Last Updated:
দীর্ঘ ৬২ বছর ধরে ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার অন্যতম স্তম্ভ হিসেবে কাজ করার পর ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে চণ্ডীগড় ঘাঁটি থেকে শেষবারের মতো উড়বে এই বিমান।

সাহ্নিক ঘোষ, কলকাতা: অবশেষে ভারতীয় বায়ুসেনা থেকে বিদায় নিতে চলেছে মিগ-২১ — একসময় দেশের আকাশরক্ষার প্রধান ভরসা, আর পরে ‘ফ্লাইং কফিন’ নামে কুখ্যাত হওয়া এই যুদ্ধবিমান। দীর্ঘ ৬২ বছর ধরে ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার অন্যতম স্তম্ভ হিসেবে কাজ করার পর ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে চণ্ডীগড় ঘাঁটি থেকে শেষবারের মতো উড়বে এই বিমান।
১৯৬৩ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে আনা মিগ-২১ ছিল ভারতের প্রথম সুপারসনিক যুদ্ধবিমান। স্বল্প খরচে দ্রুত গতি এবং আকাশযুদ্ধে কার্যক্ষমতার কারণে খুব দ্রুত ভারতীয় বায়ুসেনার নির্ভরতার প্রতীক হয়ে ওঠে। একসময় প্রায় ৮০০-র বেশি মিগ-২১ ভারতীয় বায়ুসেনায় ছিল, যা একসঙ্গে বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ।
মিগ-২১ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সামরিক অভিযানে অংশ নিয়েছে—১৯৬৫ ও ১৯৭১ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ, ১৯৯৯ সালের কার্গিল যুদ্ধ এবং ২০১৯ সালের বালাকোট স্ট্রাইক-এও এই যুদ্ধবিমান সক্রিয়ভাবে ব্যবহৃত হয়েছিল। এতদিনে এই বিমান ভারতীয় আকাশে প্রায় ৬০ লাখ ঘণ্টা উড়েছে এবং ১,৬০০-র বেশি পাইলট এতে ট্রেনিং নিয়েছেন।
তবে গৌরবের পাশাপাশি মিগ-২১-কে ঘিরে রয়েছে একাধিক বিতর্ক ও দুর্ঘটনার কালো ইতিহাস। ১৯৭০-এর দশক থেকে ক্র্যাশের ঘটনা বাড়তে থাকে। বিগত কয়েক দশকে ৪০০-র বেশি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় ২০০ জন বায়ুসেনা অফিসার ও পাইলট। পুরনো প্রযুক্তি, যন্ত্রাংশের অভাব এবং সীমিত আপগ্রেডের কারণেই ধীরে ধীরে এটি হয়ে ওঠে ‘ফ্লাইং কফিন’—একটা উড়ন্ত বিপদ। বর্তমানে ভারতের হাতে মিগ-২১-এর কেবল একটি স্কোয়াড্রন (২৩ নম্বর ‘প্যান্থার্স’ স্কোয়াড্রন) রয়েছে, যেটি এখন চূড়ান্ত অবসরের পথে। এর পর আর কোনও মিগ-২১ থাকবে না ভারতীয় বায়ুসেনার পরিষেবায়।
এই যুদ্ধবিমানের অবসরের পর বায়ুসেনার সক্রিয় ফাইটার স্কোয়াড্রনের সংখ্যা কমে দাঁড়াবে মাত্র ২৯-এ, যা গত পাঁচ দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন। যদিও সরকার ইতিমধ্যেই দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি হালকা যুদ্ধবিমান ‘তেজস’ এবং বিদেশ থেকে কেনা রাফাল ও সুখোইয়ের মতো আধুনিক ফাইটার জেট দিয়ে এই ঘাটতি পূরণের চেষ্টা করছে।
Kolkata,West Bengal
July 23, 2025 10:23 AM IST