Last Updated:
রাতে বিভিন্ন ধরনের অচেনা আওয়াজে ঘুম ভেঙে যায় তাদের, তাই বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তারা।

প্রতিকী
বাঁকুড়া: বিভিন্ন অপরিচিত শব্দ কানে ভেসে আসছিল, ঘুম ভাঙছিল, নিদ্রাহীন ভাবে রাত কাটছিল, এমনই সব ‘প্রেতাত্মা বা ভূতের’ আতঙ্ক তৈরি হয়েছিল গ্রামে। ‘অলৌকিক শক্তি ভর করেছে’ আতঙ্কে গ্রাম ছাড়ার উদ্যোগ নিয়েছিলেন অনেকেই, সেই আতঙ্ক কাটাতে মাঠে নামতে হয় প্রশাসনের কর্তাদের। সম্প্রতি গ্রামে যায় বিজ্ঞান মঞ্চও। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে , একই পরিবারে পর পর কয়েকটি মৃত্যুর ঘটনা ঘিরে বাঁশকেটিয়া গ্রামে আতঙ্ক তৈরি হয়েছিল, যা থেকে পড়শিদের অনেকেই গ্রাম ছাড়ার উদ্যোগ নিয়েছিলেন।
তা আটকাতেই সম্প্রতি ওই গ্রামে যান ব্লক প্রশাসনের কর্মকর্তারা থেকে বিজ্ঞান মঞ্চের সদস্যেরা। তারপরেই গ্রাম ছাড়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন বাসিন্দারা। ইঁদপুরের ভেদুয়াশোল পঞ্চায়েতের বাঁশকেটিয়া তফসিলি জাতি অধ্যুষিত প্রান্তিক গ্রাম কৃষিকেন্দ্রিক এই গ্রামে পরিবারের সংখ্যা প্রায় চল্লিশটি। বাসিন্দাদের অধিকাংশই কৃষি শ্রমিক থেকে দিনমজুর। গ্রামে একটি পরিবারের পর পর মৃত্যুর ঘটনায় আতঙ্ক তৈরি হয়, পড়শিদের মনে হতে থাকে ‘প্রেতাত্মা বা ভূতে পেয়ে’ এইসব মৃত্যুর ঘটনা। সেই থেকেই পড়শিরা আতঙ্কিত হন।
স্থানীয় ও প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, অতিমারির সময়কালে এক যুবকের মৃত্যু হয়। ভাইয়ের মৃত্যুর পর, গত একবছর আগে ওই পরিবারের প্রৌঢ়ের মৃত্যু হয়। সম্প্রতি ওই প্রৌঢ়ের বছর সতেরোর বড় ছেলের মৃত্যু হতেই আতঙ্ক দানা বাঁধে। একই পরিবারের দুই ভাই ও এক কিশোরের মৃত্যু হতেই গ্রামে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। তবে প্রশাসনের দাবি, তিনটি মৃত্যুই স্বাভাবিক মৃত্যু।
আতঙ্কে বাড়ি ছেড়ে ছোট্ট সন্তানদের নিয়ে আত্মীয় বাড়িতে ঠাঁই নেন মৃত যুবকের স্ত্রী ও প্রৌঢ়ের স্ত্রীও। মৃতদের বাড়ি ফাঁকা পড়ে। পরপর মৃত্যুর ঘটনায় পড়শিরা আতঙ্কে বাড়ি ছাড়ার উদ্যোগ নেওয়ার খবর পৌঁছায় পুলিশ প্রশাসনের কাছে। পুলিশ যেতেই বাসিন্দারা বিভিন্ন অলৌকিক শক্তির গল্প শুনিয়ে, পড়শিদের মধ্যে এধরনের ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন। মৃতদের প্রতিবেশীরা দাবি করেন, ভূতে প্রেতেই এধরনের মৃত্যুর ঘটনা। রাতে বিভিন্ন ধরনের অচেনা আওয়াজে ঘুম ভেঙে যায় তাদের, তাই বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তারা।
বাসিন্দাদের আতঙ্ক কাটাতে প্রশাসন গ্রামে সচেতনতা শিবিরের আয়োজন করে। সম্প্রতি গ্রামে যান ইন্দপুরের বিডিও সুমন্ত ভৌমিক, ওসি মনোরঞ্জন নাগ, পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের ইঁদপুর বিজ্ঞান কেন্দ্রের সভাপতি সুদীপা বন্দোপাধ্যায়, সম্পাদক মোনালিসা পাত্র, বিজ্ঞান কেন্দ্রের সদস্য চিকিৎসক রামেশ্বর মুখোপাধ্যায় প্রমুখ। প্রশাসনের কর্তা থেকে বিজ্ঞান মঞ্চের সদস্যেরা বাসিন্দাদের ভীতি কাটাতে বিভিন্ন যুক্তি উপস্থাপন করেন।
বিজ্ঞান কেন্দ্রের সম্পাদক, মোনালিসা পাত্র জানান, একই পরিবারের পর পর মৃত্যুর ঘটনায় আতঙ্ক ছড়ায় বাসিন্দাদের মধ্যে।ঘটনার পিছনে অলৌকিক কিছুই না, তা বাসিন্দাদের বোঝানো হয়। রাতে অন্য কিছুর শব্দ থেকেই, ভয়ের সৃষ্টি হয়। ওই পাড়া অন্ধকারাচ্ছন্ন হওয়ায় তা থেকেও বাসিন্দাদের মধ্যে ভয়ের উদ্রেক হতে পারে।বাসিন্দাদের যুক্তি দিয়ে বোঝানো হয়েছে। শিবিরের পর বাসিন্দারা জানিয়েছেন আতঙ্ক কিছুটা কেটেছে।
নীলাঞ্জন ব্যানার্জী
Kolkata,West Bengal
June 16, 2025 6:54 PM IST