বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র শহীদ আবরার ফাহাদের ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজের ফেসবুকের একটি স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে ছাত্র ইউনিয়নের এক নেতা ‘আবরার ফাহাদকে হত্যা জায়েজ ছিল’ বলে মন্তব্য করেছেন।
বুধবার (২৮ মে) দুপুরের পর এই স্ট্যাটাসটি ভাইরাল হলে তা নিয়ে চলে আলোচনা-সমালোচনা। এর আগে গতকাল মঙ্গলবার (২৭ মে) জামায়েত ইসলামীর নেতা এটিএম আজহারের মুক্তির পর ‘শাহবাগের পরাজয় হয়েছে’ বলে এক স্ট্যাটাস দেন আবরার ফাইয়াজ।
পরে সেটিকে কেন্দ্র করে শাহরিয়ার ইব্রাহিম নামে ঢাকা মহানগর ছাত্র ইউনিয়নের ওই নেতার এমন স্ট্যাটাসটি ভাইরাল হয়েছে। তিনি ঢাকা মহানগরের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন বলে ফেসবুকের প্রোফাইল সূত্রে জানা গেছে। এরপর ফেসবুকে এই নেতার আইডিটি খুঁজে পাওয়া যায়নি।
জানা গেছে, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামকে মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস দিয়েছেন আপিল বিভাগ। গতকাল খালাসের পর আবরার ফাইয়াজ তার ফেসবুকের স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘শাহবাগ ২০১৩ সালে শুধু যে জামায়েত বা বিএনপি নেতাদের রাজাকার বানিয়ে ফাঁসি দেওয়া বৈধতা এনে দিয়েছিল এমন না, পরের বছরগুলোতে দল-মত নির্বিশেষে নিরীহ মানুষকে জামায়াত-শিবির ট্যাগ দিয়ে মারাও জায়েজ করেছিল। এটিএম আজহারের মুক্তিতে শাহবাগের কণ্ঠে আজ পরাজয়ের আর্তনাদ শোনা যাচ্ছে। একাত্তরের প্রকৃত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পথ চিরদিনের জন্য ধ্বংস করেছে এই শাহবাগই। আশা করি, বিএনপি-জামায়েত তাদের নেতাকর্মীদের রক্তের সাথে বেইমানি না করে শাহবাগ তৈরির সাথে জড়িতদের বিচার করবে একদিন।’
তার এই স্ট্যাটাসটি নিয়ে মন্তব্য করেন ছাত্র ইউনিয়ন নেতা শাহরিয়ার ইব্রাহিম। তিনি এক স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘জাশির কুত্তা আবরার ফাহাদকে হত্যা কেন জায়েজ ছিল, দেখ তোরা!’
পরে এ স্ট্যাটাসটি ভাইরাল হলে তা নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। অনেকেই তার শাস্তি দাবি করছেন। ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি আবু সাদিক কায়েম ফেসবুকের এক স্ট্যাটাসে লিখেন, ‘উন্মত্ত দানব শাহবাগের সাথে কেউ একমত না হলে শাহবাগ তাকে হত্যা করতে চায়। বুয়েটের শহীদ আবরার ফাহাদের ভাই আবরার ফাইয়াজ এটিএম আজহারের মুক্তির পর শাহবাগের পরাজয় হয়েছে বলার পর ছাত্র ইউনিয়ন নেতার উক্তি “জাশির কুত্তা আবরার ফাহাদকে হত্যা কেন জায়েজ ছিল, দেখ তোরা!” এটাই প্রমাণ করে।’
তিনি লেখেন, ‘শাহবাগের উন্মত্ত মব ছিল ফ্যাসিবাদের বীজ থেকে গজানো বিষাক্ত গাছ, যার প্রভাবে বাংলাদেশ দীর্ঘস্থায়ী জুলুম ও নিপীড়নের মধ্যে পড়েছে। বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদের এস্টাবলিশমেন্ট এবং একে টিকিয়ে রাখার দায় শাহবাগীদের। এরা নিরপরাধের ফাঁসি তো চেয়েছিলোই, একইসাথে নিরপরাধের ফাঁসি হওয়ার পরে অমানবিক ও উন্মত্ত রক্তখেকোর মতো উৎসবে মেতে উঠেছিল।’
তিনি আরও লিখেন, ‘ফলাফলে হাসিনা হয়েছিল, হিটলারের মত উন্মত্ত খুনি, আর তার ল্যাসপেন্সার ছিল এরা। হাসিনা ফ্যাসিবাদী, এবং কালচারাল ফ্যাসিস্টদের সংগঠনগুলো সেই ফ্যাসিবাদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, যারা মানুষের রক্তে পুষ্ট হচ্ছিল আওয়ামী শাসনকালের ১৬ বছর।’
এদিকে, এটিএম আজহারের খালাসের রায়ের প্রতিবাদে মঙ্গলবার বিকেলে বামপন্থি ছাত্রসংগঠনগুলোর উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ঢাবির মধুর ক্যান্টিন থেকে শুরু হওয়া মিছিলটি ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে শাহবাগ মোড় ঘুরে রাজু ভাস্কর্যে এসে শেষ হয়। বিক্ষোভে অংশ নেয় ছাত্র ইউনিয়ন, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, গণতান্ত্রিক ছাত্র পরিষদ ও ছাত্র ফেডারেশনের নেতাকর্মীরা। রাজশাহীতেও এটিএম আজহারের রায়ের বিরুদ্ধে মিছিলে শাহবাগ বিরোধীদের সাথে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে।