‘গাজায় শিশু মরছে, যুক্তরাজ্য নীরব কেন?’ বিশ্ব তারকাদের খোলা চিঠি | চ্যানেল আই অনলাইন

‘গাজায় শিশু মরছে, যুক্তরাজ্য নীরব কেন?’ বিশ্ব তারকাদের খোলা চিঠি | চ্যানেল আই অনলাইন

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের কাছেতিন শতাধিক জনপরিচিত ব্যক্তি একটি খোলা চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন, যেখানে তারা গাজায় চলমান মানবিক বিপর্যয়ে যুক্তরাজ্যের ‘সহযোগিতা’ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন।

চিঠিটি যুক্তরাজ্যভিত্তিক দাতব্য সংস্থা চুজ লাভ-এর উদ্যোগে প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বরাবর পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন বিনোদন, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও একাডেমিয়ার বহু খ্যাতনামা ব্যক্তি।

যাদের মধ্যে রয়েছেন বেনেডিক্ট কাম্বারব্যাচ, দুয়া লিপা, অ্যানি লেনক্স, টিল্ডা সুইন্টন, রিজ আহমেদ, রেবেকা হল, স্টিভ কুগান, গ্যারি লিনেকার, মাক্সিন পিক, মিসান হ্যারিমান, জেমাইমা খানসহ আরও অনেকে।

চিঠিতে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে লেখা হয়েছে, “আমরা আপনাকে অনতিবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানাই, যাতে গাজায় যে ভয়াবহতা চলছে, তার অংশীদারিত্ব থেকে যুক্তরাজ্য সরে আসে। এই মুহূর্তে গাজায় শিশুদের না খেয়ে মরতে হচ্ছে, অথচ খাবার ও ওষুধ সীমান্তে মাত্র কিছু দূরেই আটকে রয়েছে। শুধু কথায় শিশুদের পেট ভরবে না – আমাদের কর্ম দরকার। আপনি যখন এই চিঠি পড়ছেন, তখন গাজার ২১ লাখ মানুষই অনাহারের ঝুঁকিতে রয়েছে।”

আরবদের মধ্যে যাঁরা এই চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন তাদের মধ্যে আছেন সার্জন ড. ঘাসসান আবু সিত্তা, চলচ্চিত্র নির্মাতা ফারাহ নাবুলসি এবং ওয়াদ আল কাতেব।

চিঠিতে আরও বলা হয়, “মা, বাবা, শিশু, বৃদ্ধ – পুরো একটি জনগোষ্ঠীকে পৃথিবীর চোখের সামনেই অনাহারে মরতে হচ্ছে। ২৯০,০০০ শিশু মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে – ৭০ দিনের বেশি সময় ধরে ইসরায়েলি সরকারের অবরোধে অনাহারে তারা।”

চিঠিতে ব্রিটিশ সরকারকে ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করারও আহ্বান জানানো হয়েছে। পাশাপাশি, সাহায্য সংস্থাগুলোর জন্য গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশের অনুমতি এবং যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতায় যুক্তরাজ্যের ভূমিকা রাখারও দাবি জানানো হয়েছে। মূলত এই তিনটি দাবিই চিঠিতে গুরুত্বের সঙ্গে বলা হয়েছে।

চুজ লাভ-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী জোসি নটন চিঠিতে বলেন, “যখন ফিলিস্তিনি শিশুদের হত্যা করা হচ্ছে, তখন শুধু কথায় তাদের জীবন রক্ষা সম্ভব নয়, কথায় তাদের খালি পেট ভরবে না। আমাদের এখনই কিয়ার স্টারমারের কাছ থেকে পদক্ষেপ দরকার। এর মানে হলো সব অস্ত্র বিক্রি ও লাইসেন্স বন্ধ করা, নিশ্চিত করা যে স্বীকৃত মানবিক সংস্থাগুলো গাজায় পৌঁছাতে পারবে। এসব ভয়াবহতা থামাতে যা কিছু সম্ভব, তাই করা উচিত। পদক্ষেপ নেওয়া একটি সিদ্ধান্ত – যেমন নিষ্ক্রিয় থাকা একটি সিদ্ধান্ত। ইতিহাস মনে রাখবে, আমরা এই মুহূর্তে কী করেছি। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করছি, তিনি যেন সঠিক সিদ্ধান্তটি নেন।”

চিঠির শেষ অংশে লেখা হয়েছে, “নৈতিক স্পষ্টতার মুহূর্তেই ইতিহাস রচিত হয়। এটি তেমন একটি মুহূর্ত। বিশ্ব দেখছে এবং এই ইতিহাস ভুলবে না। গাজার শিশুরা আর এক মুহূর্তও অপেক্ষা করতে পারে না। প্রধানমন্ত্রী, আপনি কী সিদ্ধান্ত নেবেন? যুদ্ধাপরাধে সহায়তা, না সাহসিকতার সঙ্গে পদক্ষেপ নেওয়া?”

ইসরায়েলের গাজায় চালানো যুদ্ধে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৫৪,০৮৪ ফিলিস্তিনি নিহত ও ১,২৩,৩০৮ জন আহত হয়েছেন– গেল বুধবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই তথ্য জানায়।

ইসরায়েল ১৮ মার্চ সাময়িক যুদ্ধবিরতি ভেঙে আবার সামরিক অভিযান শুরু করে। এর পর থেকে আরও ৩,৯২৪ জন নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলি বাহিনী এই আক্রমণ শুরু করে যখন হামাস-নেতৃত্বাধীন একটি দল ৭ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে দক্ষিণ ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে ১,২০০ জনকে হত্যা করে। –দ্য ন্যাশনাল

Scroll to Top