কক্সবাজারের রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে চাকরি হারানো বাংলাদেশি শিক্ষকরা আবারও আন্দোলনে নেমেছেন। চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিতে সোমবার সকাল সাতটা থেকে উখিয়ার কোর্টবাজার স্টেশন এলাকায় সড়ক অবরোধ করেন তারা। এতে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কে কয়েক হাজার যানবাহন আটকা পড়ে এবং প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তীব্র যানজট তৈরি হয়। আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
স্থানীয় এসব শিক্ষকের চাকরি হারানোর পেছনে মূল কারণ হিসেবে দেখা দিয়েছে আন্তর্জাতিক সহায়তা সংকট। জাতিসংঘের শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র বড় অঙ্কের অর্থায়ন বন্ধ করায় কক্সবাজারের প্রায় সাড়ে চার হাজার শিক্ষাকেন্দ্রের কার্যক্রম অনিশ্চিত হয়ে গেছে।
ইউনিসেফের কক্সবাজার প্রধান অ্যাঞ্জেলা কার্নে জুনে জানান, জুনের শেষ পর্যন্ত শিক্ষাকেন্দ্রগুলো বন্ধ থাকবে। নতুন করে তহবিল না এলে এগুলো চালু করা সম্ভব হবে না। এ অবস্থায় স্থানীয় পর্যায়ের গ্রেড–১ ও গ্রেড–২ শিক্ষকদের চুক্তি আর নবায়ন করা হয়নি। ফলে চাকরি হারিয়েছেন ১ হাজার ১৭৯ জন বাংলাদেশি শিক্ষক।
ইউনিসেফের নতুন পরিকল্পনায় স্থানীয় শিক্ষকের পরিবর্তে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের মানুষকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। কারণ, তাঁদের বেতন তুলনামূলকভাবে কম। একই সঙ্গে পাঠ্যক্রমেও পরিবর্তন এসেছে—ইংরেজি, বিজ্ঞান ও সামাজিক শিক্ষা বাদ দেওয়া হয়েছে। থাকছে কেবল বর্মিজ ভাষা, গণিত, জীবনদক্ষতা ও সামাজিক-মানসিক শিক্ষা।
চাকরি হারানো শিক্ষকেরা বলছেন, সংসার চালানোই এখন কঠিন হয়ে পড়েছে। শিক্ষিকা রোকসানা আক্তার বলেন, ‘চাকরি না থাকায় স্কুলে পড়া সন্তানের খরচ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছি।’ শিক্ষক সাইদুল ইসলাম জানান, ‘চাকরি ফেরত না দেওয়া হলে ক্যাম্পে শিক্ষা কার্যক্রম চালু হতে দেওয়া হবে না।’
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে কিছু শিক্ষককে ব্র্যাকের নতুন শিক্ষাকেন্দ্রে পুনর্নিয়োগের চেষ্টা চলছে। তবে শিক্ষকরা চাকরিতে ফেরার নিশ্চয়তা না পেয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘তহবিল সংকট শুধু ইউনিসেফের নয়, পুরো মানবিক সহায়তা কার্যক্রমেই চলছে। তবে দাবি আদায়ের জন্য জনদুর্ভোগ সৃষ্টি না করে শান্তিপূর্ণ উপায়ে আন্দোলন করা উচিত।’
বর্তমানে কক্সবাজারের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে প্রায় আড়াই লাখ রোহিঙ্গা শিশু পড়াশোনা করছে। ইউনিসেফ সতর্ক করেছে, তহবিল না পেলে এসব শিশুর ৮৩ শতাংশের শিক্ষাজীবন হুমকির মুখে পড়বে, যা পুরো একটি প্রজন্মকে পিছিয়ে দেওয়ার ঝুঁকি তৈরি করছে।