জুমবাংলা ডেস্ক : গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, কোনো ব্যক্তির গলায় জুতার মালা পরানোর মতো মব তৈরি করার সংস্কৃতি সমাজে একটি বিপজ্জনক উদাহরণ তৈরি করছে, যা ভবিষ্যতে ‘ফেরত আসবে’—এই বলে তিনি সতর্ক করেছেন।
শুক্রবার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে এক মতবিনিময় সভায় তিনি বলেন, “মব আক্রমণ হচ্ছে, কেউ কেউ এটিকে ‘প্রেশার গ্রুপ’ বলে চালাতে চাইছেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটা একটি সহিংস ও অগণতান্ত্রিক পন্থা। কেউ অন্যায় করলে তার বিচার হোক—এটা সবারই চাওয়া। কিন্তু তাই বলে কারও বাড়িতে হামলা চালানো কি যুক্তিসঙ্গত?”
তিনি অভিযোগ করে বলেন, “সরকার নিজেই কি এসব ঘটনার পেছনে উসকানি দিচ্ছে? কাউকে গ্রেপ্তারের আগে তাকে সামাজিক মাধ্যমে খলনায়ক বানানো হচ্ছে, তারপর নাটকীয়ভাবে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। শেখ হাসিনার সময়েও এই কৌশল দেখা গেছে।”
সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদার বিরুদ্ধে ঘটে যাওয়া ঘটনার প্রসঙ্গে সাকি বলেন, “যে কেউ অপরাধী হলেও তার কিছু মানবাধিকার থাকে। জুতার মালা পরানো, গায়ে হাত তোলা এগুলো কোনোভাবেই মানবিক বা গণতান্ত্রিক আচরণ নয়।”
তিনি আরও বলেন, “এই ধরনের অপসংস্কৃতির একটি উদাহরণ তৈরি হচ্ছে। আর এই উদাহরণ ভবিষ্যতে আবার ফিরে আসবে, অন্যের উপর প্রয়োগ হবে। ফলে গণতান্ত্রিক সমাজে এসব গ্রহণযোগ্য নয়।”
বন্দর নিয়ে ‘অন্ধকারে’
চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়ার পরিকল্পনার সমালোচনা করে জোনায়েদ সাকি বলেন, “চট্টগ্রাম বন্দর হলো দেশের অর্থনীতির হৃৎপিণ্ড। এটি কেবল অর্থনৈতিক নয়, নিরাপত্তা ও কৌশলগত দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। তাই এর ওপর সার্বভৌম কর্তৃত্ব আমাদেরই থাকা উচিত।”
তিনি বলেন, “বন্দরে উন্নয়নের জন্য বিদেশি প্রযুক্তিগত সহায়তা নেওয়া যেতে পারে, তবে সেটা হতে হবে স্বচ্ছ ও জনগণকে জানিয়ে। সরকার কি চায়, কেন চায়, কাকে দিতে চায়, কত বছরের জন্য দিতে চায়—এসব নিয়ে জনগণকে কিছুই জানানো হয়নি।”
তিনি প্রশ্ন তোলেন, “জনগণ যদি কিছুই না জানে, তাহলে কীভাবে বোঝা যাবে যে বন্দরের ওপর আমাদের সার্বভৌমত্ব থাকছে? এই বন্দরে তো দেশের টাকা লগ্নি হয়েছে, সেটাই এখন বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে।”
সাকি বলেন, “হ্যাঁ, বন্দরে মাফিয়াতন্ত্র ও দুর্নীতি রয়েছে। কিন্তু সেটা দূর করার একমাত্র উপায় কি বিদেশি কোম্পানিকে দিয়ে দেওয়া? বিশ্বের কোথাও কি এই পদ্ধতি সফল হয়েছে? এসব নিয়েও ভাবার দরকার আছে।”
তিনি বলেন, “আমাদের অবস্থান স্পষ্ট—যদি প্রযুক্তিগত সহায়তা লাগে, তা বিবেচনায় আনা যেতে পারে। তবে জনগণকে না জানিয়ে, কোনো ব্যাখ্যা না দিয়ে কেবল একচেটিয়াভাবে বিদেশি কোম্পানিকে দায়িত্ব দেওয়া দেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে।”
সবশেষে তিনি বলেন, “বন্দর ইজারা বা ব্যবস্থাপনা নিয়ে যে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে, স্বচ্ছতার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।”