Last Updated:
গ্রামের নাম “টুনি লাইট গ্রাম”! উত্তরবঙ্গের এই ছোট্ট গ্রামের আলোর রোশনাইতে লুকিয়ে কঠিন লড়াইয়ের গল্প। শুধু কালীপুজোতেই নয় ,সারা বছরই প্রতিটি বাড়িতেই জ্বলে টুনি লাইট।

দীপাবলীর গ্রাম
সুরজিৎ দে , জলপাইগুড়ি: গ্রামের নাম “টুনি লাইট গ্রাম”! উত্তরবঙ্গের এই ছোট্ট গ্রামের আলোর রোশনাইতে লুকিয়ে কঠিন লড়াইয়ের গল্প। শুধু কালীপুজোতেই নয় ,সারা বছরই প্রতিটি বাড়িতেই জ্বলে টুনি লাইট। হরেক রকম রঙের আলোয় আলোকিত এই গ্রামে কেন অকাল দীপাবলি পালন হয় জানলে অবাক হবেন। বিজয়া দশমী পেরোলেই গোটা বাংলা মেতে ওঠে কালীপুজোর প্রস্তুতিতে। চারপাশে আলো, টুনি বাল্ব, উৎসবের আমেজ। কিন্তু উত্তরবঙ্গের ধূপগুড়ি মহাকুমার এই গ্রামে টুনি বাল্ব জ্বলে সারা বছর। না, কোনও উৎসব নয়, এ এক লড়াই—বেঁচে থাকার লড়াই।
ঝাড়আলতা ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দারা প্রতিদিন রাতে ‘অকাল দীপাবলি’ পালন করেন বাধ্য হয়েই। মরাঘাট জঙ্গলের পাড় ঘেঁষে থাকা এই গ্রামে প্রায়ই ঢুকে পড়ে বন্য হাতির দল। মুহূর্তে নষ্ট করে দেয় দিনের পর দিন ঘাম ঝরানো ফসল। তাই গ্রামের মানুষ নিজেরাই বেছে নিয়েছেন অভিনব পদ্ধতি—ফাঁকা মাঠ জুড়ে টাঙানো হয়েছে লাল, নীল, সবুজ, হলুদ রঙের টুনি বাল্ব। দিনের বেলায় চার্জ হয় ব্যাটারি, রাতে সেই আলোই জ্বলে বিঘার পর বিঘা জমিতে। দূর থেকে দেখলে মনে হয়, যেন চলেছে দীপাবলির রাতভর উৎসব।
কিন্তু, এ উৎসবে নেই আনন্দ, আছে শুধুই আতঙ্ক। নেই বাজি, আছে সতর্কতা। গ্রামবাসীরা নিজেরাই বানিয়েছেন আলোয় ভরা এই সিস্টেম—পুরনো মোবাইল ব্যাটারি, গুনা তার আর ছোট ছোট বৈদ্যুতিন বোর্ডই এখন তাদের অস্ত্র। রাত জেগে পাহারা দেন অনেকেই। কেউ বলেন, “হাতি ঢুকলে শুধু ফসল নয়, জীবনও অনিশ্চয়তায় পড়ে। আলোটা যেন একটা ঢাল।” এই গ্রাম দেখিয়ে দেয়, প্রযুক্তি আর চাতুরীর মেলবন্ধন কীভাবে হতে পারে অস্তিত্বের রক্ষাকবচ। কালীপুজো আসে-যায়, কিন্তু ঝাড়আলতার মাঠে টুনি বাল্বের আলো নেভে না। কারণ এখানে প্রতিরাতে চলে এক নিঃশব্দ যুদ্ধ—আলোয় মোড়া সেই সংগ্রামের নামই অকাল দীপাবলি!
Kolkata [Calcutta],Kolkata,West Bengal