Last Updated:
Weekend Trip: কথিত আছে, একসময়ের তুঙ্গভূমি ছিল এই রসপাল। কংসাবতী ও তারাফেনি নদীর মধ্যবর্তী এলাকা নিয়ে গড়ে উঠেছিল রসপাল রাজবাড়ি।

রাজবাড়ি
বাঁকুড়া: কথিত আছে, একসময়ের তুঙ্গভূমি ছিল এই রসপাল। কংসাবতী ও তারাফেনি নদীর মধ্যবর্তী এলাকা নিয়ে গড়ে উঠেছিল রসপাল রাজবাড়ি। ইতিহাসের পাতা থেকেই জানা যায়, প্রায় ২১০ বছর আগে ব্রিটিশ শাসনকালে রসপালের রাজা শশাঙ্ক নারায়ণ তুঙ্গ দেও-র আমলে জমিদারি চলে যায়।
ইংরেজ রাজত্বের বিরুদ্ধে বাঁকুড়ার রাইপুরের কাছে রসপাল রাজবংশ একদা জড়িয়েছিল সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রামে। বাংলার বিপ্লবীরা কলকাতা আর মেদিনীপুরের বাইরে যে সব জায়গায় গোপন আস্তানা তৈরি করেন, তার অন্যতম ছিল বাঁকুড়ার ছেঁদাপাথর। সেই বিপ্লবীদের নিয়মিত সাহায্য করতেন অম্বিকানগরের রাজা রাইচরণ ধবল আর রসপালের রাজা কালীপ্রসন্ন দেব। ১৯০৮-এ কৃষ্ণনগর ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে জবানবন্দি দেওয়ার সময়ে আলিপুর বোমা মামলায় অভিযুক্ত বিপ্লবী শৈলেন্দ্রনাথ ঘোষ জানান, ছেঁদাপাথরের প্রশিক্ষণ শিবিরে রসপাল রাজপরিবারের সদস্যেরা নিয়মিত যোগ দিতেন।
রাজবাড়ির যেটুকু ধ্বংসাবশেষ আজও আছে, তা থেকেও এই অনুমান করা যায়। পশ্চিমদিকের অন্দরমহলের সঙ্গে দু’টি গোপন কক্ষ পরবর্তী কালে নির্মিত হয়েছে। আঞ্চলিক ইতিহাস গবেষক সজলকান্তি মণ্ডলের মতে, “ওই দু’টি কক্ষে বিপ্লবীদের গোপন সভা বসত বলে অনুমান করা যায়।” শুধু বিপ্লবীরাই নয়, রাজপরিবারের প্রতিরোধে রসপালে যোগ দিয়েছেন স্থানীয় লোহার, বাগদি, ভূমিজ, শবর প্রজারাও। সম্ভবত রসপালের রাজা মুকুটনারায়ণের আমলে রাজবাড়ির কাছে জঙ্গলের ধারে নিষ্কর হাটের প্রবর্তন হয়, যেখানে শুধু বনজ সম্পদ বিক্রি হত। আজও প্রতি সোমবার সেই হাটের ধারা অক্ষুণ্ণ আছে।
আঞ্চলিক ইতিহাসের গুরুত্ব মাথায় রেখে রসপালকে কেন্দ্র করে একটি নতুন ভ্রমণ-পথ তৈরির কাজ শুরু হয়েছে স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে। রাইপুরের বিডিও দীপঙ্কর দাস জানালেন, “রাজবাড়ি ও মন্দিরটির সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। মুকুটমণিপুরে যে সব পর্যটক আসেন, তাঁরা স্বচ্ছন্দে এই রাজবাড়িটি দেখে যেতে পারেন। পিকনিকও করা যেতে পারে। তার পরিকাঠামো গড়ে তোলার কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে।” না হয় চড়ুইভাতির ছোঁয়াতেই জাগল ঘুমিয়ে পড়া ইতিহাসের কলকাকলি।
নীলাঞ্জন ব্যানার্জী
Kolkata,West Bengal
July 01, 2025 2:09 PM IST