অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা অর্জনের লক্ষ্যে কাজ করছে আইএসইসি প্রকল্প | চ্যানেল আই অনলাইন

অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা অর্জনের লক্ষ্যে কাজ করছে আইএসইসি প্রকল্প | চ্যানেল আই অনলাইন

কক্সবাজারের ২৪ হাজার ৭৬০ জন কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী, নারী এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে স্বনির্ভর করে তোলার লক্ষ্যে কাজ চলছে ‘ইমপ্রুভিং স্কিলস অ্যান্ড ইকোনমিক অপরচুনিটিজ ফর দি ওমেন অ্যান্ড ইউথ ইন কক্সবাজার (আইএসইসি) প্রকল্পটি। প্রকল্পের আওতায় চলতি বছর ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১২ হাজার ৫১৭ জনের কর্মসংস্থান ও স্বনির্ভর হওয়ার সুযোগ সৃষ্টিতে সহায়তা করা হয়েছে।

২০২৩ সালে শুরু হওয়া এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হচ্ছে শিক্ষা, কর্মসংস্থান বা প্রশিক্ষণের সঙ্গে যুক্ত নয় কক্সবাজারের এমন কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী, নারী এবং প্রতিবন্ধি ব্যক্তিদের বাজার উপযোগী, জেন্ডার-সংবেদনশীল দক্ষতা ও উদ্যোক্তা উন্নয়নের মাধ্যমে কর্মসংস্থান ও স্বনির্ভর হাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করা। গ্লোবাল এফেয়ার্স কানাডার (গ্যাক) আর্থিক সহায়তায় ব্র্যাক, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এবং ইউএনডিপি প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। চলতি বছর প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হচ্ছে।

প্রকল্পের আওতায় ‘আল্ট্রা পুওর গ্র্যাজুয়েশন’ (ইউপিজি) মডেলের মাধ্যমে অতিদারিদ্র বিমোচন ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা তৈরি, প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ, শিক্ষানবিশ কর্মী হিসেবে দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ, বিদ্যমান ব্যবসার উন্নয়ন ও উদ্যোক্তার দক্ষতা বৃদ্ধি এবং ‘ক্যারিয়ার হাব’ মডেলের মাধ্যমে কর্মসংস্থানে স্থানীয় অধিবাসীদের (হোস্ট কমিউনিটি) সহায়তা করা হচ্ছে।

কেউ যেন বাদ না যায়-এই দৃষ্টিভঙ্গিকে গুরুত্ব দিয়ে আইএসইসি প্রকল্পটি স্থানীয় কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী, নারী এবং প্রতিবন্ধি ব্যক্তিদের ওপর বিশেষভাবে গুরুত্ব দিচ্ছে, যারা কর্মসংস্থান এবং দক্ষতা উন্নয়নে নানা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছেন। ব্র্যাক তার প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা ও দীর্ঘ অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে দক্ষতা উন্নয়ন, জীবিকা এবং জেন্ডারকে মূলধারায় সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে এই প্রকল্পের লক্ষ্য অর্জনে কাজ করছে।

এই প্রকল্পের মাধ্যমে একদিকে যেমন চাকরি প্রত্যাশী তরুণ-তরুণীরা কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের জন্য ব্র্যাকের ক্যারিয়ার হাব- এর সহায়তা পাচ্ছেন, তেমনি দক্ষ, অদক্ষ, স্বল্প শিক্ষিত বা নিরক্ষর মানুষগুলোকেও নানা রকম প্রশিক্ষণ আর সহায়তা দিয়ে স্বাবলম্বী করে তোলার জন্য কাজ চলছে।

এদের কেউ কেউ কাজ করছেন আসবাবপত্র নির্মাণ কারখানায়, কেউ শিখছেন ড্রাইভিং, কাউকে সহায়তা করা হচ্ছে তার ক্ষুদ্র ব্যবসাকে আরও সম্প্রসারিত করতে কিংবা ব্যবসায় বৈচিত্র এনে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকার কৌশল শিখতে।

প্রকল্পের আওতায় আল্ট্রা পুওর গ্র্যাজুয়েশন (ইউপিজি) কার্যক্রমের মাধ্যমে অতিদরিদ্র মানুষদের সহায়তা আর সার্বিক তত্ত্বাবধানের মধ্য দিয়ে নিজ চেষ্টায় দারিদ্র্য থেকে উত্তরণে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এদের অনেকেই এখন কৃষি কাজ, হাঁস-মুরগি ও গরু-ছাগল পালন কিংবা অন্যান্য খাত থেকে অর্থ উপার্জন করে সমাজে মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপন করছেন।

প্রকল্পের প্রধান খন্দকার ফখরুল আলম জানান, কক্সবাজারের স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে যারা মূলত কর্মসংস্থান বা প্রশিক্ষণের সঙ্গে যুক্ত নয় তাদের দক্ষতা বাড়ানো এবং উপার্যনক্ষম করে গড়ে তোলাই এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য।

আইএলও-এর তথ্য অনুসারে, কক্সবাজারে ২৬ লাখের বেশি বাংলাদেশির বাস। জাতীয় গড়ের সঙ্গে তুলনা করলে কক্সবাজারে আনুমানিক ৩৩ শতাংশ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে। শ্রমবাজারে এখানকার নারীর অংশগ্রহণ মাত্র ২৬ শতাংশ। এলাকায় মূল অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড হচ্ছে কৃষি, মাছ ধরা ও পর্যটন। তরুণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে পৌনে ৫ লাখ শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও কোনো কাজে নেই। এর মধ্যে নারীর সংখ্যা ৪ লাখের বেশি।

বাংলাদেশের অন্যতম অনুন্নত জেলা কক্সবাজারে ২৬ লাখেরও বেশি স্থানীয় মানুষের বসবাস। এখানে দারিদ্র্যের হার ৩৩ শতাংশ যা জাতীয় গড় হারের চেয়েও বেশি। উপরন্তু ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর আগমনের ফলে স্থানীয় পর্যায়ে খাদ্য নিরাপত্তা, কর্মসংস্থান এবং সামগ্রিকভাবে সমাজ ব্যবস্থায় চাপ বেড়েছে। এদিকে চাহিদা অনুযায়ী দক্ষতার অভাবে স্থানীয় তরুণ-তরুণী ও নারীরা অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানে পিছিয়ে পড়ছেন। এই বাস্তবতায় আইএসইসি প্রকল্পের আওতায় অংশগ্রহণকারীদের দক্ষতা বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান এবং স্বনির্ভরতার সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে সম্মিলিতভাবে কাজ করছে ব্র্যাক, আইএলও এবং ইউএনডিপি।

Scroll to Top