Last Updated:
অপারেশন সিঁদুরের পাল্টা জবাব দিতে গিয়ে সীমান্তবর্তী এলাকায় বসবাসকারী সাধারণ ভারতীয় নাগরিকদেরই টার্গেট করেছিল পাকিস্তানের সেনাবাহিনী৷

মাত্র একমাস আগেই জন্মদিন ছিল দুই যমজ ভাইবোনের৷ ১২ বছরে পা দিয়েছিল জোয়া এবং আয়ান খান৷ কিন্তু কে জানত, একমাসের মধ্যেই সীমান্তের ওপার থেকে উড়ে আসা পাক সেনার গোলা তাদেরকেই নিশানা করবে!
অপারেশন সিঁদুরের পাল্টা জবাব দিতে গিয়ে সীমান্তবর্তী এলাকায় বসবাসকারী সাধারণ ভারতীয় নাগরিকদেরই টার্গেট করেছিল পাকিস্তানের সেনাবাহিনী৷ গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরেই জম্মু কাশ্মীরে নিয়ন্ত্রণরেখার ওপার থেকে জনবসতিপূর্ণ এলাকায় হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান৷ গত ৭ মেপুঞ্চে পাক সেনার ছোড়া একটি মর্টার এসে পড়ে জোয়া, আয়ানদের ভাড়া বাড়িতে৷ মর্টার হামলায় গুরুতর আহত হয় জোয়া এবং আয়ান৷ কয়েক মিনিটের ব্যবধানে তাদের দু জনেরই মৃত্যু হয়৷
শুধু জোয়া এবং আয়ান নয়, তাদের বাবা রামিজ খানও পাক হামলায় আহত হয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন৷ নিজের দুই সন্তানেরই যে মৃত্যু হয়েছে, তা এখনও জানেনই না হতভাগ্য ওই ব্যক্তি৷ অন্যদিকে আয়ান এবং জোয়ার মা উরষা খান কথা বলার শক্তিটুকুও হারিয়েছেন৷ একদিকে একসঙ্গে যমজ সন্তানকে হারানোর শোক, অন্যদিকে হাসপাতালে স্বামীর জীবন মৃত্যুর লড়াইয়ের সাক্ষী থাকা, স্বাভাবিক ভাবেই বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছেন জোয়া এবং আয়ানের মা৷ রামিজ খানের লিভারে পাক মর্টারের ধারালো অংশের আঘাত লেগেছে বলে খবর৷ জম্মুর হাসপাতালের আইসিইউ-কে রয়েছেন রামিজ৷ সন্তানদের মৃত্যুর খবর পেলে তিনি সেই ধাক্কা সামলাতে পারবেন না, এই আশঙ্কা থেকেই রামিজ খানকে কিছু জানানো হয়নি৷
জানা গিয়েছে, মাত্র দু মাস আগেই ছেলেমেয়েদের ভাল স্কুলে পড়ানোর জন্য পুঞ্চে এসে থাকতে শুরু করেন রামিজ এবং তাঁর স্ত্রী৷ পাকিস্তানের মর্টার হামলায় তাঁদের দুই আত্মীয়েরও মৃত্যু হয়েছে৷
তাঁদের পরিবারের ঘনিষ্ঠ দুই আত্মীয় বলেন, ‘জোয়ার গুরুতর আঘাত লেগেছিল৷ আয়ানের পাকস্থলী বেরিয়ে আসে৷ আমাদের পরিচিত একজন ওর জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করেছিলেন, আমরা আশা করছিলাম আয়ান হয়তো বেঁচে যাবে৷ কিন্তু কয়েক মিনিটের মধ্যেই ওদের মৃত্যু হয়৷ ওই আত্মীয়ই বলেন, দুই ভাইবোনই খুব পরিণত ছিল৷ রামিজ ছেলেমেয়েকে কোনওদিন বকেননি পর্যন্ত৷ ছেলেমেয়ের মৃত্যুর খবর জানতে পারলে উনি হয়তো আর বাঁচবেন না৷’
ঘটনার দিন রাতের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিয়ে ওই আত্মীয় জানান, ‘কয়েক ঘণ্টা ধরে পাকিস্তানের দিক থেকে গোলাগুলি ছোড়া হচ্ছিল৷ হাসপাতালে পৌঁছতেই আমাদের অনেকটা সময় লেগে যায়৷ প্রথম জম্মু তার পর রাজৌরির পাসপাতালে পাঠানো হয়৷’ রামিজ খানকে যাতে দিল্লি নিয়ে গিয়ে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়, কেন্দ্রে কাছে সেই আর্জি জানিয়েছে তাদের পরিবার৷ ওই পরিবারের আরও আর্জি, এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষের নিরাপত্তার জন্য কোনও স্থায়ী পদক্ষেপ করুক সরকার৷ গত ৭ মে থেকে একটানা পাক হামলার পর অবশেষে ঘোষণা করা হয়েছে সংঘর্ষবিরতি ঘোষণা করা হয়েছে৷ গত দু দিন ধরে রাতে আর নতুন করে হামলা জম্মু কাশ্মীর সহ কোথাও হামলা হয়নি৷ যদিও সংঘর্ষ বিরতি শুরুর আগেই পাক হামলার বলি হয় যমজ ওই ভাইবোন৷
Kolkata,West Bengal