ঈদে মিলাদুন্নবী ২৮ সেপ্টেম্বর

ঈদে মিলাদুন্নবী ২৮ সেপ্টেম্বর

সামর্থ্যবান মুসলমানদের জন্য হজপালন করা ফরজ। তা ছাড়া পবিত্র ঘর কাবা স্পর্শ করার ইচ্ছে কার মনে না জাগে। প্রতি বছরই লাখ লাখ মানুষ হজ ও উমরার উদ্দেশ্যে মক্কা যান। যাওয়ার মাধ্যম হিসেবে সবাই উড়োজাহাজকেই বেছে নেন। তবে মাঝে-মধ্যে মোটর সাইকেল কিংবা সাইকেলে মক্কা যাওয়ার খবরও শোনা যায়।

পশ্চিমবঙ্গের নাগরিক নূরেমান শেখের আজন্ম স্বপ্ন হজ পালনের। কিন্তু উড়োজাহাজে করে পবিত্র কাবা প্রাঙ্গণ ও হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর রওজায় হাজিরা দেওয়ার আর্থিক সামর্থ্য নেই। এ জন্য সাইকেল চালিয়েই পবিত্র ভূমির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছেন ৫৫ বছর বয়সী এই বৃদ্ধ।

গত মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) সকালে নিজ গ্রাম থেকে পবিত্র মক্কার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন তিনি। নূরেমান শেখের বাড়ি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জের মোহম্মদপুর গ্রামে। বাড়িতে স্ত্রী, পাঁচ মেয়ে ও চার ছেলেকে রেখে পূণ্যময় এ যাত্রা শুরু করেছেন তিনি।

যাত্রাপথের দরকারি জিনিসপত্রসহ তিনি সঙ্গে নিয়েছেন প্রয়োজনীয় টাকা ও শুকনো খাবার। নূরেমান শেখ জানান, হজযাত্রা তার স্বপ্ন। টাকা পয়সা না থাকায় উড়োজাহাজে হজে যাওয়া তার পক্ষে সম্ভব নয়। তাই স্বপ্নপূরণে সাইকেল নিয়েই মহত এ যাত্রার শুরু।

তিনি আরো জানান, ভারত সীমান্ত পেরিয়ে পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরান হয়ে মক্কায় পৌঁছতে সময় লাগবে মোট ৬ মাস। এতে প্রতিদিন অন্তত ৪০ থেকে ৬০ কিলোমিটার পথ সাইকেল চালাতে হবে তাকে। আর পথে রাত্রিযাপন করবেন মসজিদে।

নূরেমান শেখের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, সাইকেল চালিয়ে হজ করার জন্য এ সংক্রান্ত অফিসে আবেদন জানিয়েছিলেন নূরেমান কিন্তু টাকার অভাবে ভিসা করতে পারেননি। এরপর শুধুমাত্র ভারতের পাসপোর্ট নিয়ে বাড়ি থেকে মক্কার উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। বাকিটা তার আল্লাহর ওপর ভরসা। পাকিস্তান সীমান্তে যেয়ে ভিসা সংক্রান্ত বিষয়ে কথা বলবেন বলে জানান নূরেমান। সুরাহা না হলে হজযাত্রা অসমাপ্ত রেখেই ফিরবেন ঘরে।

ঈদে মিলাদুন্নবী ২৮ সেপ্টেম্বর
২০১৯ সালে ৮ ব্রিটিশ তরুণ সাইকেল চালিয়ে মক্কা পৌঁছান এবং হজপালন করেন

 

এর আগে ২০১৯ সালের ৭ জুলাই লন্ডন থেকে ৮ ব্রিটিশ তরুণ সাইকেল চালিয়ে মক্কা পৌঁছান। এ যাত্রায় ৪ হাজার মাইল অতিক্রম করেন তারা, অতিক্রম করেন ১৫টি দেশ। তবে যুদ্ধের কারণে সিরিয়া ও ইরাকের পথটুকু উড়োজাহাজে পাড়ি দিয়ে মিসরে পৌঁছান তারা। এর আগে লন্ডন থেকে ২০১৭ সালেও একটি গ্রুপ সাইকেলে হজ পালনে পবিত্র নগরী মক্কায় যান।

একই বছর চার কেনিয়ান নাগরিকও সাইকেল চালিয়ে হজে গিয়েছিলেন। কেনিয়া থেকে মক্কা পৌঁছতে তাদের সময় লাগে ৪৫ দিন।

২০১৮ সালে ইন্দোনেশিয়া থেকে পাঁচ সদস্যের এক পরিবার বাইসাইকেল চালিয়ে মক্কায় যান হজ পালন করতে যান।

শুধু সাইকেল নয় পায়ে হেঁটেও হজ পালন করেছেন অনেকে। এর মধ্যে অন্যতম বসনিয়ার সেনাদ হাদজিক। ২০১২ সালে ৪৭ বছর বয়সী ওই বসনিয়ান নাগরিক পায়ে হেঁটে পবিত্র মক্কা নগরীতে গিয়ে পৌঁছান। এ যাত্রায় তাকে ৫ হাজার ৯০০ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে পাড়ি দিতে হয়।

গত বছর (২০২২ সালে) ভারতের কেরালা রাজ্য থেকে হেঁটে হজ পালনে যান ৩০ বছর বয়সী শিহাব চত্তুর। প্রায় ৩৭০ দিনে তিনি ভারত থেকে পাকিস্তান, ইরান, ইরাক, কুয়েত হয়ে সৌদি আরবে প্রবেশ করেন এবং পাড়ি দেন আট হাজার ৬৪০ কিলোমিটারের বেশি পথ।

তবে চলতি বছর হজ পালনের নিয়তে থাইল্যান্ডের নাগরিক ইসা আব্দুস সালাম (৬৪) চেষ্টা করেও সাইকেল চালিয়ে হজে যেতে পারেননি। বেনাপোলের বিপরীতে ভারতের পেট্রাপোল ইমিগ্রেশন পুলিশ তাকে ফিরিয়ে দিয়ে বিমানে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।

ইসা আব্দুস সালামের বাড়ি মিয়ানমার সীমান্ত এলাকায়। সেখানে অস্থিতিশীলতার কারণে থ্যাইল্যান্ড থেকে বিমানে বাংলাদেশে এসেছেন। তার ইচ্ছা ছিল বাংলাদেশ থেকে ভারত হয়ে সৌদি আরবে হজ করতে যাবেন। তবে সীমান্ত অতিক্রম করতে না পারায় তিনি নিজ দেশে ফিরে যান।

হজ, ওমরাহ, উমরা, সাইকেলে হজ, মক্কা, ভারত, সৌদি আরব

Scroll to Top