্প্রতি তার ২০১২ সালের এক ফেসবুক স্ট্যাটাস শেয়ার করে লেখেন, “আপনি তখনই সত্যিকার অর্থে এল.এ.-তে এসেছেন, যখন জ্যারেড লেটো ব্যাকস্টেজে স্কটিশ কিল্ট আর স্নো হ্যাট পরে আপনার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ার চেষ্টা করেন।”
ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে তিনি লেখেন,“আমি যখন ১৭, তখন এই বিকৃত লোকটি আমাকে আক্রমণ করে। সে জানত আমি অপ্রাপ্তবয়স্ক, তবু পরোয়া করেনি। এটি ছিল ভীতিকর, শিকারি আচরণ।”
লেটোর প্রতিনিধি বলেন, টেইলজের দাবি মিথ্যা এবং প্রমাণযোগ্যভাবে ভুল।
অন্য একজন নারী জানান, তিনি যখন অপ্রাপ্তবয়স্ক ছিলেন তখন লেটোর সঙ্গে টেক্সট চালাচালি শুরু করেন। ১৮ বছর বয়সে লেটোর বাড়িতে গিয়ে তিনি অভিযোগ করেন, লেটো হঠাৎই প্যান্ট খুলে নিজে নিজে হস্তমৈথুন শুরু করেন এবং তার হাতে নিজের যৌনাঙ্গ রাখেন ও থুথু ফেলতে বলেন।
আরেকজন জানান, ২০০৬ সালে তিনি ১৬ বছর বয়সে এক ক্যাফেতে লেটোর সঙ্গে দেখা করেন। তখন লেটোর সঙ্গে অ্যাশলি ওলসেনও ছিলেন। লেটো তার হাত চেপে ধরেন এবং পরে তার নম্বর নেন। লেটো পরে তাকে পার্টিতে আমন্ত্রণ জানান, যা তিনি প্রত্যাখ্যান করেন। কিন্তু লেটো রাতের বেলায় ফোন করতে থাকেন।
এখনও পর্যন্ত জ্যারেড লেটো এসব অভিযোগের বিষয়ে নিজে কিছু বলেননি। তার প্রতিনিধি বলেন, লেটো গত ৩৫ বছরের বেশি সময় ধরে মাদক বা অ্যালকোহল স্পর্শ করেননি, এবং এসব অভিযোগে কোনো সত্যতা নেই।
এয়ার মেইলে এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বিষয়টি নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা। –পিঙ্কভিলা