ঢাকা, ০৯ জুলাই – ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে মিথ্যা বানোয়াট, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, মানহানিকর ও অশালীন শিরোনামে ভুয়া সংবাদ প্রকাশ করার অভিযোগে সাংবাদিক ও গৃহপরিচারিকাসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে চিত্রনায়িকা পরীমনির করা মামলা বাতিল করেছে ট্রাইব্যুনাল।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. নূরে আলম সাইবার নিরাপত্তা আইনে করা মামলাটি বাতিলের আদেশ দেন বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)
বিষয়টি নিশ্চিত করে সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালের বেঞ্চ সহকারী মো. জুয়েল মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, এদিন মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য ছিল। তবে গত ২১ মে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করে। একইসঙ্গে নতুনভাবে ‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ’ জারি করে। পিংকি আক্তার ও চার সংবাদিকদের বিরুদ্ধে সাইবার নিরাপত্তা আইনের ২৮ ও ৩১ ধারার মামলা করেছিলেন পরীমনি। নতুন অধ্যাদেশে এই ধারা না থাকায় আদালত মামলাটি বাতিলের আদেশ দেন।
এর আগে, ২৩ এপ্রিল ‘ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে’ মানহানির অভিযোগে সাংবাদিক এবং গৃহপরিচারিকাসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন পরীমনি। পরে তার জবানবন্দি গ্রহণ করে ভাটারা থানর ওসিকে অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে ৮ জুলাই প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন বিচারক নুরে আলম।
মামলায় পরীমনির গৃহপরিচারিকা পিংকি আক্তার, অনলাইন নিউজ পোর্টাল সকল খবরের স্বত্ত্বাধিকারী মোরশেদ সুমন, প্রতিদিনের বাংলাদেশ এন্টারটেইনমেন্ট, নিউজ অ্যান্ড মিডিয়া ওয়েব সাইট পিপল নিউজ এবং অনলাইন নিউজ পোর্টাল ডিজিটাল খবরকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, আসামিরা বিভিন্ন মিথ্যা, মানহানিকর সংবাদ অপপ্রচার করে পরীমনিকে হেয় প্রতিপন্ন করে আসছেন। পিংকি আক্তার গত ৫ মে ‘কাদের এজেন্সির’ মাধ্যমে পরীমনির সন্তানদের দেখাশোনার জন্য যোগদান করেন। গত ২৭ মার্চ ২০ হাজার টাকাও নেয় পিংকি আক্তার। ২ এপ্রিল পিংকি আক্তার পরীমনির বাসা থেকে চলে যান। এরপর থেকে পরীমনির বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা, বানোয়াট এবং অশ্লীল তথ্য প্রচার ও প্রকাশ করে আসছে।
অভিযোগে আরও বলা হয়, পিংকি আক্তারের উদ্দেশ্যমূলক দেওয়া সাক্ষাৎকারের কারণে এবং অন্যান্য আসামিদের তা ফলাও করে প্রচার করার কারণে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছে এবং পরীমনি সমাজে হেয় প্রতিপন্ন হচ্ছেন। আসামিরা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে অসুদপায় অবলম্বন করে পরীমনির বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, ভুয়া ও অশ্লীল কথাবার্তা বলে। কুৎসামূলক ভিডিও তৈরি করে ৬ এপ্রিল প্রচার করে।
এর আগে, ২২ এপ্রিল পিংকি আক্তার বাদী হয়ে পরীমনিসহ দু্ইজনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন। আদালত অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে পিবিআইকে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন। মামলায় পরীমনির সাথে একই ফ্ল্যাটে বসবাসরত সৌরভ (২৮) নামের এক ব্যক্তিকেও আসামি করা হয়েছে।
নেত্রকোণো জেলা সদরের মৌগাতী ইউনিয়নের ফাদুলিয়া গ্রামের মো. মোজাম্মেলের মেয়ে পিংকি আক্তার অভিযোগ করে বলেন, কাদের এজেন্সি নামের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ২০২৪ সালের মার্চে তিনি পরীমনির বাসায় গৃহপরিচারিকা হিসেবে কাজ শুরু করেন। একটি বাচ্চাকে দেখাশোনার দায়িত্ব নিতে তাকে নিয়োগ দেওয়া হলেও তাকে দুটি বাচ্চার দায়িত্ব পালন করতে হতো। এ ছাড়াও দিনে-রাতে বাসার রান্নার কাজও করতে হতো বলে অভিযোগ করেন তিনি।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, গত ২ এপ্রিল দুপুর ১টার দিকে পরীমনি তার মেকআপ রুমে গিয়ে মাদক গ্রহণ করেন। পরে বাচ্চার রুমে এসে পিংকি আক্তারকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করেন। গালিগালাজ কেন করছেন, জানতে চাইলে পরীমনি বলেন ‘তুই আমার বাচ্চার জন্য দুধ কেন তৈরি করছিস, এখন ওকে সলিড খাবার দিবি। পিংকি বলেন, বাচ্চার খাওয়ার রুটিন অনুসারে এখন দুধ খাওয়ানোর কথা, তাই আমি দুধ তৈরি করেছি।
এ সময় পরীমনি ক্ষিপ্ত হয়ে মাথায়, মুখে ও চোখে এলোপাতাড়িভাবে চড়-থাপ্পর মারলে একপর্যায়ে তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন। সে সময় সৌরভও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি নির্যাতনের জন্য পরীমনিকে উৎসাহিত করেন। পরে পিংকি ৯৯৯ এ কল করে পুলিশের সহায়তায় ঘটনাস্থল থেকে নিরাপদে বের হয়ে যান এবং কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।
এ ঘটনায় পিংকি আক্তার ৪ এপ্রিল ভাটারা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। কিন্তু কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় আদালতে মামলা দায়ের করেন বলে এজাহারে উল্লেখ করেছেন। তবে গত ৪ এপ্রিল ভাটারা থানায় গিয়ে পিংকি অভিযোগ করেন, বাচ্চা পড়ে যাওয়ায় পরীমনি তাকে মারধর করেছেন।
এনএন/ ০৯ জুলাই ২০২৫