লাইফস্টাইল ডেস্ক : আল্লাহ চান বান্দা তাঁর কাছে করুণা প্রার্থনা করুক। রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘দোয়াই হলো ইবাদত।’ (তিরমিজি, আবু দাউদ, ইবনে মাজা)। আমলের দিক থেকেও দোয়া শ্রেষ্ঠতর। তিরমিজিতে আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহর কাছে দোয়ার চেয়ে উত্তম কোনো আমল নেই।’ দয়ালু আল্লাহ চান বান্দা তাঁর কাছে আবেদন-নিবেদন করুক। তবে দোয়া করার সময় দোয়ার আদবগুলো যাতে পালিত হয় সেদিকে নজর রাখতে হবে। দয়ালু আল্লাহর কাছে দোয়া করতে হলে খাস মনে করতে হবে। আল্লাহ রব্বুল আলামিন বান্দার প্রার্থনা বা মোনাজাত শোনা এবং কবুল করা পছন্দ করেন।
সুরা আল আনয়ামের ৬৩-৬৪ আয়াতে বলা হয়েছে, ‘বলুন, কে তোমাদের ত্রাণ করেন যখন তোমরা স্থলভাগের ও সমুদ্রের বিপদে কাতরভাবে এবং গোপনে তাঁর কাছে অনুনয় কর এভাবে- আমাদের এ বিপদ থেকে উদ্ধার করলে আমরা অবশ্যই কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হব। বলুন, আল্লাহই তোমাদের বিপদ ও সমস্ত দুঃখকষ্ট থেকে পরিত্রাণ করেন। এ সত্ত্বেও তোমরা তাঁর শরিক কর!’ মহান আল্লাহর করুণা পেতে তাগিদ- ‘তোমরা বিনীতভাবে এবং গোপনে তোমাদের প্রতিপালককে ডাকো… তাঁকে ভয় ও আশার সঙ্গে ডাকবে।’ (সুরা আরাফ, আয়াত ৫৫-৫৬)
‘তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া না থাকলে তোমাদের কেউ অব্যাহতি পেতে না এবং আল্লাহ তওবা গ্রহণকারী ও প্রজ্ঞাময়।’ (সুরা নুর, আয়াত ১০)। ‘বল, হে আমার বান্দাগণ! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ, আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে নিরাশ হইও না, আল্লাহ সমুদয় পাপ ক্ষমা করে দেবেন। তিনি তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা জুমার, আয়াত ৫৩) যাবতীয় অনুকম্পা ও নিয়ামত দানকারী আল্লাহ রব্বুল আলামিনের কাছেই বিপদে-আপদে অভাব-অনটনে সাহায্য প্রার্থনা করার গুরুত্ব অপরিসীম। আল কোরআনে যেসব মোনাজাত বিভিন্ন ক্ষেত্র বা উপলক্ষে বিবৃত হয়েছে তার মধ্যে প্রার্থনার বিভিন্ন আঙ্গিক, ভাব-ভাষা প্রকাশ পেয়েছে।
আল কোরআনের প্রাণস্বরূপ সুরা আল ফাতিহা সেরা মোনাজাতের প্রতিকৃতি। এ কারণে মিরাজুল মুমিনিন হিসেবে বিবেচিত নামাজের প্রতি রাকাতে এ সুরা পাঠ করতে হয়। আল কোরআনে সওগাত হিসেবে উল্লিখিত মোনাজাতগুলোর কয়েকটি- ‘হে আমাদের প্রতিপালক! যদি আমরা বিস্মৃত হই অথবা ভুল করি তবে তুমি আমাদের অপরাধী কোরো না।
হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের পূর্ববর্তীগণের ওপর যেমন গুরুদায়িত্ব অর্পণ করেছিলে আমাদের ওপর তেমন দায়িত্ব অর্পণ কোরো না। হে আমাদের প্রতিপালক! এমন ভার আমাদের ওপর অর্পণ কোরো না, যা বহন করার শক্তি আমাদের নেই। আমাদের পাপ মোচন কর, আমাদের ক্ষমা কর, আমাদের প্রতি দয়া কর, তুমিই আমাদের অভিভাবক। সুতরাং কাফির সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদের জয়যুক্ত কর।’ (সুরা বাকারা, আয়াত ২৮৬) ‘হে সার্বভৌম শক্তির মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা দান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা কেড়ে নাও; যাকে ইচ্ছা তুমি পরাক্রমশালী কর, আর যাকে ইচ্ছা তুমি হীন কর। কল্যাণ তোমার হাতেই। তুমি সব বিষয়ে সর্বশক্তিমান। তুমিই রাতকে দিনে এবং দিনকে রাতে পরিণত কর; তুমিই মৃত থেকে জীবন্তের আবির্ভাব ঘটাও, আবার জীবন্ত থেকে মৃতের আবির্ভাব ঘটাও। তুমি যাকে ইচ্ছা অপরিমিত জীবনোপকরণ দান কর।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত ২৬-২৭)
‘হে আমাদের প্রতিপালক! তাদের (পিতামাতার) প্রতি দয়া কর যেভাবে শৈশবে তারা আমাকে প্রতিপালন করেছিলেন।’ (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত ২৪) ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের জ্ঞানের বৃদ্ধি সাধন কর।’ (সুরা তা-হা, আয়াত ১১৪)। ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের জন্য এমন স্ত্রী ও সন্তানসন্ততি দান কর, যারা আমাদের জন্য নয়নপ্রীতিকর এবং আমাদের মুত্তাকিদের জন্য আদর্শস্বরূপ কর।’ (সুরা ফুরকান, আয়াত ৭৪) ‘হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি আমাকে সামর্থ্য দাও, যাতে আমি তোমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারি, আমার প্রতি ও আমার পিতামাতার প্রতি তুমি যে অনুগ্রহ করেছ, তার জন্য এবং যাতে আমি সৎকাজ করতে পারি যা তুমি পছন্দ কর, আমার জন্য আমার সন্তানসন্ততিদের সৎকর্মপরায়ণ কর, আমি তোমারই অভিমুখী হলাম এবং আত্মসমর্পণ করলাম।’ (সুরা আহকাফ, আয়াত ৪৬)। সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ না করলে তার দোয়া আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না।
রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা অবশ্যই সৎকাজের আদেশ করবে এবং অন্যায় কাজে বাধা প্রদান করবে। অন্যথায় আল্লাহ তোমাদের প্রতি আজাব নাজিল করবেন। এরপর তোমরা দোয়া করবে কিন্তু তোমাদের দোয়া কবুল করবেন না।’ দোয়ায় অমনোযোগী হলে অর্থাৎ দোয়াকারী দোয়া অবস্থায় উদাস বা অমনোযোগী থাকলে তার দোয়া কবুল হয় না। রসুলুল্লাহ (সা.) আরও ইরশাদ করেন, ‘দোয়া কবুল হবে এমন দৃঢ়বিশ্বাস রেখে তোমরা দোয়া করবে। আর জেনে রেখ, আল্লাহ কোনো উদাস অমনোযোগী অন্তরের দোয়া কবুল করেন না।’ (তিরমিজি, হাকেম) তাড়াহুড়া করলে দোয়ার সুফল মিলবে না। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘দোয়া করার পর কবুল হওয়ার জন্য তাড়াহুড়া করলে সে দোয়া কবুল হয় না।’ (মুসলিম)
এম এ মান্নান