ইলিশের যে স্বাদ এখনো আমাকে ভীষণভাবে স্মৃতিকাতর করে

ইলিশের যে স্বাদ এখনো আমাকে ভীষণভাবে স্মৃতিকাতর করে

নিজের খাদ্য অভিজ্ঞতায় ইলিশের একটি স্বাদ এখনো আমাকে ভীষণভাবে স্মৃতিকাতর করে। স্বাধীনতার পর সেবার বাংলাদেশ থেকে স্থলপথে মায়ের সঙ্গে কলকাতায় যাচ্ছিলাম। আমাদের নিবাস ছিল চট্টগ্রামে। সেখান থেকে ট্রেনে চড়ে চাঁদপুর। তখন স্টিমারে গোয়ালন্দ হয়ে পদ্মার ওপর দিয়ে ওপারে গিয়ে কলকাতায় যেতে হতো। চাঁদপুরে স্টেশনে নেমে স্টিমারে ওঠার আগে একটা ভাতের হোটেলে দুপুরের খাবার খেয়ে নিই আমরা। খাবার তালিকায় ছিল ভাত আর ইলিশ মাছের ঝোল। ইলিশের পাতলা জিরার ঝোলের সেই স্বাদ আর হাতে লেগে থাকা মাছের তেলের গন্ধ আমার এখনো ভীষণ মনে পড়ে। অদ্ভুত এক স্বাদ, ইলিশের সেই স্বাদ এখন আমি কদাচিৎ পাই।

আমার কাছে ব্যক্তিগত প্রিয় মাছের তালিকায় সর্বশ্রেষ্ঠ মাছ ইলিশ। ইলিশের একটা নিজস্ব গন্ধ রয়েছে, যার রেশ থেকে যায় দীর্ঘক্ষণ। অন্য কোনো মাছ যদি আপনি বাড়িতে রান্না করেন, তার সুগন্ধ তেমন ছড়ায় না। কিন্তু পদ্মার ইলিশ রান্না করলে সেটার গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে সারা বাড়িতে। কথায়ই তো আছে, ‘ইলিশ ভাজলে গন্ধ ছড়ায়, শর্ষে–ইলিশ মন ভোলায়।’ তাই রান্নার সময়ই লক্ষ রাখতে হবে যে ইলিশের গন্ধ যেন উধাও হয়ে না যায়। আমি যখন ইলিশের কোনো রেসিপি বানাই, বিশেষ লক্ষ রাখি, ইলিশের নিজস্বতা যেন হারিয়ে না যায়। তাই আমার ভীষণ প্রিয় পাতলা জিরা আর কাঁচামরিচের ফোড়নে ইলিশের ঝোল।

অথবা কাঁকরোল বা বেগুন দিয়ে ইলিশের ঝোল, গরম ভাতের সঙ্গে খেতে যা অমৃত। ইলিশ ভাপা, ইলিশ পাতুরি আর জলকচু দিয়ে ইলিশের পাতলা ঝোলের মতো ঐতিহ্যবাহী ইলিশ রান্নায় কোনো পরিবর্তনে আমি আগ্রহী নই। কারণ, ঐতিহ্যবাহী এসব রান্নার পদ ইতিহাস বহন করে। এগুলোর সঙ্গে জড়িয়ে আছে হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া অনেক গল্প, অনেক অজানা তথ্য।

Scroll to Top