এশিয়া কাপ ও নেদারল্যান্ডস সিরিজ সামনে রেখে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি নিচ্ছেন জাতীয় দল ক্রিকেটাররা, এরমধ্যেই বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুলের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন মিরাজ-শান্তরা, ছিলেন মেডিকেল বিভাগের চিকিৎসক, কোচিং স্টাফের সদস্যরাও। ক্রিকেটারদের সঙ্গে বোর্ড সভাপতি বিভিন্ন ইস্যুতে কথা বলেছেন, দিয়েছেন নানা দিকনির্দেশনা।
মঙ্গলবার রাজধানীর একটি পাঁচতারকা হোটেলে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শুরু হয় বৈঠক। টানা তিন ঘণ্টার বেশি চলা বৈঠকের পর ক্রিকেটারদের হোটেল ছাড়ার আরও ঘণ্টা দেড়েক পর বিসিবি সভাপতি হাজির হন গণমাধ্যমের সামনে।
বৈঠকে বিসিবি সভাপতি নিজে কিছু প্রেজেন্টেশন দিয়েছেন। মেডিকেল বিভাগ থেকেও কিছু প্রেজেন্টেশন দেয়া হয়েছে, চিকিৎসা সেবা নিয়ে কথা হয়েছে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে উইকেট নিয়ে কথা হয়েছে। সঙ্গে ভেন্যু বাড়ানোর কথাও উঠে এসেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যত কম ব্যবহার করা যায়, যত দূরত্ব রাখা যায় এবিষয়ে সভাপতি পরামর্শ দিয়েছেন ক্রিকেটারদের।
বৈঠক শেষে বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বলেছেন, ‘আমরা দুটি বড় বড় কাজ করেছি। জাতীয় দলের যত খেলোয়াড় আছে লাল বল এবং সাদা বলের, সাপোর্ট স্টাফ এবং যারা কোচ আছেন সবাই একত্রিত হয়েছিলাম। বোর্ডের ডিরেক্টর যারা আছেন তারাও এখানে ছিলেন। সভার নাম ছিল ‘শেয়ার অ্যান্ড কেয়ার’।’

‘আমরা মনে করি, যে দলটা মাঠে খেলে সেটা একটা দল, যারা ডাগআউটে বসে থাকে তারা একটা দল, আর আমরা বোর্ডে বসে কাজ করি আমরা একটা দল। এই তিনটা দলের পারফরম্যান্স কী, সে বিষয়ে তাদের কাছে আটটা প্রশ্ন করেছিলাম। প্রশ্নের উত্তরগুলো আমাদের কাছে ফিরে আসে এবং আমরা ডেটা পর্যবেক্ষণ করেছি। পর্যবেক্ষণের ফলাফল তাদের সঙ্গে শেয়ার করেছি। কীভাবে আমরা উন্নতির জায়গাগুলো নিয়ে কাজ করতে পারি সে বিষয়গুলো এখান থেকে উঠে এসেছে।’
জরিপে যে ৮টি প্রশ্ন ছিল, সেসবের বাইরেও এদিনের সভায় আরও অনেকদিক তুলে ধরেছেন ক্রিকেটাররা, এটি সবচেয়ে বেশি ভালো লাগা এনে দিয়েছে বিসিবি সভাপতিকে।
‘মজার ব্যাপার হল, আমাদের যে এজেন্ডা ছিল, এর বাইরেও ক্রিকেটাররা লাফিয়ে লাফিয়ে এসে মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে কথা বলছিল। মনের কথাগুলো প্রকাশ করছিল। এটিই সবচেয়ে আনন্দের ব্যাপার। মনে হচ্ছিল যে আমরা সবাই একটি টিম এবং দল হিসেবে কাজ করলে যে আমরা কত সামনে এগিয়ে যেতে পারব, তার একটি বড় প্রতিচ্ছবি আমরা আজকে দেখেছি।’
ক্রিকেটারদের উন্নতি ও সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে টেস্টে লাল-সবুজদের প্রথম সেঞ্চুরিয়ান আমিনুল ইসলাম বলেছেন, ‘খেলোয়াড়রা তো মাঠে খেলে, তবে আমরা কতটুকু সাহায্য করতে পারছি এবং এই সাহায্য করার জন্য কতটুকু গ্যাপ আমাদের আছে; ওই গ্যাপটা আবার কীভাবে ও কত সময়ের মধ্যে পূরণ করতে পারব, যাতে খেলোয়াড়রা মাঠে ভালো খেলতে পারে, এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এরজন্য প্রতি তিনমাস পরপর এমন একটি সেশন করব। দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের জন্য কী কী করা যায় এসব নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’

বিসিবি প্রধানের দুই বড় কাজের আরেকটি ছিল অ্যালেক্স মার্শালের সঙ্গে ক্রিকেটারদের সেশন। তিনি বলেছেন, ‘‘আরেকটা সেশন ছিল, জেনে থাকবে যে, আমাদের যে ইন্টেগ্রিটি ইউনিট আছে, আমাদের দেশের ক্রিকেট সুরক্ষার জন্য কী কী করণীয়, সেই লক্ষ্যে, এই কাজটি আমরা সিরিয়াসলি নিয়েছি। আমাদের চার্টারের মধ্যে আছে, ‘ইন্টেগ্রিটি অব দিস গেম।’ এখানে ‘ইন্টেগ্রিটি’ বলতে, কীভাবে আমরা খেলাটিকে সুরক্ষা দেব, এখন ডোপিং একটি বড় ব্যাপার, আমাদের জাতীয় দল শুধু দ্বিপাক্ষিক সিরিজ বা আইসিসি ইভেন্ট খেলছে না, এশিয়ান গেমসে খেলছে, একদিন অলিম্পিকসে খেলবে। অ্যান্টি ডোপিং কতটা গুরুত্বপূর্ণ, নিজেকে সুরক্ষিত রাখা কতটা গুরুত্বপূর্ণ।”
‘সেজন্য অনেক অভিজ্ঞ একজন, আইসিসি সাবেক মহাব্যবস্থাপক অ্যালেক্স মার্শাল এখানে আছেন। তার কাছ থেকে আমরা দিক-নির্দেশনা পেয়েছি, এই বহুল জনপ্রিয় খেলাটাকে আমরা কীভাবে সুরক্ষিত রাখতে পারি। তিনি আমাদেরকে ধারণা দিয়েছে, কীভাবে আমাদের (ইন্টেগ্রিটি) দলটি তৈরি করতে হবে।’
সোমবার অস্ট্রেলিয়া থেকে ফিরেছেন আমিনুল। ব্যক্তিগত সফরে অস্ট্রেলিয়ায় ছিলেন। সেখানে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটিয়েছেন। সেখান থেকে অনলাইনে বিসিবির একটি সভায় যোগ দিয়েছিলেন সভাপতি।
সিলেটে ৩০ আগস্ট প্রথম ম্যাচে ডাচদের মুখোমুখি হবেন জাকের-লিটনরা, ১ ও ৩ সেপ্টেম্বর হবে বাকি দুই ম্যাচ। এর পরপরই এশিয়া কাপে অংশ নিতে দেশ ছাড়বে বাংলাদেশ। আবুধাবি ও দুবাইতে মহাদেশীয় প্রতিযোগিতাটি ৯ সেপ্টেম্বর শুরু হয়ে ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে।