Explainer: যদি পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডারের উপরে BrahMos-এর মতো মিসাইল পড়ে, তাহলে কী হবে?

Explainer: যদি পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডারের উপরে BrahMos-এর মতো মিসাইল পড়ে, তাহলে কী হবে?

ভারত যে প্রয়োজনে তার শক্তি ব্যবহার করতে দ্বিধা বোধ করবে না, একের পর এক প্রত্যাঘাত তা প্রমাণ করে দিয়েছে। সিরসার দিকে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ, প্রতিশোধ হিসেবে BrahMos, হ্যামার এবং স্ক্যাল্প ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ১০টি পাকিস্তানি বিমানঘাঁটিতে ভারতের বিশাল অভিযান যে অত্যন্ত সফল, তা প্রতিবেশী দেশের যুদ্ধবিরতির অনুনয়েই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। একই সঙ্গে তা পারমাণবিক যুদ্ধের উত্তেজনাও ডেকে এনেছে। রবিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পোস্টে সে কারণেই পারমাণবিক যুদ্ধের আশঙ্কার প্রতি ইঙ্গিত ধরা পড়েছে। যুদ্ধবিরতিকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, ভারত ও পাকিস্তান শক্তি, প্রজ্ঞা এবং ধৈর্য দেখিয়েছে। বর্তমান আগ্রাসন বন্ধ করার সময় এসেছে, যা এত মানুষের মৃত্যু ও ধ্বংসের কারণ হতে পারত। লক্ষ লক্ষ নিরীহ মানুষ মারা যেতে পারত!

এই আবহে অবধারিত ভাবেই একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে! যদিও তা সম্পূর্ণরূপে একটি কাল্পনিক প্রশ্ন, এমন কোনও পরিস্থিতির উদ্ভব এখনও হয়নি, তবে এটি সেই সব গোপন স্থানগুলো সম্পর্কে কৌতূহল জাগিয়ে তোলে, যেখানে পারমাণবিক অস্ত্র নিরাপদে রাখা হয়। BrahMos-এর মতো সুপারসনিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র যদি প্রতিবেশী দেশের পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডারের উপরে পড়ে, তাহলে কী হবে? যদি তা ঘটে, তাহলে কি এই বোমাগুলো বিস্ফোরিত হতে শুরু করবে না কি তেজস্ক্রিয় বিকিরণ শুরু হবে? এর ফলাফল কী হবে?

News18 AI-কে এই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেছিল। যে উত্তরগুলো উঠে এসেছে, তা এখানে দেওয়া হল। তথ্য বলছে যে পাকিস্তান তার দেশের চারটি স্থানে কঠোর নিরাপত্তার অধীনে পারমাণবিক অস্ত্র মজুত করেছে। BrahMos একটি সুপারসনিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র। এটি কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে শত শত কিলোমিটার ভ্রমণ করতে পারে এবং লক্ষ্যবস্তুতে নির্ভুল ভাবে আঘাত হানতে পারে। ইতিমধ্যেই এক ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্র পাকিস্তানের চাকলালা বিমানঘাঁটি পর্যুদস্ত করেছে। এর কাছেই পাকিস্তানের আর্মি স্ট্র্যাটেজিক ফোর্সেস কমান্ডের (ASFC) সদর দফতর অবস্থিত, যা দেশের পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার রক্ষণাবেক্ষণ করে।

প্রশ্ন: পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্রের মজুদ সম্পর্কে কী বলা হয়, সেগুলো কোথায়?

উত্তর: পাবলিক ডোমেনে এই বিষয়ে যা পাওয়া যায় তা বিশেষজ্ঞদের তথ্যের উপর ভিত্তি করে সংগৃহীত। সংবাদমাধ্যমেও এই তথ্যই প্রকাশিত হয়েছে। সেই অনুসারে, পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্র চারটি স্থানে সংরক্ষিত থাকতে পারে।

মাসরুর বিমানঘাঁটি (করাচির কাছে): মিরাজ III এবং V স্কোয়াড্রন এখানে মোতায়েন করা হয়েছে। কাছাকাছি ভূগর্ভস্থ গুদামের সুবিধা থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

সারগোধা গ্যারিসন – এটি একটি প্রধান ক্ষেপণাস্ত্র এবং অস্ত্র সংরক্ষণের স্থান হিসাবে বিবেচিত হয়, যেখান থেকে F-16 বিমান পারমাণবিক অস্ত্র বহন করতে পারে।

ভোলারি বিমানঘাঁটি (সিন্ধু) – এটি একটি নতুন বিমানঘাঁটি যেখানে চরম নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিলক্ষিত হয়েছে, যা ইঙ্গিত দেয় যে এটি একটি পারমাণবিক অস্ত্র সংরক্ষণের স্থান হতে পারে।

বেলুচিস্তানে ভূগর্ভস্থ সুবিধা – এখানে একটি ভূগর্ভস্থ কমপ্লেক্স চিহ্নিত করা হয়েছে, যা ক্ষেপণাস্ত্র এবং পারমাণবিক অস্ত্র সংরক্ষণের জন্য ব্যবহার করা হতে পারে।

তবে, শুধু পাকিস্তান নয়, সমস্ত পারমাণবিক শক্তিধর দেশ তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন স্থানে তাদের পারমাণবিক অস্ত্র ছড়িয়ে রাখে। যাতে যে কোনও বিপদের ক্ষেত্রে দ্রুত পদক্ষেপ করা যায়।

Explainer: যদি পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডারের উপরে BrahMos-এর মতো মিসাইল পড়ে, তাহলে কী হবে?

Photo: AFP

প্রশ্ন: BrahMos-এর মতো ক্ষেপণাস্ত্র কত দ্রুত চলে এবং লক্ষ্যবস্তুর উপর এর কী প্রভাব পড়ে?

উত্তর: BrahMos একটি সুপার-সনিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র, যার গতি ২.৮-৩.০ ম্যাক পর্যন্ত যায়। ১টি ম্যাক ঘণ্টা ১২৩৪.৮ কিলোমিটার গতির সমান। এই ক্ষেপণাস্ত্রটি ২০০-৩০০ কেজি ওজনের উচ্চ বিস্ফোরক ওয়ারহেড বহন করতে পারে এবং ৩০০-৮০০ কিলোমিটার পর্যন্ত পাল্লা দিতে পারে। যখন এটি লক্ষ্যবস্তুর উপর পড়ে, তখন সেখানে বিশাল ধ্বংস ঘটায়।

প্রশ্ন: পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্রের ভাণ্ডারে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হলে কী হবে?

উত্তর: পারমাণবিক অস্ত্র সাধারণত অতি-উচ্চ নিরাপত্তা সহ রাখা হয়, এই স্টোরেজগুলোকে বলা হয় শক্ত ভূগর্ভস্থ বাঙ্কার বা বিশেষ অস্ত্র সংরক্ষণ এলাকা (SWSA)। যদি একটি অত্যন্ত বিস্ফোরক ক্ষেপণাস্ত্র দ্রুত এসে সেখানে পড়ে, তাহলে কোনও পারমাণবিক বিস্ফোরণ হবে না। কারণ একটি সাধারণ ক্ষেপণাস্ত্র বা বোমার আক্রমণের কারণে একটি পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরিত হতে পারে না। কেন না, একটি পারমাণবিক বোমা কোনও ভৌত বিস্ফোরণের মাধ্যমে বিস্ফোরিত হয় না, বরং একটি সুনির্দিষ্ট ইলেকট্রনিক ক্রম এবং বিস্ফোরণ কোডের মাধ্যমে বিস্ফোরিত হয়। এর জন্য অনেক স্তরের নিরাপত্তা ইন্টারলক রয়েছে। সেই কারণেই যদি কোনও শত্রুর ক্ষেপণাস্ত্র সেই স্থানে পড়ে, বড় জোর খুব বেশি পরিমাণে তেজস্ক্রিয় লিক হতে পারে। এতে মানুষের শারীরিক ক্ষতি হবে, কিন্তু পারমাণবিক বিস্ফোরণ হবে না।

এমনকি যদি পারমাণবিক অস্ত্রের গুদামে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয় বা আগুন লাগার মতো দুর্ঘটনা ঘটে, তাহলেও সেখানে পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণের সম্ভাবনা প্রায় নগণ্য। তবে, বিকিরণ অবশ্যই ঘটতে পারে।

প্রশ্ন: এত দ্রুত এবং কার্যকর এই ক্ষেপণাস্ত্র আক্রমণে পারমাণবিক বোমার তেজস্ক্রিয় উপাদান বেরিয়ে এলে কী হবে?

উত্তর: এর প্রভাব একটি ‘ডার্টি বম্ব’-এর মতো হতে পারে। আশেপাশের এলাকা তেজস্ক্রিয় বিকিরণে দূষিত হয়ে যাবে। মানুষ এবং পরিবেশের উপর দীর্ঘমেয়াদী বিপজ্জনক প্রভাব পড়বে। আশেপাশের এলাকা সেক্ষেত্রে অবিলম্বে খালি করতে হবে।

প্রশ্ন: যদি শত্রু ইচ্ছাকৃতভাবে বাঙ্কার বাস্টার এবং থার্মোবারিক অস্ত্র দিয়ে আক্রমণ করে?

উত্তর: যদি আক্রমণটি সুপার-হাই পেনেট্রেশন বাঙ্কার বাস্টার মিসাইল বা থার্মোবারিক বোমা দিয়ে হয়, তাহলে তা অধিক মাত্রায় তেজস্ক্রিয় লিক এবং বিষক্রিয়া ঘটতে পারে। তবে তা সত্ত্বেও কোনও পারমাণবিক বিস্ফোরণ হবে না। এই ভয়ের কারণে, সারা বিশ্বেই এই ধরনের গুদামগুলো খুব গভীরে তৈরি করা হয়।

প্রশ্ন: নিউক্লিয়ার কমান্ড কী করে?

উত্তর: নিউক্লিয়ার কমান্ড হল যে কোনও দেশের কমান্ড কাঠামো, যা দেশের পারমাণবিক অস্ত্র স্থাপন, নিয়ন্ত্রণ, পরিচালনা এবং ব্যবহারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়। এর কাজ হল কখন, কোথায় এবং কীভাবে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করা উচিত তার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

নিউক্লিয়ার কমান্ডের প্রধান কাজ:

– দেশের সমস্ত পারমাণবিক অস্ত্র এবং তাদের সঙ্গে সম্পর্কিত ক্ষেপণাস্ত্র, বোমারু বিমান এবং সাবমেরিন নিয়ন্ত্রণ করা।

– নিরাপদ স্থানে পারমাণবিক অস্ত্র রাখা, তাদের নিরাপত্তা বজায় রাখা এবং বিপদের সময় নিরাপদ স্থাপনা নিশ্চিত করা।

– যুদ্ধ বা জরুরি অবস্থার ক্ষেত্রে পারমাণবিক হামলা চালানো বা না চালানোর নির্দেশ দেওয়া।

– শত্রুর আক্রমণ বা পারমাণবিক হুমকির ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ার ব্যবস্থা করা।

প্রশ্ন: কোনও দেশের পারমাণবিক অস্ত্রের ভাণ্ডারে কি কোনও দুর্ঘটনা ঘটেছে?

উত্তর: হ্যাঁ, এটা দুবার ঘটেছে। এটি প্রথম সোভিয়েত ইউনিয়নে ১৯৮৬ সালে ঘটেছিল। এই দুর্ঘটনাটি ঘটেছিল সেভেরোমোর্স্কে। পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র ডিপোতে দুর্ঘটনাক্রমে আগুন লেগে যায়। পারমাণবিক অস্ত্র বহনকারী ১৬টি ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস হয়। কোনও পারমাণবিক বিস্ফোরণ ঘটেনি, তবে জায়গাটি ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল এবং তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়েছিল।

অন্য দিকে, ২০০৭ সালে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিনোট বিমান ঘাঁটিতে, যথাযথ ছাড়পত্র ছাড়াই দুর্ঘটনাক্রমে একটি B-52 বোমারু বিমানে ৬টি পারমাণবিক ওয়ারহেড লোড করা হয়েছিল। কোনও তথ্য ছাড়াই, তারা ১,৫০০ কিলোমিটার দূরে আরেকটি বিমানঘাঁটিতে পৌঁছে যায়। কয়েক ঘণ্টা পরেও কেউ এই ঘটনা সম্পর্কে জানতে পারেনি।

প্রশ্ন: পারমাণবিক অস্ত্র সংরক্ষণ কেন্দ্রগুলি কীভাবে নির্মিত হয়? তাদের নিরাপত্তা কীরকম?

উত্তর: এগুলো অত্যন্ত সুরক্ষিত, শক্ত ভূগর্ভস্থ বাঙ্কার বা বিশেষ অস্ত্র সংরক্ষণের জায়গায় রাখা হয়। তাদের দেয়ালগুলো খুব পুরু, অন্তত চার থেকে পাঁচ মিটার হয়। দরজাগুলো বিস্ফোরণ-প্রতিরোধী। ভূগর্ভস্থ এই সব গুদামের অনেক স্তর রয়েছে। এগুলো সাধারণত মাটির গভীরতম কাঠামোতে স্থাপন করা হয়। নিরাপত্তারও অনেক স্তর রয়েছে। উচ্চ ভোল্টেজের কাঁটাতার স্থাপন করা হয়। মোশন সেন্সর থাকে। জায়গা সিসিটিভি লাগানো থাকে। এগুলো ক্ষুরধার তারের বেড়া দিয়ে সুরক্ষিত এবং তাদের চারপাশে একটি নিরাপত্তা বলয় থাকে। প্রতিটি পারমাণবিক অস্ত্র একটি শক্তিশালী ইস্পাতের আস্তরণযুক্ত স্টোরেজ ভল্টে সংরক্ষণ করা হয়। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়। এখানে প্রবেশ কেবল ইলেকট্রনিক অ্যাক্সেস নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমেই সম্ভব।

Scroll to Top