চাকরি না দিলেও অনুপ্রেরণার খনি সত্যজিৎ! | চ্যানেল আই অনলাইন

চাকরি না দিলেও অনুপ্রেরণার খনি সত্যজিৎ! | চ্যানেল আই অনলাইন

অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, সত্যজিৎ রায় একজন অপরিচিত মানুষকে চাকরির অনুরোধের উত্তরে ভদ্রতা ও বিনয়ের সঙ্গে চিঠি লিখেছিলেন। আর সেই অপরিচিত মানুষটি বর্তমান বলিউডের অন্যতম মেধাবী নির্মাতা সুজয় ঘোষ!

২ মে ছিলো সত্যজিৎ রায়ের জন্মদিন। আর এদিন সত্যজিৎ রায়কে নিয়ে নিজের এক ‘সিক্রেট গল্প’ শোনান সুজয়। নিজের এক্স হেন্ডেলে সুজয় লিখেন,“বিশ্ববিদ্যালয় শেষ হতেই সবার মতোই আমারও কোনো ধারণা ছিল না আমি জীবনে কী করব। শুধু এটুকু জানতাম — আমি গভীরভাবে ভালোবাসি ওনার (সত্যজিৎ রায়) আঁকা ছবি আর বলা গল্প। তাই কম্পিউটার সায়েন্সের ডিগ্রিটা যেন চলে গেল তেল বেচতে — আমি ওনাকে চিঠি লিখলাম। বললাম, আমি যেকোনো কাজ করতে রাজি আছি, যদি উনি আমাকে আঁকতে শেখান। একেবারে এলোমেলো, বোকামো চিঠি।”

সেই চিঠির উত্তরে সত্যজিৎ রায় যে চিঠিটা সুজয়কে পাটিয়েছিলেন, সেটাই সুজয় পোস্ট করেন। আর লিখেন,“একজন বেকার যুবকের এলোমেলো চিঠির উনি উত্তর দিলেন। সময়টা ১৯৮৯। আজও আমি সেই চিঠিটা পড়ে দেখি। এটাই ছিল জীবনে পাওয়া আমার প্রথম প্রত্যাখ্যান চিঠি — আর আজও সেটাই আমার সবচেয়ে প্রিয়, সবচেয়ে মূল্যবান।”

পোস্টে ‘বদলা’ সিনেমার এই নির্মাতা আরো লেখেন,“এই যে উনি নিজের ব্যস্ত সময় থেকে কিছুটা সময় বের করে, ম্যানচেস্টারে বসে থাকা এক অচেনা ‘গাধা’কে টাইপ করে উত্তর দিলেন — এটুকুতেই উনি আমার চোখে এক বিরাট নায়ক হয়ে উঠলেন। আজও উনি রয়ে গেছেন আমার সিনেমার জগতের সবচেয়ে বড় নায়ক, আর গল্প বলার একমাত্র শিক্ষক।”

অনেকে হয়তো জানেন না যে ‘কাহানি’ খ্যাত নির্মাতা সুজয় ঘোষ সত্যজিৎ রায়ের ১৯৭৬ সালের একটি ছোটগল্প অবলম্বন করে একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছিলেন। ওই ছবিটির নাম ‘অনুকূল’। যেখানে মুখ্য চরিত্রে ছিলেন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় ও সৌরভ শুক্লা। গল্পটি এক স্কুল শিক্ষকের (সৌরভ শুক্লা) কিনে আনা রোবট অনুকূল (পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়)কে ঘিরে।

প্রথমে নিখুঁত কাজের মানুষ হিসেবে দেখা গেলেও, রোবটটি ধীরে ধীরে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অর্জন করে একটি সজীব সত্তায় রূপ নেয়। কিন্তু গল্প মোড় নেয় যখন শিক্ষকের এক আত্মীয় আসে যে, রোবটদের ঘৃণা করে। অনুকূল সহজলভ্য হলেও গভীর দার্শনিক প্রশ্ন তোলে – প্রযুক্তি, মানবতা ও নৈতিকতার সীমারেখা নিয়ে।

সত্যজিৎ রায় শুধু ৩৫টিরও বেশি চলচ্চিত্র পরিচালনা করেননি, তিনি ফেলুদা ও প্রফেসর শঙ্কুর মতো অবিস্মরণীয় চরিত্রও সৃষ্টি করেছেন। তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং ফিল্মফেয়ার পুরস্কারসহ বহু আন্তর্জাতিক সম্মান, যেমন কান চলচ্চিত্র উৎসব থেকেও স্বীকৃতি লাভ করেন।

Scroll to Top