জিন্দাপার্কে প্রকৃতির সান্নিধ্যে ‘কৃষকের ঈদ আনন্দ’ | চ্যানেল আই অনলাইন

জিন্দাপার্কে প্রকৃতির সান্নিধ্যে ‘কৃষকের ঈদ আনন্দ’ | চ্যানেল আই অনলাইন

ঢাকা থেকে খুব দূরে নয়, একেবারে সন্নিকটে এবার ‘কৃষকের ঈদ আনন্দে’ মেতেছে গ্রামসুদ্ধ মানুষ। গ্রামের নাম জিন্দা। যে গ্রামের মানুষ তাদের জীবন জিইয়ে রেখেছে প্রকৃতিকে অটুট রেখে, প্রকৃতির সঙ্গে মিশে গিয়ে। যেখানে শহর বিস্তৃত হয়ে গিলে খাচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম, নিজস্ব গ্রামীণ প্রকৃতিকে ঠেলে দিচ্ছে ইট-কাঠ-পাথরে, সেখানে প্রকৃতির শুদ্ধতাকে ধরে রেখে একটি গ্রাম, গ্রামের মানুষ রচনা করেছে ভিন্ন রকম এক উদাহরণ। জিন্দগ্রামে প্রকৃতি যেমন স্বকীয়, স্বকীয় মানুষের বন্ধন, হৃদ্যতা।

জিন্দাগ্রাম ইতোমধ্যে ঢাকা শহরের মানুষের কাছে পরিচিত হয়ে উঠেছে জিন্দাপার্ক নামেই। অথচ এই জিন্দাগ্রামের আছে সুখ্যাতি, আছে সুনির্দিষ্ট ইতিহাস। এখানকার মানুষ, নিজের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য যেমন সোচ্চার, তেমনি সচেতন নিজের ভূ-প্রকৃতিকে আকড়ে থাকার বিষয়ে।

শাইখ সিরাজের পরিকল্পনা, পরিচালনা ও উপস্থাপনায় ‘কৃষকের ঈদ আনন্দ’ -এর ঈদ উল আজহার পর্ব ধারণ করা হয়েছে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার এই জিন্দা গ্রামে।

‘কৃষকের ঈদ আনন্দ’ -এর নেপথ্যের কারিগরদের একজন কর্মী হিসেবে আমি জানি কতটা চুলচেরা বিচার বিশ্লেষণ শেষে নির্মাতা শাইখ সিরাজ নির্ধারণ করেন ‘কৃষকের ঈদ আনন্দ’ এর মঞ্চ। তিনি তার গন্তব্য সম্পর্কে যেমন ওয়াকিবহাল, নিজের দর্শনগত জায়গাটিতেও থাকেন অটুট ও আপোষহীন। জিন্দাগ্রামের গড়ে ওঠার গল্পটি শোনার পর তিনি সিদ্ধান্ত নেন, এবারকার কৃষকের ঈদ আনন্দের মূলমঞ্চ হবে ‘জিন্দাগ্রাম’।

একটা সময় ছিল যখন টেলিভিশনে ঈদ অনুষ্ঠান মানেই শহুরে মানুষের হাসি কান্নার গল্প। ছিল তারকা শিল্পীদের অংশগ্রহণে নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মানুষকে বিনোদিত করার চেষ্টা। সেইসব ঈদ আয়োজনে ঠিক কোথায় সেই গ্রামের কৃষকটি, যার শ্রমে ঘামে উৎপাদিত ফসলে নিবারিত হয় মানুষের ক্ষুধা? তাকেও যুক্ত করতে হবে এই আনন্দধারায়। সেও এ সমাজের, এ দেশের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সেই চিন্তা থেকে সারাজীবন কৃষকের সামনে মাইক্রোফোন আর ক্যামেরা ধরে রাখা টেলিভিশন অনুষ্ঠান নির্মাতা শাইখ সিরাজ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন নিজেই বানাবেন কৃষক ও গ্রামীণ মানুষের জন্য তাদের অংশগ্রহণেই ঈদ অনুষ্ঠান ফার্মারস গেইম শো ‘কৃষকের ঈদ আনন্দ’।

বাকিটুকু ইতিহাস। শাইখ সিরাজের পরিকল্পনা, পরিচালনা ও উপস্থাপনায় ‘কৃষকের ঈদ আনন্দ’ সারাদেশের মানুষের প্রাণের অনুষ্ঠানে রূপ নেয়। কারণ এটাতে লেগে আছে মাটির সুবাস, শেকড়ের ঘ্রাণ! যে অনুষ্ঠানে সর্বাধিক দর্শকের চোখ আটকে থাকে এর নির্মাণ গুণে আর ভরপুর বিনোদনে।

যাইহোক, জিন্দাপার্কে আয়োজিত কৃষকের ঈদ আনন্দের সবচেয়ে অনুপ্রেরণাদায়ক বিষয় ছিল গ্রামের মানুষদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ। অনুষ্ঠানটি ধারণ করা হয়েছে ঈদের মাসখানিক আগে। অথচ যারা খেলা দেখতে এসেছেন সকলের গায়ে নতুন পোশাক, জামা-কাপড়। মনে হচ্ছিল জিন্দাগ্রামে বুঝি সেদিনই ঈদ। গ্রামের নারী-পুরুষ, শিশুরা এমনভাবে যুক্ত হয়ে গেল, যেন এটা তাদের নিজস্ব আয়োজন, প্রাণের উৎসব। কেউ মঞ্চ সাজাতে সাহায্য করছে, কেউ খেলার মাঠে দড়ি টানছে- এই দৃশ্যগুলো সত্যিই হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়ার মতো।

এবারকার আয়োজনে গেম প্ল্যানেও এসেছে ভিন্নতা। যেমন ‘বৃক্ষমানবের দৌঁড়’- যেখানে প্রতিযোগীরা গাছ সেজে দৌঁড় দিচ্ছে, যেন প্রকৃতির সাথে একাত্ম হয়ে আনন্দ করছে। ‘তৈলাক্ত কলাগাছ ঝুলে লেক পার হওয়া’ খেলাটি যেমন মজার, তেমনি ঝুঁকিপূর্ণ- একেকজন পড়ে যাচ্ছে লেকে, চারপাশে হইচই আর হাসির রোল। এছাড়াও আছে মজার মজার অনেক খেলা।

জিন্দাপার্কের স্থাপত্য, প্রাকৃতিক সাজ, আর ৫ হাজার গ্রামবাসীর সম্মিলিত প্রয়াস অনেক কিছু শেখায়। সেই ইতিহাসটাও তুলে ধরা হয়েছে খেলার ফাঁকে ফাঁকে- যেন নতুন প্রজন্ম জানে, ভালোবাসলে, এক হয়ে কাজ করলে কী অসাধ্য সাধন করা যায়।

‘কৃষকের ঈদ আনন্দ’ কৃষক সমাজের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের একটি মাধ্যম। এই আয়োজনের ভেতর দিয়ে দেখা যায়- এই বাংলার মাটি, মানুষ, সংস্কৃতি আর ঐতিহ্য কতটা প্রাণবন্ত, কতটা মূল্যবান।

কৃষকের ঈদ আনন্দ প্রচার হবে ঈদের পরদিন, বিকেল ৪টা ৩০ মিনিটে, শুধুই চ্যানেল আইতে।

Scroll to Top