দেশের উত্তর-পশ্চিম ও সীমান্তবর্তী জেলা আমের রাজধানী খ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জ। জেলার বাগানগুলোতে গাছে গাছে এখন মুকুলের সমারোহ। এরমধ্যে আগে বের হওয়া কিছু-কিছু গাছে মুকুল ফোটে আমের গুটিও বের হচ্ছে ।
আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় গত বছর আমের ফলনে বিপর্যয় হয়। বাগান মালিকরা বলছেন, এবারের মৌসুমে বাম্পার ফলনের স্বপ্ন দেখছেন তারা। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ফেব্রুয়ারির শেষ পর্যন্ত ফুটবে আমের মুকুল।
বিজ্ঞাপন
গত বছর মৌসুমের শুরুতে তাপমাত্রা কম থাকা এবং প্রাকৃতিকগতভাবে কম ফলনের বছর হিসেবে চাঁপাইনবাবগঞ্জে গাছে মুকুল এসেছিল মাত্র ৭০ থেকে ৭৩ ভাগ। যা এর আগের বছর ছিল প্রায় শত ভাগ। তবে চলতি বছরের আমগাছগুলো মুকুলে ভরে উঠবে আশা করছেন এখানকার আম চাষি ও বাগান মালিকরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমবাগান ছিল ৩৭ হাজার ৬০৪ হেক্টর। এবার ১০০ হেক্টর কমে হয়েছে ৩৭ হাজার ৫০৪ হেক্টর। এরমধ্যে সদর উপজেলায় আমবাগান রয়েছে ৫ হাজার ১৮০ হেক্টর, শিবগঞ্জ উপজেলায় ২০ হাজার ১০০ হেক্টর, গোমস্তাপুর উপজেলায় ৪ হাজার ২৪০ হেক্টর, নাচোল উপজেলায় ৪ হাজার ৩৫০ হেক্টর ও ভোলাহাট উপজেলায় ৩ হাজার ৬৩৪ হেক্টর জমিতে আম চাষাবাদ হচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাগান গুলোতে ঘুরে দেখা গেছে, বড় গাছের তুলনায় বাগানের ছোট-ছোট আম গাছগুলোতে মুকুল ফুটতে শুরু করেছে। বড় গাছগুলোয় মুকুল আসলেও ছোটগাছের তুলনায় কম। গাছে মুকুল আসার সঙ্গে সঙ্গে বাগানজুড়ে চাষিরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন পরিচর্যার কাজে।

শিবগঞ্জ উপজেলার আম চাষি শামীম বার্তা২৪.কমকে বলেন, মাঘ মাসেই মূলত মুকুল ফোটে বেশি। ফাল্গুন মাসের মুকুল খুব একটা ভালো হয় না। গত বছর ফাল্গুনে মুকুল ফোটায় আম ভালো হয়নি। এবার অন ইয়ার হবে আশা করছি। যার কারণে মুকুলও ভালো হবে আমও ভালো হবে। এখন আমরা আমের বাগানে পরিচর্যা শুরু করে দিয়েছি। যেগুলো গাছে মুকুল বের হয়নি আশা করছি কয়েকদিনের ভেতরে মুকুল বের হয়ে যাবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলাজুড়ে প্রায় শতাধিক ধরনের আম চাষাবাদ করেন কৃষকরা। তবে নাবিসহ অন্যান্য জাতের আম বাগান বাড়লেও গত ৪ বছরের ব্যবধানে জেলাটিতে প্রচলিত ৬টি আমের আবাদ কমেছে আশঙ্কাজনক হারে। সবচেয়ে বেশি আবাদ কমেছে খিরসাপাত আমের।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০২১-২২ অর্থ বছর ও ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের ব্যধানে ৬ধরনের প্রচলিত আমের আবাদ কমেছে ৪ হাজার ৪৮৯ হেক্টর জমিতে। এরমধ্যে গোপালভোগ ২৪৫ হেক্টর, লক্ষণভোগ ১৩৮ হেক্টর, খিরসাপাত ৩০৯৮ হেক্টর, ল্যাংড়া ৮৯ হেক্টর, ফজলি ৬২৯ হেক্টর, আশ্বিনা আম ২৯০ হেক্টর জমিতে আবাদ কমেছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের পুরাতন বাগানগুলোয় সবচেয়ে বেশি চাষাবাদ করা হয় এ ধরনের আমের। এসব আমে লাভজনক না হওয়ায় বাগানিরা গাছ কেটে ফেলছেন। পরে ওইসব জায়গা বিক্রি হচ্ছে ফ্লাট আকারে। সবচেয়ে বেশি আমবাগান কমেছে শিবগঞ্জ উপজেলায়।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক ড. পলাশ সরকার বলেন, ‘মুকুল ফোটার সময়সীমা হচ্ছে ফেব্রুয়ারির শেষ পর্যন্ত। তবে যদি ফেব্রুয়ারিতে তাপমাত্রা কমে যায় তাহলে মুকুল ফোটা ব্যাহত হবে। গতবছর যেসব ডালে মুকুল আসেনি সেসব ডালে এবছর আসবে। তবে এটা কম বেশি হতে পারে। আম বাগান কমে যাওয়ার ব্যাপারে পলাশ সরকার বলেন, বড় গাছগুলো কেটে ফেলে মোঠে ফসল চাষ করছেন বাগান মালিকরা। আবার অনেক জায়গা আবাসিকের জন্য বিক্রিও হচ্ছে। যার কারণে জেলায় আম বাগান কমেছে।