গণঅভ্যুত্থানে চিরতরে দৃষ্টি হারানোদের রক্তস্নাত ভয়াবহতার সাক্ষ্য দিলেন চিকিৎসক | চ্যানেল আই অনলাইন

গণঅভ্যুত্থানে চিরতরে দৃষ্টি হারানোদের রক্তস্নাত ভয়াবহতার সাক্ষ্য দিলেন চিকিৎসক | চ্যানেল আই অনলাইন

চিরতরে এক চোখের দৃষ্টি হারানো ৪৯৩ জন ও দুই চোখের দৃষ্টি হারানো ১১ জন রোগীসহ চোখে পিলেট ও বুলেট বিদ্ধ রোগীদের রক্তস্নাত ভয়াবহতার সাক্ষ্য দিলেন চিকিৎসক।

সোমবার (২৫ আগস্ট) বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাক্ষী হয়ে জবানবন্দি দেন জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ড. জাকিয়া সুলতানা নিলা।

সাক্ষীর জবানবন্দিতে এই চিকিৎসক বলেন, ২০২৪ সালের ১৭ জুলাই থেকে আমাদের হাসপাতালে রোগী আসা শুরু করে। প্রথম দিন ৫ জন রোগী পেয়েছিলাম যারা মেটালিক পিলেট ও বুলেট বিদ্ধ ছিলো। ১৮ জুলাই ছিল রক্তস্নাত এক দিন। সেদিন আনুমানিক ১০০ রোগী ভর্তি হয়েছিলো। এর বাইরে আরও শতাধিক রোগীকে ঐদিন চিকিৎসা দেয়া হয়। ঐদিন দুপুরে আমি ইমার্জেন্সির সামনে এসে এক ভয়াবহ চিত্র দেখি। ১৪ থেকে ২৫ বছর বয়সী শতাধিক রোগীর একটা বড় অংশের কেউ এক চোখ, কেউ তাদের রক্তে ভাসা দু চোখ ধরে ছিলেন। তাদের চেহারা রক্তস্নাত ছিল।

সাক্ষীর জবানবন্দিতে ড. জাকিয়া সুলতানা নিলা বলেন, ১৮ জুলাই ১০ টি ওটি টেবিলে রাত ৯ টা পর্যন্ত অপারেশন চলে। ১৯ জুলাই একই রকম চিত্র দেখতে পাই। অধিকাংশই মেটালিক পিলেট ও কেউ কেউ বুলেট দ্বারা আহত ছিলেন। আহতের ধরনে ছিলো কারো কর্নিয়া ছিদ্র, কারো চোখের সাদা অংশ ছিদ্র কিংবা কারো চোখ ফেটে যাওয়া অবস্থায়।

২০২৪ সালের ৪,৫,৬ আগস্ট অনেক বেশি রোগী রিসিভ করেন জানিয়ে এই চিকিৎসক তার জবানবন্দিতে বলেন, আমাদের হাসপাতালে আসা রোগীদের মধ্যে এক চোখে চিরতরে দৃষ্টি হারিয়েছেন এমন রোগীর সংখ্যা ৪৯৩ জন। দুই চোখে চিরতরে দৃষ্টি হারিয়েছেন এমন রোগীর সংখ্যা ১১ জন। দুই চোখে গুরুতর দৃষ্টি স্বল্পতায় ভুগছেন এমন রোগীর সংখ্যা ২৮ জন। আর এক চোখে গুরুতর দৃষ্টি স্বল্পতায় ভুগছেন এমন রোগীর সংখ্যা ৪৭ জন।

অধিকাংশ রোগী নিজেদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে ঐ সময় নিজের ডাক নাম ব্যাবহার করেছেন জানিয়ে এই চিকিৎসক বলেন, রোগীরা তাদের ভুল মোবাইল নম্বর ও আইডি কার্ড নাম্বার দিত নিরাপত্তার কথা ভেবে বা কৌশল অবলম্বন করতে।

আজ ট্র‍াইব্যুনালে প্রসিকিউটসন পক্ষে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও গাজী এস এইচ তামিম। এইসময় অপর প্রসিকিউটররা উপস্থিত ছিলেন। এদিকে এই মামলায় পলাতক শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে জেরায় ছিলেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন। এদিকে এই মামলায় গ্রেফতার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন আজ সাক্ষ্য গ্রহণের সময় কাঠগড়ায় হাজির ছিলেন। তার পক্ষে ছিলেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলায় শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। গতকাল পর্যন্ত এই মামলায় ১৯ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ ও জেরা শেষ হয়েছে।

এই মামলাটি ছাড়াও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে গুম-খুনের ঘটনায় তাকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হয়েছে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায়।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, এর দলীয় ক্যাডার ও সরকারের অনুগত প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে একের পর এক অভিযোগ জমা পড়ে। দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এসব অপরাধের বিচার কাজ চলছে।

Scroll to Top