রংপুর, ১৪ জুন – মেয়ের বাড়িতে কুরবানির মাংস দিতে গিয়ে মেয়েকে ঝলসে যেতে দেখলেন অসহায় বাবা রেজাউল করিম। যৌতুক দিতে না পারায় বাসায় নিয়ে ফিরলেন মেয়ে রেজোয়ানার (২২) পোড়া লাশ।
রংপুরের মাহিগঞ্জ এলাকার আরাজিমন খামার সরেয়ারতল এলাকায় যৌতুকের জন্য স্ত্রীর শরীরে এসিড নিক্ষেপের পর আগুন দিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়। পরে প্রথমে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে ঢাকা ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শুক্রবার সকালে মারা যান রেজোয়ানা।
শনিবার (১৪ জুন) দুপুরে এই ঘটনায় অভিযুক্ত স্বামী রেজাউল করিম, ননদ পারভীন বেগম ও ননাস ফকরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বিষয়টি নিশ্চিত করেন মাহিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল কুদ্দুস।
মামলার এজাহার সূত্রে পুলিশ জানায়, ঈদের পরদিন রংপুর নগরীর সরেয়ারতল এলাকার ট্রাকচালক রেজাউল করিম যৌতুকের জন্য তার স্ত্রীর শরীরে আগুন ধরিয়ে দেন। পরে মেয়ের বাবাসহ এলাকাবাসী গৃহবধূ রেজোয়ানাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসাধীন ১৩ জুন ঢাকায় হাসপাতালে মারা যান। মরদেহ বাড়িতে আনার পর রেজোয়ানার বাবা রেজাউল করিম বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন। এজাহারে উল্লেখিত ৫ আসামির মধ্যে ৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানায় পুলিশ।
রেজোয়ানার বাবা রেজাউল করিম বলেন, ‘বিয়ের পর থেকে কয়েক দফায় বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে রেজোয়ানার দ্বারা টাকা চাইতে থাকে ওর শ্বশুরবাড়ির লোকেরা। তিন মাস আগে ট্রাক কেনার জন্য ৬ লাখ টাকা দাবি করে। ঈদের দিন সন্ধ্যাবেলা মেয়ের শ্বশুরবাড়ির জন্য কাঁচা মাংস নিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু মাংস নিয়ে যাওয়ার পরে মেয়ের শ্বশুরবাড়ির লোকেরা সন্তুষ্ট ছিল না। তারা টাকার জন্য বারবার মেয়েকে কথা শোনাতে থাকে।
পরদিন দুপুরে আমার মেয়ে, জামাই ও তার শাশুড়ি একসঙ্গে খেতে বসে। সেখানেও তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে শুনতে পাই, ‘খেতে বসেও আমার কোন শান্তি নাই।’ মেয়েটা না খেয়ে উঠে হাত ধুয়ে ঘরে চলে যায়। পিছনে পিছনে যায় জামাই। এর একটু পরে মেয়ের শাশুড়ি চিৎকার করে নিজে ঘরের মধ্যে না গিয়ে আমাকে যেতে বলে। আমি দরজা ঠেলে দেখি ভিতর থেকে দরজা লাগানো। জামাই তখনও ভিতরে, আর মেয়ে আগুন আগুন বলে চিৎকার করছে। কোনো উপায় না পেয়ে আমি বারান্দার কাছে গিয়ে চিৎকার শুরু করি। তখন মনে হয় দরজা থেকে কেউ মেয়েটাকে ধাক্কা মেরে বারান্দায় ঠেলে দেয়। মেয়ে ততক্ষণে নিস্তেজ হয়ে গেছে। আমরা বারান্দা দিয়ে পানি দেই। এরপর ঘরের দরজা খুলে জামাই পালাতে থাকে। তখন বাড়ির লোকেরা ধরে বলে পালালে দোষ হবে, বরং রেজোয়ানার সঙ্গে গিয়ে চিকিৎসা করলে মানুষ বুঝবে না। সেও আমাদের সঙ্গে প্রথমে রংপুর মেডিকেল কলেজ, তারপর ঢাকায় ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি হাসপাতালে যায়। শুক্রবার সকালে আমার মেয়ের মৃত্যু হয়। মেয়েকে মাংস দিতে গিয়ে মেয়ের পোড়া লাশ নিয়ে বাসায় ফিরলাম।’
রেজোয়ানার পরিবারের সদস্যরা জানান, প্রায় তিন বছর আগে রেজাউল করিমের সঙ্গে বিয়ে হয় রেজোয়ানার। তাদের ঘরে রায়ান ইসলাম নামে ১৩ মাস বয়সী একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। বিয়ের পর থেকে ছয় লাখ টাকা যৌতুকের জন্য চাপ দিতে থাকে স্বামীর পরিবার। মেয়ের সুখের কথা ভেবে তিন লাখ টাকাও দেয়া হয়। বাকি তিন লাখের জন্য পুড়িয়ে মারা হয়েছে রেজোয়ানাকে। অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তারা।
মাহিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল কুদ্দুস বলেন, এই ঘটনায় হত্যা মামলা হয়েছে। আসামিও গ্রেপ্তার হয়েছে তিনজন। বাকীদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
সূত্র: চ্যানেল 24
আইএ/ ১৪ জুন ২০২৫