‘গুমের শিকার পরিবারগুলোর আর্থিক ও মানসিক পুনর্বাসন জরুরী’ | চ্যানেল আই অনলাইন

‘গুমের শিকার পরিবারগুলোর আর্থিক ও মানসিক পুনর্বাসন জরুরী’ | চ্যানেল আই অনলাইন

এই খবরটি পডকাস্টে শুনুনঃ

বিগত ১৬ বছরে গুম  হওয়া মানুষের পূর্ণাঙ্গ তালিকা নেই। গুমের শিকার পরিবারগুলো আর্থিকভাবে ভেঙে পড়েছে, তারা মানসিক ট্রমার ভেতর দিন অতিবাহিত করছে। অবিলম্বে ভুক্তভোগী পরিবারের জন্য আর্থিক তহবিল গঠন করতে হবে এবং গুমের শিকার ব্যক্তি ও পরিবারের সদস্যদের মনস্তাত্ত্বিক পুনর্বাসন করতে হবে। 

বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) রাজধানীর বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে গণহত্যা পরবর্তী বাংলাদেশের ট্রুথ অ্যান্ড হিলিং কমিশন গঠন বিষয়ক পরামর্শ সভায় গুমের শিকার ব্যক্তি ও মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন।

ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল অ্যান্ড ডিপ্লোম্যাসি (আইআইএলডি) এবং বাংলাদেশ ২.০ ইনিশিয়েটিভ যৌথভাবে এই কর্মসূচির আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমানের উপদেষ্টা মাহাদী আমিন বলেন, যাদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে আমরা নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি, তাদের ওপর দায়িত্ব রাষ্ট্রীয় কিংবা রাজনৈতিকভাবে আমরা পালন করতে পারিনি। গুমের শিকার পরিবারকে সহায়তা করতে কত টাকার প্রয়োজন? রাজনৈতিক অঙ্গীকার থাকলে প্রত্যেকটা পরিবারের পাশে দাঁড়ানো সম্ভব। এটা রাষ্ট্রের প্রধান দায়িত্ব হওয়া উচিত।

এ সময় মাহাদী আমীন বলেন, আমি যেহেতু বিএনপিকে প্রতিনিধিত্ব করছি, আমাদের দলের শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে সর্বোচ্চ দায়বদ্ধতা রয়েছে। আগামীতে বিএনপি রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে আসলে তারেক রহমান কথা বলেছেন, সর্বোচ্চ আন্তরিকতা দিয়ে ভুক্তভোগীদের পাশে দাঁড়াবেন। এটা আমাদের অন্যতম প্রধান দায়বদ্ধতা।

প্রখ্যাত আলোকচিত্রী শহিদুল আলম বলেন, ভুক্তভোগীরা শারীরিক এবং মানসিকভাবে অত্যাচারিত, এটা বিবেচনায় নিয়ে প্রতিকার করতে হবে। বার বার কি আমরা সেমিনার করব? সেটা যাতে না হয়। বাস্তবতার আলোকে কার্যকর কিছু ব্যবস্থা যাতে গ্রহণ করা যায়, সেটা গুরুত্বপূর্ণ। কেউ যেন রাজনৈতিক ফায়দা নেওয়ার জন্য ভুক্তভোগীদের নিয়ে খেলা না করে, এটা মনে করিয়ে দেওয়া দরকার। সত্যিকার অর্থে একটি ভিন্ন রাজনৈতিক সংস্কৃতি যদি না আসে, তাহলে পরিবর্তনগুলো হবে না।

ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, ভুক্তভোগীদের জন্য যতটুকু প্রয়োজন, আমরা তা করতে পারছি না। অবশ্যই বিচার দরকার, কিন্তু দ্রুত বিচার করতে গিয়ে যেন নতুন করে অবিচার না হয়, সেটা লক্ষ্য রাখতে হবে। ভুক্তভোগীদের আর্থিক সহায়তা শুধু ফ্ল্যাটকেন্দ্রিক না হয়ে প্রয়োজনভিত্তিক এবং এটা বণ্টনের একটি যথাযথ নিয়ম অনুসরণ প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

জাতিসংঘ বাংলাদেশের সিনিয়র মানবাধিকার উপদেষ্টা হুমা খান বলেন, গুমের শিকার ব্যক্তিদের জন্য বিচার ছাড়াও আরও অনেক কিছু করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কমিশন গঠন নিয়ে ঐকমত্য হতে পারে। তারা যে সমস্যার সম্মুখীন, সেগুলো সমাধান হওয়া উচিত। এক্ষেত্রে আমি আমার জায়গা থেকে সহায়তা করতে প্রস্তুত।

অনুষ্ঠানে গুমের শিকার ভুক্তভোগীরা তাদের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন। এর মধ্যে ব্যারিস্টার আরমান বলেন, ভুক্তভোগীরা চাকরি কিংবা ব্যবসা কোনো কিছু করতে পারছে না। অবিলম্বে ভুক্তভোগীদের জন্য একটি তহবিল গঠন করুন। সরকারের ট্যাক্সের টাকার প্রয়োজন হবে না, সারা দুনিয়া এখানে সহায়তা করবে। এ সময় তিনি প্রশ্ন রাখেন, সরকার এই ভুক্তভোগী কয়টা পরিবারকে সহায়তা করতে পারবে না?

আরেক ভুক্তভোগী কর্নেল হাসিনুর বলেন, বাংলাদেশকে জঙ্গি রাষ্ট্র বানানোর জন্য যা কিছু প্রয়োজন, শেখ হাসিনা তা করেছে। গুমের শিকার ব্যক্তিদের জঙ্গি মামলা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। একটি কমিশনের মাধ্যমে এই জঙ্গি নাটকের সমাধান করা উচিত।

এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বক্তব্যে তার ওপর নির্যাতনের কাহিনি তুলে ধরেন। দোষীদের বিচার হওয়ার সাক্ষীদের সাক্ষ্য দেওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে ইউনিভার্সিটি অব রেজিনার সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আসাদুল্লাহ তার বক্তব্যে গণহত্যা পরবর্তী ট্রুথ অ্যান্ড হিলিং কমিশনের ডিকলোনিয়াল লোকাল ফ্রেমওয়ার্কের প্রতি গুরুত্বারোপ করেন।

সেমিনারে গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। গবেষণা প্রতিবেদনে গুম নিয়ে সত্যতা স্বীকার করা, ক্রিমিনাল জাস্টিস সিস্টেমের মাধ্যমে দোষীদের ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতার মুখোমুখি করা, আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদানসহ গুমের শিকার ব্যক্তিবর্গ ও ভুক্তভোগীদের জন্য একগুচ্ছ সুপারিশ উঠে আসে।

সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন আইআইএলডির নির্বাহী পরিচালক শফিউল আলম শাহিন, অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ ২.০ ইনিশিয়েটিভের নির্বাহী পরিচালক শর্মিলা নওশিন রিতু, জাতিসংঘের জুনিয়র কনসালটেন্ট ব্যারিস্টার তাজরিয়ান আকরাম হোসেন।

Scroll to Top