রমজানের এক ফজরের নির্মল ভোরে। ঢাকার বাইতুল মোকাররম মসজিদের সামনের রাস্তাটিও যেন স্তব্ধ। ভেতরে সারিবদ্ধ মুসল্লিদের মাঝে এক বৃদ্ধা ধীরে, গভীর মমতায় কোরআন শরিফ খুললেন। আঙুল দিয়ে স্পর্শ করার আগে কপালে ঠেকালেন, চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ নতমস্তকে রইলেন, তারপর শুরু করলেন তিলাওয়াত। এ দৃশ্যটি শুধু প্রার্থনা নয়; এটি এক গভীর শ্রদ্ধা, অপরিসীম ভালোবাসা আর কোরআন তিলাওয়াতের আদব পালনের এক জীবন্ত উদাহরণ। এই আদব বা শিষ্টাচারই মহান আল্লাহর কালামের প্রতি আমাদের অন্তরের প্রকৃত সম্মান ও বিশ্বাসের প্রতিফলন।
কোরআন তিলাওয়াতের আদব: কেন এই পবিত্রতা ও শিষ্টাচার অপরিহার্য?
আল্লাহ তায়ালার বাণী শুধু পাঠ বা শোনার জন্যই নয়; এটি হৃদয় দিয়ে গ্রহণ, জীবনে বাস্তবায়ন এবং সর্বোপরি এক গভীর আধ্যাত্মিক সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যম। পবিত্র কোরআন নিজেই ঘোষণা করে: “এটি অবশ্যই এক সম্মানিত কোরআন, যা আছে এক সুরক্ষিত কিতাবে। একে স্পর্শ করে কেবল তারাই যারা পবিত্র।” (সূরা আল-ওয়াকিয়াহ, আয়াত ৭৭-৭৯)। এই ‘পবিত্রতা’ শারীরিক ও আত্মিক উভয় স্তরকেই বোঝায়। ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের প্রকাশনা এবং বিশ্বস্ত ইসলামিক স্কলারদের মতামত অনুযায়ী, কোরআন তিলাওয়াতের আদব মেনে চলা শুধু সুন্নতই নয়, এটি কালামুল্লাহর মর্যাদা রক্ষার অপরিহার্য দাবি। এর মাধ্যমে:
- আল্লাহর প্রতি পরিপূর্ণ সম্মান প্রকাশ পায়: তাঁর বাণীকে যথাযথ মর্যাদা ও গুরুত্ব দেওয়ার মাধ্যমে আমরা তাঁর প্রতি আমাদের আনুগত্য ও ভক্তি প্রকাশ করি।
- তিলাওয়াতের ফজিলত ও প্রভাব বৃদ্ধি পায়: পবিত্রতা ও মনোযোগ সহকারে তিলাওয়াত করলে কোরআনের বাণী হৃদয়ে গভীরভাবে প্রবেশ করে, অন্তর আলোকিত হয়।
- ভুল-ত্রুটি ও অমর্যাদাকর আচরণ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়: বিনা ওজুতে স্পর্শ, অযত্নে রাখা বা অশ্লীল পরিবেশে পাঠের মতো ভুল থেকে বাঁচা যায়।
- আধ্যাত্মিক প্রশান্তি ও সওয়াব লাভ হয়: সঠিক আদবের সাথে তিলাওয়াত করলে রাসুল (সা.)-এর ঘোষিত অপরিসীম সওয়াব লাভের পাশাপাশি হৃদয়ে এক অনন্য শান্তি বিরাজ করে।
বাস্তব অভিজ্ঞতা: অনেকেই লক্ষ্য করেন, যখন কঠিন সময় আসে বা মন অস্থির থাকে, তখন পবিত্র হয়ে, মনোযোগ দিয়ে কোরআনের কয়েকটি আয়াত তিলাওয়াত করলে আশ্চর্যজনকভাবে হৃদয় শান্ত হয়, সমাধানের পথ খুলে যায়। এটি কেবলই আল্লাহর ওয়াদার বাস্তব রূপ: “জেনে রেখো, আল্লাহর জিকিরেই তো অন্তরসমূহ শান্তি পায়।” (সূরা আর-রাদ, আয়াত ২৮)।
পবিত্রতার স্তম্ভ: শারীরিক ও পরিবেশগত আদব
কোরআন তিলাওয়াতের আদবের প্রথম ও প্রধান ভিত্তি হল পবিত্রতা। এটি বহুমাত্রিক:
১. শারীরিক পবিত্রতা (তাহারাত)
- ওজু (অবশ্যকর্তব্য): কোরআন শরিফের বাহ্যিক লিখিত অংশ (মুসহাফ) স্পর্শ করার জন্য ওজু অবস্থায় থাকা ফুকাহায়ে কেরামের ঐক্যমত্য অনুযায়ী ওয়াজিব বা আবশ্যক। বাংলাদেশের প্রধান মুফতি ও ইসলামিক স্কলারদের ফতোয়া এক্ষেত্রে স্পষ্ট। এটি সরাসরি সূরা আল-ওয়াকিয়ার উপরোক্ত আয়াতের ভিত্তিতে। [উল্লেখ্য: মোবাইল/ট্যাবলেটে ডিজিটাল কোরআন পাঠের বিধান নিচের আলোচনায় আসবে]।
- গোসলের প্রয়োজনীয়তা: যে সকল অবস্থায় গোসল ফরজ (জুনুব, হায়েয, নিফাস), সে অবস্থায় কোরআন স্পর্শ বা তিলাওয়াত করা নিষিদ্ধ। তবে মন থেকে জিকির বা দোয়া পাঠ করা যায়।
- পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পোশাক ও স্থান: ময়লা বা নাপাক পোশাকে কোরআন তিলাওয়াত বা স্পর্শ না করাই শ্রেয়। তিলাওয়াতের স্থানও পরিষ্কার ও পবিত্র হওয়া উচিত।
২. স্থান ও পরিবেশের পবিত্রতা
- সম্মানজনক স্থান: বাথরুম, টয়লেট বা নাপাকির আশঙ্কা থাকে এমন স্থানে কোরআন নিয়ে যাওয়া বা সেখানে তিলাওয়াত করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।
- মনোযোগের পরিবেশ: যথাসম্ভব শান্ত, নির্জন বা মনোযোগ দিতে সহায়ক পরিবেশে তিলাওয়াত করা উত্তম। উচ্চ শব্দ, গানবাজনা বা অন্যান্য বিক্ষেপক কার্যকলাপের মধ্যে তিলাওয়াতের আদব রক্ষা করা কঠিন হয়।
- উচ্চমার্গীয় স্থান: কোরআন শরিফকে সর্বদা উচ্চ ও সম্মানজনক স্থানে রাখা উচিত। মাটিতে, পায়ের নিচে বা অন্যান্য জিনিসের নিচে চাপা দিয়ে রাখা অমর্যাদাকর।
আধুনিক প্রেক্ষাপটে প্রাসঙ্গিকতা: আজকাল অনেকেই স্মার্টফোন বা ট্যাবলেটে কোরআন তিলাওয়াত করেন বা শোনেন। এ ক্ষেত্রে শারীরিক পবিত্রতা (ওজু) কি প্রয়োজন?
- ডিজিটাল স্ক্রিন স্পর্শ: ইসলামিক স্কলারদের বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের মতে, ডিজিটাল ডিভাইসের স্ক্রিন স্পর্শ করে কোরআন পাঠের জন্য ওজু করা আবশ্যক নয়। কারণ এটি আসলে মুসহাফ (কাগজে লিখিত কপি) নয়, বরং একটি ইলেকট্রনিক ডিসপ্লেতে প্রদর্শিত আলো/ইমেজ। [তথ্যসূত্র: ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের ফতোয়া বোর্ডের অনুরূপ সিদ্ধান্ত এবং আন্তর্জাতিক ফিকহ একাডেমির রেজুলিউশন]।
- তবে আদব ও সম্মান: ওজু আবশ্যক না হলেও, কোরআনের আয়াত পাঠ বা শোনার সময় পবিত্রতা বজায় রাখা, সম্মানজনক আচরণ করা (যেমন- শৌচাগারে ডিভাইস নিয়ে না যাওয়া, নিচু স্থানে না রাখা) এবং মনোযোগ সহকারে পাঠ করা সর্বোত্তম আদবের অন্তর্ভুক্ত।
শিষ্টাচারের সুন্দর অলংকার: তিলাওয়াতকালীন আদব
শারীরিক পবিত্রতার পর আসে তিলাওয়াতের সময় পালনীয় আচরণগত আদব, যা তিলাওয়াতকে পরিণত করে এক গভীর ইবাদতে।
১. শুরু ও শেষের আদব
- আওউজু বিল্লাহি মিনাশ শাইত্বানির রাজীম ও বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম: প্রতিবার তিলাওয়াত শুরু করার আগে শয়তানের অনিষ্ট থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা (আওউজুবিল্লাহ) করা এবং আল্লাহর নামে শুরু (বিসমিল্লাহ) করা সুন্নত। এটি কোরআনের নির্দেশ: “অতএব, যখন তুমি কোরআন পাঠ করবে, তখন বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করবে।” (সূরা আন-নাহল, আয়াত ৯৮)।
- সাদাকা আল্লাহুল আজিম: তিলাওয়াত শেষে এই বাক্যটি বলা বা অন্তরে বিশ্বাস রাখা যে আল্লাহর বাণী সত্য। এটি সম্মান প্রকাশের অংশ।
- দোয়া কুনূত বা অন্যান্য দোয়া: রাসুলুল্লাহ (সা.) অনেক সময় তিলাওয়াত শেষে দোয়া কুনূত বা অন্যান্য দোয়া পড়তেন। তিলাওয়াতের শেষে আল্লাহর কাছে দোয়া ও মাগফিরাত প্রার্থনা করা মুস্তাহাব।
২. তিলাওয়াতের পদ্ধতি
- তাজভীদের সাথে সঠিক উচ্চারণ: কোরআন তিলাওয়াতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আদব হল তা সঠিক উচ্চারণ (তাজভীদ) এর নিয়ম মেনে পাঠ করা। ভুল উচ্চারণে আয়াতের অর্থ পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে। ঢাকার বিখ্যাত ক্বারী শেখ মুহাম্মদ আব্দুল জলিল (রহ.) প্রায়ই বলতেন, “কোরআন শুধু পড়লেই হবে না, শুদ্ধ করে পড়তে হবে। প্রতিটি হরফের হক আদায় করতে হবে।”
- সুরেলা কণ্ঠে পাঠ (তরতীল): মনোমুগ্ধকর ও সুরেলা কণ্ঠে ধীরে ধীরে (তরতীল) তিলাওয়াত করা আল্লাহর পছন্দনীয়। “এবং কোরআন তিলাওয়াত করো ধীরে ধীরে, সুস্পষ্টভাবে।” (সূরা আল-মুজাম্মিল, আয়াত ৪)। এতে অর্থ হৃদয়ঙ্গমও হয় সহজে।
- খুশু-খুজুর সাথে পাঠ: কোরআনের অর্থ চিন্তা করে, আল্লাহর মহিমা অনুধাবন করে, ভয়ে ও আশায় কম্পিত হৃদয়ে পাঠ করাই হল খুশু। এটি তিলাওয়াতের প্রাণ। রাসুল (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি কোরআন তিলাওয়াত করে আর তা দিয়ে কাঁদে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” (তিরমিজি)।
৩. আচরণগত সৌজন্য
- কিবলামুখী হওয়া: সম্ভব হলে কিবলামুখী হয়ে তিলাওয়াত করা সম্মান প্রকাশের নিদর্শন।
- অনর্থক কথা বা কাজ থেকে বিরত থাকা: তিলাওয়াতের সময় অপ্রয়োজনীয় কথা বলা, খাওয়া-দাওয়া করা বা অন্য কাজে ব্যস্ত থাকা আদব পরিপন্থী।
- শ্রোতার প্রতি সম্মান: যদি কেউ তিলাওয়াত শুনতে থাকেন, তাহলে তাকে মনোযোগ দিয়ে শোনা উচিত। আল্লাহ বলেন: “আর যখন কোরআন পাঠ করা হয়, তখন তোমরা তা মনোযোগ দিয়ে শুনবে এবং নিশ্চুপ থাকবে, যাতে তোমাদের প্রতি রহমত করা হয়।” (সূরা আল-আরাফ, আয়াত ২০৪)।
- কোরআনের প্রতি দৈহিক সম্মান: কোরআন শরিফকে পা দিয়ে বা পেছন দিকে রেখে বসা, এটির উপর কিছু রেখে দেওয়া বা অযত্নে ফেলে রাখা থেকে বিরত থাকা।
আধুনিক জীবনে কোরআন তিলাওয়াতের আদব: কিছু চ্যালেঞ্জ ও সমাধান
আজকের ব্যস্ত, প্রযুক্তিনির্ভর জীবনে কোরআনের সাথে সম্পর্ক রাখতে গিয়ে কিছু নতুন প্রশ্ন ও চ্যালেঞ্জ আসে:
- মোবাইল ফোনে তিলাওয়াত: যেমন আগেই আলোচনা করা হয়েছে, ডিভাইসে তিলাওয়াতের সময় ওজু আবশ্যক নয়, কিন্তু পবিত্রতা, মনোযোগ এবং সম্মান (যেমন- অশ্লীল কন্টেন্ট থাকা অ্যাপে না রাখা, টয়লেটে ব্যবহার না করা) বজায় রাখা জরুরি। সাউন্ড নোটিফিকেশন বন্ধ রাখা বা ‘ডোন্ট ডিসটার্ব’ মোড চালু করে পূর্ণ মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করা উচিত।
- ব্যস্ত সময়ে আদব রক্ষা: অফিসের ছোট বিরতি, গাড়িতে যাতায়াতের সময় – এসব ক্ষেত্রে পূর্ণ ওজু ও কিবলামুখী হওয়া সম্ভব নাও হতে পারে। তবে অন্তত শারীরিক পরিচ্ছন্নতা, আওযুবিল্লাহ-বিসমিল্লাহ বলা, অর্থ চিন্তার চেষ্টা করা এবং অন্তত বসে বা সাধ্যমত সম্মানজনক ভঙ্গিতে তিলাওয়াত করাই আদব। ছোট আয়াত বা সূরা পাঠ করলেও।
- পরিবারে শিশুদের শিক্ষা:: বাচ্চাদের শেখানোর সময় ধৈর্য ধরা, তাদের শুদ্ধ উচ্চারণ শেখানো এবং কোরআনের প্রতি ভালোবাসা ও সম্মানবোধ গড়ে তোলাই মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত। জোর জবরদস্তি বা শাস্তি দেওয়া কোরআনের শিক্ষার পরিপন্থী। তাদের সামনে নিজে আদব মেনে তিলাওয়াত করা সবচেয়ে কার্যকর শিক্ষা।
- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম: কোরআনের আয়াত শেয়ার করার সময় অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। ভুল উচ্চারণ বা ভুল অনুবাদযুক্ত পোস্ট শেয়ার করা থেকে বিরত থাকা। আয়াতের সঠিক রেফারেন্স (সূরা ও আয়াত নম্বর) উল্লেখ করা। হাসি-তামাশা বা অপ্রাসঙ্গিক কন্টেন্টের পাশে আয়াত পোস্ট করা অনুচিত।
স্মারক: কোরআন তিলাওয়াতের আদব শেখার সর্বোত্তম উপায় হল একজন যোগ্য ও বিশুদ্ধ উচ্চারণ জানা উস্তাদ বা ক্বারীর কাছে তাজভীদ শেখা। বাংলাদেশের প্রায় সব জেলায় মসজিদভিত্তিক বা স্বতন্ত্র মক্তব-মাদ্রাসায় এ সুযোগ রয়েছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশও নিয়মিত ক্বিরাত প্রশিক্ষণের আয়োজন করে।
জেনে রাখুন (FAQs)
১. ওজু ছাড়া কি শুধু কোরআন তিলাওয়াত (মুখে পড়া) করা যাবে?
হ্যাঁ, ওজু ছাড়া কোরআন মুখে তিলাওয়াত (পড়া) করা জায়েয আছে, যদি তা কোরআন শরিফের বাহ্যিক কপি (মুসহাফ) স্পর্শ না করে। তবে ওজু অবস্থায় পড়া সর্বোত্তম এবং অধিক সওয়াবের। ডিজিটাল ডিভাইস দেখে পড়তেও ওজু আবশ্যক নয়।
২. মহিলাদের হায়েয বা নিফাসের অবস্থায় কি কোরআন তিলাওয়াত করতে পারবেন?
এই অবস্থায় কোরআন শরিফের মুসহাফ স্পর্শ করা বা তিলাওয়াত করা (মুখে পড়া) জায়েয নয়, ফুকাহায়ে কেরামের ঐকমত্য অনুযায়ী। তবে হৃদয়ে জিকির, দোয়া, সালাত ও সালাম পাঠ এবং কোরআনের অর্থ চিন্তা বা তাফসীর পড়া নিষিদ্ধ নয়। অনেকে অনুবাদ পড়েন এই সময়ে।
৩. মোবাইলে কোরআন তিলাওয়াত বা শোনার সময় কি ওজু করতে হবে?
ইসলামিক স্কলারদের বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠের মতে, মোবাইল, ট্যাবলেট বা কম্পিউটারের স্ক্রিনে কোরআন তিলাওয়াত করা বা শোনার জন্য ওজু করা আবশ্যক নয়। কারণ এটি প্রকৃত মুসহাফ নয়। তবে পবিত্রতা ও মনোযোগ বজায় রেখে আদবের সাথে পাঠ বা শ্রবণ করা উচিত।
৪. তিলাওয়াতের সময় কান্না না আসলে কি সওয়াব কম পাব?
খুশু-খুজু (বিনয় ও একাগ্রতা) কান্নার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ। কান্না না এলেও অন্তরে আল্লাহর ভয়, ভালোবাসা ও তাঁর বাণীর মহিমা অনুভব করার চেষ্টা করাই মূল বিষয়। আন্তরিকতা ও মনোযোগই আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্যতার মাপকাঠি। রাসুল (সা.) কখনও কাঁদতেন, কখনও গভীরভাবে চিন্তা করতেন।
৫. ভুল উচ্চারণে তিলাওয়াত করলে কি গুনাহ হবে?
ইচ্ছাকৃতভাবে বা অবহেলার কারণে শুদ্ধ উচ্চারণ শেখার চেষ্টা না করে ভুল তিলাওয়াত চালিয়ে গেলে তা অবশ্যই গুনাহের কাজ, কারণ এতে আল্লাহর কালাম বিকৃতির আশঙ্কা থাকে। তবে যে শুদ্ধভাবে শেখেনি এবং ভুল করে ফেলছে, তার জন্য গুনাহ নেই, বরং শুদ্ধভাবে শেখার চেষ্টা অব্যাহত রাখা তার কর্তব্য।
৬. কোরআন তিলাওয়াত শিখতে গিয়ে বার বার ভুল হলে হতাশ হওয়া উচিত?
কখনই নয়! কোরআন শেখা একটি মহান ইবাদত। ধৈর্য ধারণ, নিয়মিত অনুশীলন এবং আল্লাহর সাহায্য কামনা করতে হবে। রাসুল (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি কোরআন পাঠে দক্ষ (শুদ্ধ ও সাবলীল), সে সম্মানিত ফেরেশতাদের সাথে থাকবে। আর যে ব্যক্তি কষ্ট করে পড়ে এবং তার জন্য কঠিন হয়, তার জন্য রয়েছে দ্বিগুণ সওয়াব।” (বুখারি ও মুসলিম)। প্রতিটি প্রচেষ্টাই মূল্যবান।
মনে রাখতে হবে, পবিত্র কোরআন শুধু একটি ধর্মীয় গ্রন্থ নয়; এটি আমাদের জীবনের পাথেয়, সফলতার গাইডবুক এবং আখিরাতের মুক্তির সনদ। কোরআন তিলাওয়াতের আদব মেনে চলা হল এই অমূল্য নিয়ামতের প্রতি আমাদের প্রকৃত কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসার প্রকাশ। এটি আমাদের ঈমানকে পরিশুদ্ধ করে, আমলকে সার্থক করে এবং আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের পথ সুগম করে। আজ থেকেই আপনার তিলাওয়াতের অভ্যাসে এই পবিত্রতা ও শিষ্টাচারকে প্রাধান্য দিন, কোরআনের আলোকে আপনার জীবনের প্রতিটি ক্ষণকে উদ্ভাসিত করুন।