সাম্প্রতিক কয়েক দিনের আবহাওয়া বাংলাদেশে নতুন এক মোড় নিয়েছে। আষাঢ়ের আগমনে সঙ্গে সঙ্গেই দেখা দিচ্ছে ঘন মেঘমালা ও টানা বর্ষণ। সমুদ্রের ওপর সৃষ্ট মৌসুমি লঘুচাপ এবং বাংলাদেশের আকাশজুড়ে সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টি ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে। এই বৃষ্টি যেমন কিছুটা স্বস্তি এনেছে গরমে অতিষ্ঠ মানুষদের জন্য, তেমনই দুর্যোগের পূর্বাভাসও দিচ্ছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আবহাওয়ার খবর: সারা দেশে মৌসুমি বৃষ্টিপাত ও লঘুচাপের প্রভাব
বর্তমানে বাংলাদেশের আকাশে সক্রিয় রয়েছে মৌসুমি বায়ু। এর সঙ্গে সাগরে সৃষ্টি হওয়া লঘুচাপের কারণে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বৃষ্টির প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, ঢাকা, ময়মনসিংহ, রাজশাহী এবং সিলেট বিভাগে মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণের খবর পাওয়া যাচ্ছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, খুলনা বিভাগের যশোর জেলার ওপরে অবস্থান করছে মৌসুমি লঘুচাপের কেন্দ্র, যা আগামী দুই দিন উত্তর দিকে অগ্রসর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
গতকাল ঢাকায় ছয় ঘণ্টায় ২৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এটি ‘মাঝারি ধরনের ভারী বৃষ্টিপাত’ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এই অবস্থার কারণে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে জলাবদ্ধতা ও জনদুর্ভোগ বেড়েছে।
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবন, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও সিলেট জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে একটানা ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে পাহাড়ি অঞ্চলগুলোতে ভূমিধসের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। আবহাওয়া বিশ্লেষক মোস্তফা কামাল পলাশ জানিয়েছেন, আগামী সাত দিন একটানা বৃষ্টি হতে পারে এসব অঞ্চলে।
এই পরিস্থিতিতে পাহাড়ের ঢালে বা ওপরে বসবাসরত মানুষদের নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। আবহাওয়া অধিদপ্তর দেশের সব সমুদ্রবন্দরগুলোতে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত জারি করেছে এবং মাছ ধরার ট্রলারগুলোকে উপকূলের কাছাকাছি থাকতে বলেছে।
খুলনা শহরের অবস্থা সবচেয়ে বেশি উদ্বেগজনক। মাত্র দুই ঘণ্টার বৃষ্টিতে শহরের দুই-তৃতীয়াংশ অঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে। বাসা-বাড়ি, দোকানপাট এমনকি সরকারি সড়কগুলোও হাঁটুপানি জমে গেছে। যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে এবং কর্মজীবী মানুষসহ শিক্ষার্থীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। সিটি করপোরেশনের দুর্বল ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস: ১৮–২৩ জুন
বৃষ্টিপাত ও বাতাসের গতি
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ১৮ জুন থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত দেশের অধিকাংশ অঞ্চলে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। রংপুর, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে দমকা হাওয়ার সঙ্গে বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
ঢাকায় দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ১০–১৫ কিমি বেগে বাতাস প্রবাহিত হচ্ছে এবং বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ৯৮ শতাংশে পৌঁছেছে।
জনসচেতনতা ও প্রস্তুতি
- পাহাড়ি অঞ্চলের মানুষের জন্য নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
- নগর এলাকায় জরুরি ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন।
- সাধারণ মানুষের মাঝে সতর্কতামূলক বার্তা পৌঁছানো।
- ত্রাণ ও উদ্ধার কর্মী প্রস্তুত রাখা।
খুলনার জলাবদ্ধতার প্রতিবেদন এবং মৌসুমি বৃষ্টিপাত সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য নিয়ে নিয়মিত আপডেট পাওয়া যাচ্ছে।
বর্তমানে দেশের আবহাওয়ার খবর মানুষের জীবনে সরাসরি প্রভাব ফেলছে। আবহাওয়া সম্পর্কিত সঠিক তথ্য জানানো এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার প্রস্তুতি নেওয়া এখন সময়ের দাবি।
জেনে রাখুন-
১. বর্তমানে বাংলাদেশের কোন অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হচ্ছে?
খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে বেশি বৃষ্টির খবর পাওয়া যাচ্ছে।
২. আবহাওয়ার এই পরিবর্তনের মূল কারণ কী?
মৌসুমি বায়ুর সক্রিয়তা এবং সাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের কারণে এই বৃষ্টি হচ্ছে।
৩. পাহাড়ি এলাকায় ঝুঁকি কতটা?
সিলেট ও পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমিধসের সম্ভাবনা রয়েছে, তাই নিরাপদে থাকতে বলা হচ্ছে।
৪. বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা কাদের বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করছে?
নিম্নআয়ের কর্মজীবী মানুষ এবং শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন।
৫. ঢাকায় আবহাওয়ার পরিস্থিতি কেমন?
ঢাকায় মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত হচ্ছে এবং তাপমাত্রা কিছুটা কমেছে।
৬. কীভাবে প্রস্তুতি নেওয়া উচিত?
নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়া, প্রয়োজনীয় সামগ্রী মজুত রাখা এবং সতর্ক বার্তা অনুসরণ করা উচিত।