Last Updated:
২৬ সংখ্যার সঙ্গে এর ঘনিষ্ঠ যোগ রয়েছে বলে মনে করে থাকেন সংখ্যাতত্ত্ববিদরা। অ্যাঞ্জেল নম্বর ২৬ সততা, বলিষ্ঠ চরিত্র এবং সদর্থক পরিবর্তনের ইঙ্গিতবাহী। এই সবকটি দিক বার বার প্রতিফলিত হয়েছে ড. সিংয়ের মধ্যে।
নয়াদিল্লি: কোনও ব্যক্তির জীবনের কিছুটা ধরা থাকে তাঁর কাছের মানুষদের স্মৃতিতে, আর বাকিটা পরিসংখ্যান বই আর কিছু নয়। সেই পরিসংখ্যানের পরতে পরতে খেলা করে চলে কিছু সংখ্যা, জন্ম তারিখ থেকে মৃত্যুর দিন পর্যন্ত। অনেকেই বিশ্বাস করতে চাইবেন না, কিন্তু আমাদের জীবনে কখনও কখনও এই সংখ্যার যোগ অতি নিবিড় হয়ে ওঠে। ঠিক যেমনটা দেখা গেল সদ্য প্রয়াত দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংয়ের ক্ষেত্রেও।
আরও পড়ুন– এই ইন্টার কলেজেই পড়াশোনা করেছিলেন মনমোহন সিং, প্রাক্তনীর প্রয়াণে অশ্রুসিক্ত হলদোয়ানি
ড. মনমোহন সিং ১৯৩২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর অবিভক্ত ভারতের পঞ্জাব প্রদেশের গাহ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। এই অংশটি এখন পাকিস্তানে। দেশ ভাগ হলে মনমোহন সিংয়ের পরিবার অমৃতসরে এসে বসতি স্থাপন করে। পাকিস্তানের যে গ্রামে মনমোহন সিংয়ের জন্ম হয়েছিল সেখানে তাঁর নামে একটি স্কুলও রয়েছে। এটি ‘মনমোহন সিং গভর্নমেন্ট বয়েজ স্কুল’ নামে পরিচিত। এই স্কুলেই ডক্টর মনমোহন সিং তাঁর প্রাথমিক পড়াশোনা করেন। একসময় অন্ধকারে বসবাস করা এই গ্রাম বর্তমানে আলোর মুখ দেখেছে, একটি আদর্শ গ্রামে পরিণত হয়েছে। এখানকার মানুষের স্মৃতিতে ড. মনমোহন সিংয়ের নাম চির উজ্জ্বল থাকবে সন্দেহ নেই।
আরও পড়ুন– প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং প্রয়াত, শোকপালন দেশ জুড়ে, শেষকৃত্য কখন ও কোথায় হবে?
ড. মনমোহন সিং ১৯৪৮ সালে পঞ্জাবে ম্যাট্রিকুলেশন সম্পন্ন করেন। এর পর তাঁর শিক্ষাজীবন তাঁকে পঞ্জাব থেকে কেমব্রিজ, যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যায়, যেখানে তিনি ১৯৫৭ সালে অর্থনীতিতে প্রথম শ্রেণীতে অনার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। ড. সিং তারপর ১৯৬২ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের নেফিল্ড কলেজ থেকে অর্থনীতিতে ‘ডি ফিল’ ডিগ্রি অর্জন করেন। মনমোহন সিংয়ের মেয়ে দামন সিং তাঁর বইয়ে বাবার তৎকালীন অবস্থার কথা লিখেছেন। জানিয়েছেন কীভাবে তাঁকে অর্থের অভাবের মুখে পড়তে হয়েছে। তার পরও ড. সিং সততা বিসর্জন দেননি। সম্ভবত এই পরিস্থিতি এবং জীবনসংগ্রামই ভারতের গভর্নর, অর্থমন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশের অর্থনীতিকে নতুন দিকনির্দেশনা দেওয়ার কাজে এসেছিল। মনমোহন সিং বরাবরই তাঁর সরল ও শান্ত স্বভাবের জন্য পরিচিত ছিলেন। নব্বইয়ের দশকের গোড়ার দিকে ভারতকে উদারীকরণের পথে আনার জন্য তিনি সর্বদা স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
২৬ সংখ্যার সঙ্গে এর ঘনিষ্ঠ যোগ রয়েছে বলে মনে করে থাকেন সংখ্যাতত্ত্ববিদরা। অ্যাঞ্জেল নম্বর ২৬ সততা, বলিষ্ঠ চরিত্র এবং সদর্থক পরিবর্তনের ইঙ্গিতবাহী। এই সবকটি দিক বার বার প্রতিফলিত হয়েছে ড. সিংয়ের মধ্যে। জওহরলাল নেহরুর পর তিনিই প্রথম ভারতীয় যিনি টানা দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হন। বরাবর সিদ্ধান্তে অটল থাকার জন্য সুপরিচিত ছিলেন তিনি। যখন তিনি আমেরিকার সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তিকে দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন, তখন তিনি তার সরকারকে ঝুঁকিতে ফেলেন। আসলে, তিনি ঐকমত্যের পক্ষে ছিলেন। তবে তাঁর সবচেয়ে বিশেষ সম্পদ ছিল চারিত্রিক সরলতা। ২০২৪ সালের অন্তিম লগ্নে ২৬ ডিসেম্বর শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করলেন তিনি। জন্ম এবং মৃত্যু- জীবনের অমোঘ দুই পরিণতিতেই ২৬ সংখ্যা তাঁর হাত ধরে থাকল।
Kolkata,West Bengal
December 27, 2024 10:32 AM IST