এই খবরটি পডকাস্টে শুনুনঃ
অনুর্বর একটি পাহাড়ি অঞ্চল এখন বনে পরিণত হয়েছে। ৮ বছরে রোপণ করা হয়েছে অন্তত ৪০ হাজার গাছ। এতে রয়েছে হাজার হাজার বিভিন্ন প্রজাতির গাছ, যা প্রকৃতি প্রেমীদের জন্য একটি স্বপ্নের রাজ্য হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।
শনিবার (২৫ জানুয়ারি) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরে অবস্থিত এই স্থানটি নাম কেশর পর্বত নামে পরিচিত।
হাজার হাজার গাছে ঘেরা এই পাহাড়ে রয়েছে কাশ্মীরের জাফরান ও উইলো গাছ, নেপালের রুদ্রাক্ষ, থাইল্যান্ডের ড্রাগন ফল, অস্ট্রেলিয়ার অ্যাভোকাডো, ইতালির জলপাই এবং মেক্সিকোর খেজুরের গাছ। এছাড়াও বেশ কয়েকটি প্রজাতির গাছ এখন একই পাহাড়ে জন্মে, যেখানে একসময় ঘাসও জন্মাত না।
প্রতিবেদনে বলা হয়, কেশর পর্বত ছিল একটি অনুর্বর পাথুরে পাহাড়, আর এখন এর উপর গড়ে উঠেছে একটি সবুজ বন। এর কৃতিত্ব ওয়ার্ল্ড রিসার্চার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা এবং পরিচালক ড. শঙ্কর লাল গর্গের।

২০১৫ সালে অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ড. গর্গ এবং তার পরিবার একটি অনুর্বর পাহাড়কে বনে রূপান্তর করার সিদ্ধান্ত নেন। তারা মূলত ইন্দোরের মহো শহরে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান করার জন্য নির্ধারিত জমি কিনেছিলেন। কিন্তু প্রতিষ্ঠান শুরু করার জন্য সবকিছু ঠিকঠাক হয়নি। আর তখনই তিনি পরিবেশ প্রেমীদের জন্য একটি বন তৈরির সিদ্ধান্ত নেন। আর তারপর শুরু হয় গাছ লাগানো, পানি দেওয়া, গাছপালা লালন-পালন করা।

৭৪ বছর বয়সী ড. গর্গ নিম, পিপল এবং লেবু গাছ রোপণ করে শুরু করেছিলেন তার এই যাত্রা। ধীরে ধীরে গাছের সংখ্যা এবং বৈচিত্র্য বৃদ্ধি পায়। আর সবশেষে দেখা যাচ্ছে গত আট বছরে (জুলাই ২০১৬ থেকে আগস্ট ২০২৪) ড. গর্গ পাথর এবং পাথরের উপর ৫০০ টিরও বেশি প্রজাতির ৪০ হাজার গাছ রোপণ করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে কল্পবৃক্ষ (স্বর্গের গাছ), জাফরান, রুদ্রাক্ষ, আপেল, ড্রাগন, জলপাই, লিচি, আফ্রিকান টিউলিপ এবং এলাচ ফুল ইত্যাদি।
কেশর পর্বতে সেগুন কাঠ, গোলাপ কাঠ, চন্দন কাঠ, মেহগনি, বট, শাল, অঞ্জন, বাঁশ, উইলো, দেওদার, পাইন, দহিমান, খামার এবং সিলভার ওক সহ কাঠের গাছও রয়েছে।
ড. গর্গ বলেন, ১৫ হাজার গাছ ১২ ফুটেরও বেশি লম্বা। গাছগুলোকে তারা এতই যত্ন করেন যে, কেশর পর্বতের গাছপালা অন্তত ৯৫ শতাংশ বেঁচে থাকে। এই গাছগুলোর কোনোটিকেই অতিরিক্ত সার সরবরাহ করা হয় না। বৃষ্টির পানিতে উপস্থিত নাইট্রোজেন এবং সালফার গাছের প্রয়োজনীয়তা পূরণ করে।
কেশর পর্বতের নামকরণ করা হয়েছে কাশ্মীরের পাহাড়ি অঞ্চলে জন্ম নেওয়া জাফরান উদ্ভিদ থেকে। ২০২১ সালে প্রথমবারের মতো বনে ২৫টি জাফরান ফুল ফুটেছিল। ২০২২ সালে এই সংখ্যা ধীরে ধীরে ১০০-তে পৌঁছে এবং ২০২৩ সালে পাঁচগুণ বৃদ্ধি পায়।
ড. গর্গ বলেন, আমরা ৪৩ ডিগ্রি তাপমাত্রার গরম জায়গায় জাফরান চাষ করার কৌশল শিখেছি। গাছগুলোকে ঠান্ডা পানি দিয়ে মাটির তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করি। ছায়াময় পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছিল এবং দিনে ১৮ ডিগ্রি এবং রাতে ৫ ডিগ্রি তাপমাত্রা বজায় রাখা হয়েছিল বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
কেশর পর্বতের সুগন্ধ এবং সৌন্দর্য লাল সোনার জাফরানের মতো সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ুক বলেও আশা করেন ড. শঙ্কর লাল গর্গ।