মোটরসাইকেলের হেডলাইট ব্যবহারের পদ্ধতি জেনে নিন

মোটরসাইকেলের হেডলাইট ব্যবহারের পদ্ধতি জেনে নিন

আজকাল শহর বা গ্রামে বাইক চালানো যত সহজ হয়ে গেছে, ততই বেড়েছে বাইকের আলো ব্যবহারে অনিয়ম ও অসচেতনতা। অনেক চালক জানেন না— হেডলাইট বা অক্সিলিয়ারি লাইট কীভাবে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে হয়। কখন কোন আলো জ্বালাতে হয় বা কখন আলো জ্বালানো উচিত না। এতে নিজের যেমন নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়, তেমনি অন্য পথচারী ও চালকরাও বিপদে পড়েন।

মোটরসাইকেলের হেডলাইট ব্যবহারের পদ্ধতি জেনে নিনমোটরসাইকেলের হেডলাইট ব্যবহারের পদ্ধতি জেনে নিন

বাইকের হেডলাইট লাইট ব্যবহারের সঠিক নিয়ম

১. হেডলাইট ও অক্সিলিয়ারি লাইট কী?

হেডলাইট: বাইকের সামনের মূল আলো। যা রাতে বা কম আলোয় রাস্তা দেখতে সাহায্য করে।
অক্সিলিয়ারি লাইট (ফগ লাইনট): অতিরিক্ত আলো, সাধারণত হেডলাইটের নিচে বা পাশে লাগানো হয়। রাতে বা কুয়াশায় ভালো দৃশ্যমানতা পেতে।

২. কোন রঙের আলো বৈধ?

বৈধ আলো: সাদা এবং হলুদ আলো (Headlight & Fog Light)।
ইনডিকেটরের জন্য: হলুদ রঙের আলো অনুমোদিত

অবৈধ আলো: লাল, নীল, সবুজ বা ফ্ল্যাশিং এলইডি লাইট। পুলিশের মতো নীল-লাল মিক্স লাইট। উচ্চ ক্ষমতার স্ট্রোব লাইট।

কারণ এইসব আলো জরুরি যানবাহনের জন্য বরাদ্দ এবং এগুলো সাধারণ বাইকে ব্যবহার করা আইনত অপরাধ। এটি অন্য চালকদের বিভ্রান্ত করে, চোখে ঝলক লাগায় এবং দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে।

৩. আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে:

বাংলাদেশে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট আইন না থাকলেও, দৃষ্টিনন্দন বা বিভ্রান্তিকর আলো ব্যবহার করলেই ট্রাফিক পুলিশ অ্যাকশনে যেতে পারে। জরিমানা, গাড়ি জব্দ, এমনকি মামলা পর্যন্ত হতে পারে।

৪. অক্সিলিয়ারি / ফগ লাইট কখন ব্যবহার করবেন?

শুধুমাত্র রাতের সময়, কুয়াশা বা বৃষ্টির মধ্যে ব্যবহার করতে পারেন। যখন হেডলাইট যথেষ্ট আলো দেয় না। দিনের বেলায় শহরের মধ্যে বা পরিষ্কার আবহাওয়ায় এসব অতিরিক্ত আলো ব্যবহার বেআইনি এবং দৃষ্টিকটু।

৫. হাই বিম ও লো বিম: কীভাবে ব্যবহার করবেন?

লো বিম ব্যবহার করুন: শহরের মধ্যে বা আলো থাকা রাস্তায়। যখন সামনে বা পেছনে কোনো যানবাহন থাকে। অন্যদের চোখে আলো না পড়ে।

হাই বিম ব্যবহার করুন: অন্ধকার রাস্তা, গ্রামের রাস্তা বা হাইওয়েতে। বনের ভিতর, পাহাড়ি এলাকা বা বাঁকে। যখন সামনে কেউ নেই। হঠাৎ কোনো প্রাণী বা বিপদ বুঝিয়ে দিতে চাইলে।

সতর্কতা: সামনে বা পেছনে কেউ থাকলে হাই বিম ব্যবহার করবেন না। এতে অন্য চালক অন্ধের মতো হয়ে যান। হাই বিম অন্যদের জন্য মারাত্মক দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে।

৬. ওভারটেকের সময় কী করবেন?

অনেক চালক ওভারটেক করার সময় হাই বিম অন করে দেন, যা বিপজ্জনক। পরিবর্তে ব্যবহার করুন পাস লাইট (যদি বাইকে থাকে) এবং হর্ন – তবে যতটা সম্ভব সংযতভাবে।

৭. আলোর উচ্চতা ও অ্যাঙ্গেল কীভাবে ঠিক রাখবেন?

লাইটের অ্যাঙ্গেল নিচের দিকে সামান্য কাত করে দিন যাতে সড়ক পরিষ্কার দেখা যায়, কিন্তু অন্যদের চোখে না লাগে। উচ্চতা মেপে লাগান—মাথার সমান্তরালে না হয়ে সামান্য নিচে রাখলে ভালো হয়। বেশি দূরের জন্য নয়, সামনে ১০০–১৫০ ফুট পর্যন্ত পরিষ্কার দেখাই যথেষ্ট।

৮. আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বার্তা

বাইক চালাতে হলে সবার আগে আলো ঠিক করতে হবে। যারা পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, অ্যাম্বুলেন্সের মতো আলো ব্যবহার করেন, তারা অন্যদের বিভ্রান্ত করেন এবং এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

৯. সঠিকভাবে লাইট ব্যবহার করলে যেসব উপকার পাবেন

-নিজেকে এবং অন্যদের দুর্ঘটনা থেকে বাঁচানো যাবে।
-অন্য চালকদের চোখে আলো না পড়ায় নিরাপদ ড্রাইভিং নিশ্চিত হবে।
-পুলিশি হয়রানি, জরিমানা, মামলা থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
-রাতের ভ্রমণ হবে আরামদায়ক।

বাইক চালানো শুধু গতি বা স্টাইলের ব্যাপার নয়, দায়িত্বেরও বিষয়। আলো ব্যবহারে সচেতন হওয়া মানে নিজের ও অন্যদের নিরাপত্তার প্রতি যত্নশীল হওয়া। আপনি যদি সত্যিই একজন সচেতন বাইকার হতে চান, তবে আজ থেকেই এসব নিয়ম মেনে চলুন। সঠিক আলো ব্যবহার করুন, আইন মেনে চলুন, আর নিরাপদে পৌঁছান আপনার গন্তব্যে।

Scroll to Top