ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে বাংলাভাষীদের হেনস্তা করা হচ্ছে বলে আবারও অভিযোগ তুলেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী। কেউ বাংলায় কথা বললে তিনি বাংলাদেশি হয়ে যান না বলে মন্তব্যও করেছেন তিনি।
শুক্রবার (১১ জুলাই) প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বিবিসি বাংলা জানিয়েছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করা এক বিবৃতিতে মমতা ব্যানার্জী লিখেছেন, নয়াদিল্লির বসন্তকুঞ্জের থেকে উঠে আসা একের পর এক ভয়ঙ্কর হেনস্তার ঘটনার খবর শুনে আমি গভীরভাবে মর্মাহত ও বিচলিত। এই বসতি মূলত সেই বাংলাভাষী মানুষেরা তৈরি করেছেন, যারা দিল্লিকে গঠন করার অসংগঠিত শ্রমশক্তির গুরুত্বপূর্ণ এক অংশ।
জয় হিন্দ ক্যাম্পের প্রসঙ্গে দিল্লির সরকারকে নিশানা করে মমতা লিখেছেন, শোনা যাচ্ছে, বিজেপি পরিচালিত সরকারের নির্দেশে তাদের জল সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। দিন কয়েক আগে হঠাৎ বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে এবং ইলেকট্রিসিটি মিটার তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন, তারা নিজেদের টাকায় যে প্রাইভেট জলের ট্যাংকারের ব্যবস্থা করেছিলেন, তা দিল্লি পুলিশ এবং আরএএফ-এর সহায়তায় আটকে দেওয়া হয়েছে।
বিজেপিকে নিশানা করে তিনি উল্লেখ করেছেন, এই মুহূর্তে একপ্রকার জবরদস্তি উচ্ছেদ চলছে, যদিও এই বিষয়ে গত ডিসেম্বরেও একটা অনাকাঙ্ক্ষিত দিল্লি পুলিশের হস্তক্ষেপের পর আদালতে এই মামলা বিচারাধীন রয়েছে। আশ্রয়, জল ও বিদ্যুৎ, এই মৌলিক অধিকারগুলো যদি এইভাবে পদদলিত করা হয়, তাহলে আমরা কীভাবে নিজেদের গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র বলে দাবি করব? পাশাপাশি তৃণমূল সুপ্রিমোর দাবি,পশ্চিমবঙ্গে অন্য রাজ্য থেকে আসা শ্রমিকরা সম্মানের সঙ্গে থাকেন।
তিনি উল্লেখ করেছেন, পশ্চিমবঙ্গে ১.৫ কোটিরও বেশি পরিযায়ী শ্রমিক রয়েছেন, যারা সম্মানের সঙ্গে বসবাস করেন। কিন্তু বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলোতে সেই কথা জোরের সঙ্গে বলা যায় না, যেখানে বাংলাভাষীদের নিজের দেশেই অনুপ্রবেশকারী হিসেবে দেখা হচ্ছে। কেউ বাংলায় কথা বললে, তিনি বাংলাদেশি হয়ে যান না। ভাষা-নির্বিশেষে তারা ভারতেরই নাগরিক, যেকোনো ভারতীয় নাগরিকের মতোই সমান অধিকারসম্পন্ন।
মমতা ব্যানার্জী বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গে বাঙালিদের অধিকার কেড়ে নেওয়ার যেসব চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে, এবার সেই বাংলা-বিরোধী অপচেষ্টাকে দেশের অন্যান্য প্রান্তে শুরু করার কৌশল নিয়েছে বিজেপি। গুজরাত, মহারাষ্ট্র, ওড়িশা ও মধ্যপ্রদেশ থেকেও বাংলাভাষীদের উপর নিপীড়ন করার খবর পাওয়া যাচ্ছে। এখন সেই বিদ্বেষের ছায়া এসে পড়েছে দেশের রাজধানীতেও।
এর জবাবে বিজেপির নেতা অমিত মালব্য সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, যে জাল আধার কার্ড এবং রেশন কার্ড ব্যবহার করে বাংলাদেশিরা এখানে থাকছে তার বেশিরভাগই উত্তর পরগনায় জারি করা হয়েছে। বাংলাকে অপমান করা বন্ধ করুন। অবৈধ বিষয়কে রক্ষা করা বন্ধ করুন। ওই বসতি অবৈধ। যে বসতি নিয়ে কথা হচ্ছে সেটা অবৈধভাবে দখল করা। সেখানে যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা আইন মেনেই হয়েছে।
তিনি বলেন, এটা কিন্তু কোনো কাকতালীয় ঘটনা নয় যে মাত্র কয়েকদিন আগে এই এলাকা থেকেই ২৬ জন অবৈধ বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী এই বিষয়ে কী বলবেন?